November 2, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

জিন্স vs সালোয়ার

জান্নাতুল তাসনিম।। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যতদূর মনে পরে, আমার বাবা মা বিশেষ করে আমার ছোট চাচা ফুপি আমাকে জিন্স পরাতেন। বাবার সাথে বাইরে গেলে অনেকেই বলত আপনার না মেয়ে? বাবা হেসে বলতেন, হ্যাঁ এইটা আমার মেয়ে। এভাবেইপার করলাম ছোটবেলা ।

এরপর সাবালিকা বয়সে এসে দেখলাম এ সমাজে মেয়েদের  জিন্সের অপর নাম এক প্রকার অসভ্যতা। তারপর একটা সময় জীবনে আসলো একটি প্রেম, যথারীতি প্রেমিকের মন রক্ষার্থে প্রিয় জিন্স বাদ দিয়ে সালোয়ার পরতে শুরু করলাম! এরপর হঠাৎ একদিন  বাইরে গেলে এক্সিডেন্টলি রিক্সা থেকে পরে সাইড থেকে আমার  সালোয়ার ছিঁড়ে গেল। আর তাতে আমার খুব ‘সম্মান বাড়লো’। আহা! মেয়েটা  কি সুন্দর পোশাকে বাইরে আইছে সাথে পায়ের অংশও দেখে ফেলল!

একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় দেখি এক আপা ভ্যান  থেকে নামতে যেয়ে তার ইলাস্টিক দেয়া পাজামা টান লেগে বেশ নিচে নেমে গেছে। এবার আবার ফিতা না দিয়ে ইলাস্টিক সিস্টেমের দোষ দিতে দেখেছি আশেপাশের কিছু ‘ভদ্রমহিলা’দের।

আরেকটি অভিজ্ঞতা বলি। রিক্সায় করে অফিস যাচ্ছিলাম। হঠাৎ টের পেলাম পায়ের পাতাসহ উরুতেও দারুণ বাতাস লাগছে। জ্বী পালাজ্জো সালোয়ার প্রায় হাফপ্যান্টের ফিল দিচ্ছে। তো তাতেও ব্যাপার না। জিন্স তো আর পরিনি! এসব যখন অসহ্য লাগতে শুরু করলো ঠিক তখনই  প্রেমিকের সাথে সাথে সালোয়ারও চলে যেয়ে জীবনে আবার জায়গা করে নিলো সেই প্রিয়  জিন্স। এবার তো আরেক কান্ড জিন্স পরুয়া মেয়ে হয়ে রান্না পারি, এটা বলে কিছু আন্টির ছানাবড়া চোখ দেখতে শুরু করলাম। পাড়ার আন্টিদের আড়চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখলাম।বর্তমানে তো  “এই মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে হবেনা’’ এও শুনে যাচ্ছি। এসব শুনেও অবশ্য সামাজিক কাজগুলোও এখনো  জিন্স পরেই করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করব।

এক সময়ে সঙ্গবেধে কাজ করতাম রিনি আপুর সাথে। আমার জীবনের অনেক সুন্দর সুন্দর ইন্সপিরেশনগুলো তার কাছ থেকে পাওয়া। একটা সময়ে তারও বিয়ে হয়ে যায় আর সে চলে যায় তার স্বামীর বাড়ি। এর বেশ কিছুদিন পর আমার সাথে দেখা হলে আমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে তার পুরোনো প্রিয় জিন্সগুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল, “খুব পছন্দের। তোকেই এখন ভালো মানাবে”।

আমি আর কিছুই বলতে পারিনি। শুধু ছলছল দুটো চোখ দেখে নীরবে চলে এসেছিলাম।