পিঠ
সায়মা আরজু।।
আজকাল সময় বাঁচাতে শাড়ি পরা তেমন হয়না। সারাদিন কম ছুটাছুটি ও নয় তবে যে কোনো দাওয়াত বা ফর্মাল অনুষ্ঠানে শাড়ি পরি। অনেকদিন পর সেদিন যুঁথির সাথে দেখা। যুঁথি আর আমি একসময় একটা স্কুলে পড়াতাম।সেই থেকে জানাশোনা। যুঁথিই উঠালো কথাটা। স্কুলে তোমার পিঠ দেখে তাকিয়ে থাকতাম, ডিপ গোল গলার ব্লাউজ পরতে।
একটু লজ্জা পেলাম, কেন জানিনা। তবে লজ্জার চেয়ে বিষাদে মনটা ঢেকে গেল মনে হয় বেশি। ডিপ গলা! ঐ তো সাত ইঞ্চির বেশি খুব কম পড়েছি। তা নিয়েও বাসায় কম ঝামেলা হয় নাই ঘরের লোকের সাথে। তারপরেও সকালে বের হতে যাব, প্রায়ই ব্লাউজ খুঁজে পেতাম না। অনেক পরে অবশ্য দু’একটা পেয়েছি। পেয়েছি মানে আবিষ্কার করেছি। কারন সেগুলো লুকিয়ে রাখা হত যাতে আমার শাড়ি পরা না হয় অথবা অফিস যাবার আগে আমার মনটা খিচরে থাকে। আর এ কাজটা পরম আগ্রহ নিয়ে আমার স্বামীই করতেন।
হঠাৎই মনে পড়ল বিয়ের রাতের কথা। আমার বর আমার পিঠে হাত রেখেই জিজ্ঞেস করেছিল যে আমার পিঠ এত স্মুথ কেন! অবাক হয়ে সেদিন শুধু উত্তর করেছিলাম পিঠ তো স্মুথই হয়! কিন্তু আজ সন্দেহ গজগজ করছে মনের ভিতর। তার কি অন্য কোনও অভিজ্ঞতা আছে যার পিঠ স্মুথ না! বুকের ভিতর কেমন দ্রিম দ্রিম ঘা বাজতে লাগলো।
যুঁথির কথাতেই আবার বর্তমানে ফিরে এলাম। যুঁথি বলল, জানো মানতাসা আপা হসপিটালে?
জিজ্ঞেস করলাম, কেন কী হয়েছে?
যুঁথি যা বলল তাতে আমি রীতিমত ভিরমি খাবার জোগাড়। মানতাসা আপার বিয়ে হয়েছে প্রায় দশ বছর। থাকেন পুরান ঢাকায়। এতদিন বেবি হচ্ছিল না। সেই নিয়ে ডাক্তারবাড়ি দৌড়াদৌড়িও কম যায়নি। মাস দুয়েক আগে একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। আমিও গেছিলাম দেখতে। যুঁথি যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল খুব। এদিকে বাচ্চার কাপড়ও জমে গেছে অনেক। তাই নাকি সে গ্যাসের চুলায় বাচ্চার কাপড় শুকানোর চেষ্টা করছিল। চুলা জ্বালিয়ে দিয়ে উল্টো হয়ে যেই দড়িতে কাপড় নাড়ছে অমনি তার গায়ের ওড়নায় আগুন ধরে গেছে।
ওনার ছোটভাই ছিলো বাসায়। চিৎকার শুনে কাঁথা না কম্বল এনে জড়িয়ে দিতে দিতে তার পিঠটা পুড়ে শেষ। তার পর থেকে হসপিটালে ছটফট করছে সে।
এদিকে তার স্বামীর এখন নতুন চেহারা বেরিয়েছে। সে নাকি মানতাসা আপার বাবাকে বলেছে, তার ঐ পোড়া পিঠ দেখে ভয় করে। মেয়েকে তার কাছে পাঠাতে হলে যেন প্লাস্টিক সার্জারি করে তারপরে পাঠায়। তবে এ চিকিৎসার খরচ সে দিতে পারবে না।
সব শুনে কেমন ব্যাথা ব্যাথা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হল বুকের খুব গভীর থেকে।
চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে কি মনে করে যুঁথিকে জিজ্ঞেস করলাম, কি রে বিয়ে করছিস না কেন?
যুঁথি সবসময় হাই কলারের জামা পরে। আগেও খেয়াল করি নাই যে তা নয়। আমার প্রশ্নের উত্তরে একটু ম্লান হাসলো যুঁথি। কামিজের একটা বোতাম খুলে বলল, দেখ।
আমি এই প্রথম এসিডে ঝলসানো একটা পিঠের তীব্র রূপ দেখলাম। ওর হাতটা চেপে ধরলাম অজান্তেই।
যুঁথি বলল, এর পরে আর সাহস হয় না।
আমি যুঁথির পিঠের রহস্যময় আখ্যান শোনার আর সাহস করলাম না। শুধু মনে হতে লাগল গল্পগুলো সব এ রকমই হয়!