সুগার ড্যাডি সমাচার
তৌকির ইসলাম ।। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে অনেক কিছুই চোখে পড়ে। বেশ কিছুদিন আগে দেখবেন বইমেলা থেকে খুব আলোচিত এক কাপলকে মেলায় আগত মানুষজন এক প্রকার বলতে গেলে বের করে দিয়েছে। অনেকে আবার দেখলাম সাক্ষাৎকারে বেশ বিরূপ মন্তব্য করেছেন। ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করে যেটা বুঝলাম, মানুষজন অল্পবয়সী ঐ তরুণীর হাজবেন্ড হিসেবে ঐ ভদ্রলোককে কোনোভাবেই মানতে পারছে না। মানুষ আবার এই ধরণের কাপলদের ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর নামকরণ করেছে সুগার ড্যাডি।
আমি এখন যে দেশে থাকি, সেখানেও এই শব্দের ব্যপক ব্যবহার। কোন মেয়ে তার চেয়ে বয়সে দ্বিগুণ তিন গুণ বড় কোনো পুরুষকে বিয়ে করলেই সবাই ধরে নেয় যে মেয়েটি টাকার জন্য এরকম কাউকে পছন্দ করেছে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি এ রকম? তাই নিয়ে আজকে একটু লিখতে বসলাম।
উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবার এমন একজন পাত্র খোঁজা শুরু করে যে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। সেক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় পাত্রের অনেক নিন্দনীয় ব্যাপারও মেয়ের পরিবার তোয়াক্কা করে না। অনেক পরিবার তার মেয়ের সুখের নিদর্শন হিসেবে বোঝে যে মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি গাড়ি আছে, মেয়ে তার ইচ্ছামত টাকা খরচ করতে পারবে তাহলেই মেয়ে সুখি হবে। এমন কি আমি নিজেই দেখেছি আর্থিক সঙ্গতি আছে বলে অনেক পরিবার মেয়ের চেয়ে ১০-১৫ বছরের বড় এমন কাউকে পাত্র হিসেবে পছন্দ করেছে।
বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে এখনও অনেক দরিদ্র পরিবারে মেয়ের বিয়ে হয় অনেক ধনী বৃদ্ধ লোকের সাথে। পারিবারিক অবস্থান যখন একটি সমাজে এরকম সেখানে আজকে যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের দোষটা কোথায়?
আমরা সকলেই বেড়ে উঠি আমাদের পরিবারের কিছু বেসিক আইডিওলজি নিয়ে। যখন একটা মেয়ে বেড়ে ওঠে এরকম একটা মানসিকতার মধ্যদিয়ে যে টাকা থাকা মানেই সেই মানুষটি বেস্ট পার্টনার, সেই ক্ষেত্রে সমাজে সুগার ড্যাডির সংখ্যা বাড়তে বাধ্য। যদিও আমার সুগার ড্যাডি শব্দটায় আপত্তি আছে কেননা সবাই যে শুধু টাকার জন্যই বয়সে বড় কারো সঙ্গে জীবন গড়ে তা কিন্তু নয়। অনেকে আসলেই হয়তো ভালবেসে ঐ মানুষটাকে বেছে নেয় যেখানে বয়স অর্থ ধর্ম বাধা হিসেবে কাজ করে না। মানুষ কোনো মানুষের কবিতার, কোনো মানুষের ছবি আঁকার, কোনো মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে । কেউ কেউ হয়তো অর্থ অথবা খ্যাতি দেখেই কোনো মানুষকে পছন্দ করে। তা কি খুব দোষনীয়! আমরা ছেলেরাও তো নিজেদের সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেই। কিংবা প্রাধান্য দেই ধনীর কোনো আদরের মেয়েকে। তখন তো ব্যাপারটায় এই সুগার ড্যাডি অথবা মাম্মি কনসেপ্ট আসে না। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে যদি তার আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এমন কোনো মানুষকে পছন্দ করে তাতে দোষই বা কোথায়! আর যদি এটা দোষের হয় তাহলে তো এর দায়ভার কম বেশি এই সমাজের উপরও বর্তায়। কেননা সমাজ এবং পরিবার মেয়েদেরকে আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে দেয় না প্রথমত, কিন্তু তার মাথায় এটা ঠিকই বুঝিয়ে দেয় যে তোমার দরকার সবচেয়ে বেশি আর্থিক নিরাপত্তা। এই সমাজ একজন যৌনকর্মীকে অপরাধী বানায় যে সে তার শরীর নিয়ে ব্যবসা করে। কিন্তু তথাকথিত ভদ্র সমাজ তো পাত্রপক্ষের সামনে মেয়েকে কিভাবে সুন্দর দেখাবে তার আয়োজনে কোনো কমতি রাখে না। তাহলে এখানে পরিবার কি অপরাধী নয়!
আমি বয়সে বড় ছোটতে কোনো দোষ দেখি না যদি ব্যাপারটায় উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে। যে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে কোনো একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে। তা হতে পারে অর্থ, হতে পারে সৌন্দর্য, হতে পারে শুধুই মানুষটাকে কেন্দ্র করে।
৮০ বছর বয়সী আল পাচিনোর ২৯ বছর বয়সী গার্লফ্রেন্ড যখন সন্তান সম্ভবা তখন আমরা আল পাচিনোকে বাহবা দেই এবং তার গার্ল ফ্রেন্ডকে মনে করি লাকি। তখন আমরা সুগার ড্যাডি কনসেপ্ট ভুলে যাই। খ্যাতি আর অর্থের কাছে সমাজে বিচারের মানদণ্ড চিরকাল ভিন্ন।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]