যৌনতা নিয়ে নারীর যত ভুল ধারণা!
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। যৌনতা নিয়ে লোকে আগের চেয়ে অনেক বেশি খোলামেলা কথা বললেও তা যথেষ্ট নয়। এখনো সমাজের গভীরে যৌনতা নিয়ে নানা ভুল ধারণা রয়েছে যা দূর করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ নারীই যৌনতা নিয়ে সাধারণত দশটি ভুল ধারণা নিজের ভেতরে ধারণ করেন। চলুন, সেইগুলো সম্পর্কে জেনে নেই এবং নিজেদের মুক্ত করি ভুল চিন্তা ও শিক্ষা থেকে।
১. নিজের চেয়েও সঙ্গীর সুখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ
বেশিরভাগ নারী জন্মাবধি অন্যের সুখ সুবিধাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শেখে। এমনকি যৌনতার ক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গীর চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শেখানো হয়। এ কারণেই নারীর যৌন সুখের বিষয়টি অনুচ্চারিত থেকে যায়।
২. পুরুষ নিজ থেকে বুঝে নেবে নারীর সুখের বিষয়টি
নারীর ধারণা, তার তৃপ্তি অতৃপ্তির বিষয়টি পুরুষ নিজেই বুঝে নেবে। তার মুখ ফুটে বলা ঠিক হবে না। অথচ আপনার কীসে সুখ সেটা স্পষ্ট করে পুরুষ সঙ্গীকে বোঝাতে হবে। নাহলে আপনার যৌন অভিজ্ঞতা সুখকর হবে না।
৩. যৌন সক্ষমতার জন্য নিখুঁত শরীর চাই
আপনার যৌন জীবনে কতটুকু সুখী হবেন বা কেমন অনুভব করবেন তার সঙ্গে শরীরিক অবয়বের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ সমাজে নির্দিষ্ট শারীরিক অবয়বের নারীদের যৌনাবেদনময়ী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভুল ধারণা থেকে নারীদের বের হতে হবে।
৪. ব্যথাযুক্ত ইন্টারকোর্স স্বাভাবিক
নারীরা সহজে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন না। কিন্তু অনেকেই ইন্টারকোর্সের সময় ব্যথা অনুভব করেন। অথচ তারা ভাবেন, এটাই স্বাভাবিক।
যোনিপথে ব্যথার পেছনে নানারকম শারীরিক ও মানসিক কারণ থাকতে পারে। তাই কোন নারী যদি ঘনিষ্ঠতার সময় ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে একজন স্ত্রীরোগ বা যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।
৫. চাহিদা প্রকাশ করা যাবে না
সমাজ ও পরিবার মেয়েদের সবসময় যৌনতা নিয়ে কথা বলতে মানা করে। ছোট থেকেই শেখানো হয়, নারীরা যেন তাদের যৌন চাহিদার কথা মুখ ফুটে উচ্চারণ না করে। এটি একটি মারাত্মক ভুল শিক্ষা ও ধারণা।
৬. যে যার মত ‘সম্মতি’র মানে করে নেবে
আপনি কাউকে যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতি দিতে বাধ্য নন। আবার একবার সম্মতি দিয়েছেন মানেই সঙ্গী আপনার সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। যে সঙ্গী আপনার ইচ্ছা, শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতাকে শ্রদ্ধা করে না, তার সঙ্গে শুধুই যৌনতার জন্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন না।
৭. যৌনতার ‘সঠিক’ পদ্ধতি বিদ্যমান
যৌন সম্পর্কের বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও সমাজ মেয়েদের সীমাবদ্ধ কিছু পদ্ধতিকেই সঠিক বলে শেখায়। মনে রাখতে হবে ভিন্নধর্মী চাহিদা থাকা অস্বাভাবিক না।
৮. যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুভবের উপায় এবং ফ্রিকোয়েন্সির একটি “সাধারণ” সীমা রয়েছে
লিঙ্গ নির্বিশেষে যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুভব করার কোনও ‘স্বাভাবিক’ উপায় নেই। আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যৌন ইচ্ছা অনুভব করলে বা আপনার আকাঙ্ক্ষা সংবেদনশীল হলে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। এই ইচ্ছা একজনের জীবনযাপন, স্বাস্থ্য, মানসিক চাপ, বয়স, সম্পর্ক এবং আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর ক’রে ওঠানামা করে।
৯. আপনার ভেতর যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব সঙ্গীর
অনেকেই আছেন যারা সঙ্গীর সঙ্গে সবদিক থেকে সুখি হলেও তাদের প্রতি শারীরিক কামনা অনুভব করেন না। এবং পুরো দায়িত্ব সঙ্গীর উপর ছেড়ে দেন। বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। নিজেদের মধ্যে কথা বলে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ মত সমাধান আনতে চেষ্টা করুন।
১০. নারীর অর্গ্যাজম শুধুমাত্র পেনিট্রেশনের মাধ্যমে হয়
এটি একদমই ভুল ধারণা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মূলধারার চলচ্চিত্র, মিডিয়া থেকে শুরু করে পর্ণগ্রাফিতে বিষয়টির ব্যপক প্রচারণার কারণে এমন ভুল ধারণা গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ২০ শতাংশ নারী এভাবে অর্গাজম লাভ করেন। অর্গাজমের জন্য অধিকাংশ নারীর ক্লিটোরাল স্টিমিউলেশন প্রয়োজন হয়।