দরজার শব্দ
শাশ্বতী বিপ্লব।।
ফ্ল্যাট বাড়িটাতে গভীর রাতে চারিদিক শুনশান হয়ে আসে যখন
সযতনের ঢেকে রাখা সংসারের ক্ষতগুলো আচমকা চিৎকারে উদোম হয়ে যায় –
“বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে!”
কে বলে, কাকে বলে, কেন বলে জানা যায় না।
কৌতুহল চাপতে না পেরে কেউ ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়
কেউ বা জানালার পাল্লা দু’টো খুলে দেয় আরেকটু।
কে জানে, হয়তো মিলে যাবে নিজের সাথে।
ইশ্, কি অশান্তি, আহারে! মনে মনে ভাবে কেউ
কেউ ভাবে, কি অসভ্য লোকরে বাবা! কোন কমনসেন্স নেই!
এতো রাতে কেউ এভাবে চিৎকার করে? আশ্চর্য্য!
ফ্ল্যাটবাসীর ভাবনা চিৎকারের মালিকের উপর কোন প্রভাব ফেলে না
“বের হয়ে যা বেশ্যামাগী” বলে চিৎকার করে ওঠে আবার
হঠাৎ খুব জোরে দরজা লাগানোর শব্দে চমকে ওঠে ফ্ল্যাটবাসী
সত্যি বেরিয়ে গেলো নাকি তবে?
এতো সাহস হবে?
কার সাহস, কেন সাহস, কোন্ সাহস জানা যায় না।
আরো কিছুক্ষণ কান পেতে থাকে ফ্ল্যাটবাসী
নাহ্, আর শোনা যায় না কিছু
অতৃপ্ত কৌতুহল নিয়ে ঘরে ফেরে তারা
জানলাটা টেনে দিয়ে নীরবে শুয়ে পড়ে বিছানায়।
খুব সন্তর্পণে সরিয়ে রাখে চোখ
পাছে ধরা পড়ে যায় মনের ভিতরের কথোপকথন।
একজন পুরুষ ভাবে, তার চিৎকারও কি তবে এমন বিভৎস শোনা যায়?
নাহ্, সাবধান হতে হবে এখন থেকে।
একজন নারী মনে মনে বারবার দরজার শব্দটা বাজিয়ে শোনে
কি দারুণ একটা শক্তি আছে শব্দটায়!
তার শরীর শিউরে ওঠে উত্তেজনায়, ভাবে
চাইলে সেও কি খুলতে পারবে দরজাটা অমন করে? কি জানি!
পারবে কি পারবে না ঠিক করতে না পেরে
মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়ে ফ্ল্যাটবাড়িটার কোন এক ঘরে।
যে ঘরটা তারও হবার কথা ছিলো
যে ঘরটা তার হয় নাই কোনদিন।