সম্পর্ক
আঞ্জুমান রোজী।।
সম্পর্কটা গড়াবে গড়াবে করছে। কথা বলতে ভালোই লাগছিল। কথার পিঠে কথা বলার চমৎকার কৌশল জানে শোভন। আকর্ষণটাও থাকে টানটান। কথার বিষয় বৈচিত্রে চৌকস পাণ্ডিত্য আছে তার।
এভাবে বেশ ক’দিন চলতে চলতে পলাকে প্রস্তাব দিয়েই বসলো।
– আমরা কি একসঙ্গে পথ চলতে পারি না?
কণ্ঠ যতদূর পারা যায় খাদে নিয়ে কাঁপা সুরে কথাটা বললো শোভন।
আচমকা প্রস্তাবটা পেয়ে কোনোরকম চিন্তা না করেই তড়িৎগতিতে পলা জিজ্ঞেস করলো, আপনি এ পর্যন্ত কত মেয়ের সঙ্গে সেক্স করেছেন? সংখ্যা বলতে পারবেন? নাকি অগণিত!
এমন প্রশ্ন শুনে বিব্রতবোধ করতে লাগলো শোভন। হাতের কাছে কফিকাপটা নাড়াচাড়া করছিলো। পলাও উত্তর শোনার জন্য পলকহীন তাকিয়ে আছে। শোভন আরো নরম কণ্ঠে বললো, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না আমাকে?
– বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা নয়। সত্য জানতে চাচ্ছি।
– সত্য জেনে কী করবেন?
– বোঝার চেষ্টা করবো, আপনি মনের কাঙ্গাল নাকি শরীরের কাঙ্গাল!
– যদি বলি দুটোরই কাঙ্গাল!
বলেই শোভন উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পলার দিকে। ঝুঁকে বসা অবস্থা থেকে পলা সোজা হয়ে বসলো। বললো, সেক্ষেত্রে কোন অংশে কাঙ্গলিপনা বেশি সেটা বুঝতে হবে।
– সেটা না হয় পরখ করে দেখে নিতে পারেন!
বলেই শোভনের চোখ চলে গেলো পলার বুকের দিকে। যেখানে ক্লিভেজটা দেখা যাচ্ছে। দৃষ্টিটা স্থির আছে দেখে পলা একটু নড়েচড়ে বসলো। কফির কাপে চুমুক দিয়ে চুপ করে বসে থাকলো।
শোভন আবার বলতে শুরু করলো, সম্পর্ক হয়েছিল বেশ কয়টা।
– তারপর?
– তারপর আর কি? টেকেনি।
– একবারও কি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছেন কেন সম্পর্ক টেকেনি?
– মানসিকতায় মেলেনি তাই হয়নি।
– আমার সঙ্গে মিলবে বলে মনে করছেন?
– এখন পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে।
– আমি কিন্তু এখনই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমাদের সম্পর্ক টিকবে না।
– কেন এমন মনে হচ্ছে?
– কারণ, আপনি নিত্য নতুন সম্পর্কে বিশ্বাসী। আর আমি সম্পর্কটা দাঁড় করিয়ে রাখি বিশ্বাসের উপর।
– বিশ্বাস তো আপেক্ষিক!
– বেসিক বিশ্বাস বলে একটা কথা আছে। যে বিশ্বাসে কখনো চির ধরে না।
– আমাকে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
– হৃদয়, শরীর কি কাদামাটির দলা যে ইচ্ছেমতো শেপ দেয়া যায়?
– তা দেয়া যায় না। তবে আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।
– আমারো ভালো লেগেছে। কিন্তু আপনার নিজের উপর কন্ট্রোল নেই। তাই সম্পর্কটা আর হবে না।
কথাটা বলে পলা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কফিশপ থেকে বের হয়ে এলো।
সম্পর্ক ভাঙ্গাচোরার মধ্য দিয়ে পলা আর যেতে চায় না। একেকটা সম্পর্ক ভাঙ্গে আর হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এখন পলার ফুরেফুরে ঝরঝরে জীবন। অযথা উটকো যন্ত্রণা আর বয়ে আনতে চায় না। এমন কিছু ভাবতে ভাবতে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে থাকে বাসের জন্য। বিকেলটা বেশ সুন্দর, নরম। মিষ্টি বাতাস বইছে।
আর শোভন? সে কফিশপ থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে দূরবর্তী পলাকে দেখতে থাকে।