পৃথিবী শান্ত হয়েছে, আমাদেরও শান্ত হতে হবে
আবু তালহা।। দীর্ঘশ্বাসে বেরিয়ে আসে— জীবনের দায় দেয় না অবসর। ভাবনাগুলো খাতওয়ারি, বাসা ভাড়া; মুদি দোকানে বাকি; গৃহকর্মীর বেতন; ছেলে-মেয়ের স্কুলের বেতন আরও অনেক। এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই। সাধারণের হাতে নেই। কোভিড-১৯ জীবন সীমিত করেছে, তবে ভাবনাগুলো বর্তমান। আজও পৃথিবীতে একমাত্র সত্য ক্ষুধা।
সত্যের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে ক্রমানুযায়ী সাজালে সম্পর্ক ধারণা করি ক্ষুধার চেয়ে বেশি দূরে যাবে না। ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘ঈশ্বর সব সময় ক্ষমা করে দেন। আমরা মাঝে মাঝে ক্ষমা করি। প্রকৃতি কখনো ক্ষমা করে না।’
কয়েকটি সম্পর্কের খবর দেখে নেওয়া যাক। ১.মানুষ কোথাও লকডাউন, কোথাও হোম কোয়ারেনটিন। পর্যটকশূন্য সৈকতে সাগরলতা ফিরে এসেছে। ২. বহুদিন পরে সৈকত ঘেঁষে ডলফিন দেখা যাচ্ছে। ৩. ভারতের সৈকতে ফিরেছে শত কচ্ছপ। ৪. পৃথিবীজুড়ে বাতাসে দূষণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। ৬. আজানে পরিবর্তন এসেছেন, প্রার্থনা করার সময়-সুযোগ বেড়েছে। ৭. ‘ব্রহ্মা সত্য, জগৎ মিথ্যা’ উচ্চারণ করে যদি সকালে চোখ মেলা যায়, তাহলে দেখা যাবে পারিবারিক সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে। গণমাধ্যমে এসেছে, চীন ও ইউরোপের দেশে দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতার নিন্দা বেড়ে গেছে। ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে আমরা একে অন্যের কুশল জানছি। যাদের ঘরে ছোট বাচ্চা আছে, তারা সন্তানদের সময় দিচ্ছেন। তাতে অবশ্য নিজেরও সময় কেটে যাচ্ছে।
কী অদ্ভুত! তাই না? একটি শিশু জন্মায়, তারপর বর্ণমালা চেনে না, কারক-সন্ধি-সমাস জানে না কিন্তু বলতে শিখে যায়— মা। কিংবা বাবা। আরেকটু বড় হলে যা শোনে তাই বলে। ‘আমি ভাত খাব’ শুনে শিশুটিও বলে আমি ভাত খাব। এক সময় আর বলে না। তখন, ‘আমি ভাত খাব’ শুনলে সে বলে ‘ঠিক আছে, আমি এনে দিচ্ছি’।
ধারণা করি, আর অন্য কোনোভাবে মানুষকে কিছু শেখানো যায় না। মানুষ যা শোনে, যা দেখে, সেটাই শেখে। প্রবাদ আছে, একটি দেশে তেমন শিল্পী গড়ে ওঠে, সেই দেশের শ্রোতা যেমন। আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখে, তাদের কথা শুনে, তাদের আচরণ দেখে একটি শিশু তেমন হয়ে যায়। ব্যতিক্রম যে হয় না তেমন নয়। সন্তানকে যেমন দেখতে চাই, তেমন থাকলে বা হয়ে গেলে আর শাসন-সমালোচনার দরকার পড়বে না। সন্তান আপনিই তেমন হয়ে বেড়ে উঠবে। জমির আল যেমন বেঁধে দিতে হয়, তেমন একটু নজরে রাখলেই চলে।
ফেসবুকে একজনের স্ট্যাটাস পড়লাম। লিখেছেন, ‘কী লাজুক মেয়ে ছিলাম। ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠানে খুন-খারাবি দেখে দেখে হীরার মতো কঠিন হয়ে গেছি।’
মনে করি, যারা বিশেষত নারীর অধিকার, পরিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক, দাম্পত্য বিবাদ ও সহিংসতার বিষয়ে সচেতন এবং পরিবর্তন চান, তারা এই লেখার পাঠক। নারী, যিনি কখনো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। যার ছোটবেলায় বিষন্ন স্মৃতি আছে, কিন্তু সেই স্মৃতিকে পাত্তা না দিতে শিখে ফেলেছেন এবং ‘স্বাভাবিক’ জীবন যাপন করছেন, তারা মানসিকতা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে আলাদা করে বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না। যে কোনো সচেতন পুরুষ চাইলেই বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করি।
এই কথাগুলো বহু পুরাতন ও জানা। তারপরও কেন (কাঙ্ক্ষিত হারে) পরিবর্তন আসছে না? সে আলাপ বাকি রইলো। এখানে একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। কেউ আলোচনা এগিয়ে নিতে চাইলে তাকে স্বাগতম।
আবু তালহা: সাংবাদিক