November 21, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

যে ষড়যন্ত্র নারীর বিরুদ্ধে!

অনামিকা সরকার।। আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করছি যেখানে সবকিছু আমাদের বিপরীতে। প্রতি মুহূর্তে একটা ক্রাইম  একটা ষড়যন্ত্র চলছে আমাদের সাথে। বেশিরভাগ নারী সে ষড়যন্ত্রের কথা কিছু জানেই না, কেউ কেউ জেনেও না জানার ভান করে, আর কেউ কেউ সোচ্চার হচ্ছেন, পরিবর্তনের জন্য লড়ছেন দিনের পর দিন। আমাদের পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি সবকিছু এমনভাবে সাজানো যে কোথাও মেয়েদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি, একথা নতুন করে বলার কিছু নেই।

একটা মেয়ে তার প্রাক্তনের কথা, কোনো সম্পর্কের কথা বা ভালোলাগার কথা নিঃসঙ্কোচে স্বামীর সঙ্গে  শেয়ার করতে পারে না। আমি দেখেছি বিয়ে ঠিক হলে মেয়েরা তাদের ফেসবুক আইডি, ফোন নম্বর চেঞ্জ করে ফেলে। তাকে অনেক অনেক পরামর্শ মেনে নিতে হয়, একটা পরামর্শ খুব উল্লেখযোগ্য- “এখন বাপের বাড়ি কিছু না, স্বামীর বাড়িই সব”।

এই যে একটা বাজে কথা এর কোনো মানেই হয় না।  স্বামীর বাড়ি আর বাপের বাড়ি যাই হোক সম্পত্তির কত অংশ মেয়েদের নামে লেখা থাকে? মুখে মুখেই সব! স্বামীর বাড়িই সব! তারপর আমি যতটুকু দেখেছি অধিকাংশ নারীকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় এক বা একাধিকবার একথা শুনতেই হয় “আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও/যা”। এরপর যেসব স্বামীরা নিজেদের আধুনিক এবং শিক্ষিত বলে দাবি করেন তারা মাঝে মধ্যে “সরি” বলে থাকেন হয়ত। কোনো কোনো স্বামী আবার ভালোবাসার দাবি তোলেন, যেহেতু ভালো বাসেন  তাহলে এরকম দু চার কথা বলার, দু চারটা কিল থাপ্পড় দেবার অধিকারও নিশ্চয়ই রাখেন।

স্বামীরা তাদের প্রেমিকাদের ছবি, চিঠি, প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি ঘরে রেখে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না, ভাবতে হয় না। সেটা ভবিষ্যতে যার হাতেই পড়ুক, একটা গর্বের একটা পৌরুষের  ব্যাপারে পরিণত হয়। সংসারের সবাই জানে, স্ত্রীরাও জানে সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে  সেসব নিয়ে ক্যাঁচাল পাকানো যাবে না।

লাভ ম্যারেজের পরেও এক স্বামী অন্য দুজন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছিল,  স্ত্রী জেনে যায়, রাগ করে, কান্না করে, ঘটনাক্রমে কয়েক মাস পর স্ত্রী আত্মহত্যা করে, স্ত্রী একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করে মোটেও ঠিক করেন নি , একথা আমার পক্ষে বলা সহজ, তবে উনি নিশ্চয়ই বেঁচে থাকতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বামী তার স্ত্রীকেই দোষারোপ করে মৃত্যুর জন্য, নির্দ্বিধায় বলে যে সে মহিলা রাগী ছিল, অস্থির প্রকৃতির ছিল, স্বামী কি সেটা বুঝতে পারেনি, ইত্যাদি ইত্যাদি।

 এই যে দোষারোপ করার ধৃষ্টতা এরা পায় কোত্থেকে! মেয়েদের নিয়ে সবসময় বেশ একটা মজা করা যায়!

টিভি খুললেই – ধর্ষণ, গলা কেটে হত্যা।

ফেয়ার এন্ড লাভলী , ত্বকের গ্লো, চুলের শাইনি ভাব, চেহারার জেল্লা!

একটা সিনেমা দেখব- সেই নায়ক! বাপ্রে বাপ কি তার পাওয়ার, গাড়ি উল্টে ফেলছে, উড়ে চলে যাচ্ছে, একা দশ বিশ জনকে ধূলিসাৎ করে ফেলছে! আর নায়িকা! হোঁচট খাচ্ছে, বাঁচাও বাঁচাও বলে শুধু চিৎকার  করছে! কি আশ্চর্য, তাই না?

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]