September 20, 2024
নারী'র খবরবিদেশফিচার ২

লকডাউনে বাড়ছে নারী নির্যাতন, সহিংস হয়ে উঠছে পুরুষ

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। করোনায় বিপর্যস্ত দেশ  ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের পরিস্থিতি এমনটাই  বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগের পরিমান বেড়ে গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার কাস্টনার জানান, তার দেশে ‘লকডাউন’ বা ‘স্টে অ্যাট হোম’ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর এই ক’দিনে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে অন্তত ৩০ শতাংশ। দেশটির রাজধানী প্যারিসে এ হার আরও বেশি। শহরটিতে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহর থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও। এ পর্যন্ত ১৯৯টি দেশে এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আর এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে দেশে লকডাউন অর্থাৎ দৈনন্দিন সব কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, অফিস, দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় বাড়িতে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। আর  তাতেই এ সময় বেড়ে গেছে পারিবারিক সহিংসতা প্রধানত—যৌন নির্যাতনের ঘটনাও। যার প্রধাণ ভুক্তভোগী নারী।

ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১৭ মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকর হয়। এ পরিস্থিতি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে সেদেশের সরকার। লকডাউন পরিস্থিতে পরিবারের নির্যাতনকারী সদস্যের সঙ্গে বেশি সময় একই বাড়িতে থাকতে হচ্ছে নারীদের। আর এ সময়টাতে নারী প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজন অর্থাৎ কারু সঙ্গে খুব একটা মিশতে পারছেন না। ফলে যেসব পরিবারে নির্যাতনকারী সদস্য রয়েছেন সেসব পরিবারের ভুক্তভোগীরা অনেকটা বন্দী হয়ে গেছেন।  আর এ সময়টাই নির্যাতনকারী পারিবারিক সদস্যও চড়াও হওয়ার বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সেই সবচেয়ে বেশি নারী পরিবারে সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। দেশটিতে প্রতিবছর দুই লাখ ১৯ হাজার নারী শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ফ্রান্সে প্রতি তিন দিনে একজন নারী তার সাবেক বা বর্তমান সঙ্গীর হাতে নিহত হন। ইউরোনিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে সম্প্রতি নিউইয়র্কভিত্তিক বিশ্বখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে উঠে এসেছে এমনই আরও তথ্য।

টাইমস ম্যাগাজিনের ওই নিবন্ধে জানা যায়, এ চিত্র শুধু ফ্রান্সেই নয়—যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিও এমন। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডমোস্টিক ভায়োলেন্স হটলাইনে সম্প্রতি কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব ফোনকলের মাধ্যমে  সেদেশে কোভিড-১৯ এর অজুহাতে নারীদের আরো নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ন্যাশনাল ডমোস্টিক ভায়োলেন্স হটলাইনের সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের কারণে নারী বাইরের লোকদের থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। এতে নিগ্রহকারী স্বামী বা প্রেমিক আরও বেশি নির্যাতনের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কেটি রে জোনস টাইমসকে জানান, আমরা এমনও কিছু অভিযোগ পেয়েছি— পুরুষ সঙ্গীর কথা মত না চললে কেউ কেউ আর্থিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা না করারও হুমকি দিচ্ছেন। এমন ফোনকল প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে।

জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উওম্যানের উপ নির্বাহী পরিচালক আনিতা ভাটিয়া এসব বিষয়ে টাইমস ম্যাগাজিনকে বলেন, মানুষকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে যে পদ্ধতিতে আমরা কাজ করছি তা আবার অন্যদিকে নারী নিগ্রহের মত ঘটনাও বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়েছে। লকডাউন বা সেলফ আইসোলেশনের এমন সময় নারীদেরকে তাদের সেই পারিবারিক সদস্যের সঙ্গে আরও বেশি সময় একা কাটাতে হচ্ছে যে কিনা মূলত একজন নারী নির্যাতনকারী। এসব নির্যাতনকারীরা এই সময়টাতে আরও বেশি সহিংস হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন।

উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি তিনজনের একজন নারী জীবনের কোন না কোন সময় নিকট আত্মীয়ের দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তবে সংকটকালীন যেমন—যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারিতে যৌন সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। যেমন সম্প্রতি এক্সিওস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনে দেশটির স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পারিবারিক সহিংসতার সংখ্যা গত বছরে একই মাসের তুলনায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনের বেশিরভাগে অঞ্চলই লকডাউন ছিল।