November 21, 2024
মুক্তমত

নতুন রোদের অপেক্ষায়…

রাকিবুল হাসান।। আমরা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হতে যাচ্ছি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। পুরো মানবজাতি এখন এই কঠিন সময়ে ভুক্তভোগী। খুব কঠিন ভয়াবহ ছোট একটা বার্তা দিয়েই হয়তো শুরু হতে যাচ্ছে সেই সময়। আমরা মনে করতে পারি চার্লস ডিকেন্সের সেই বিখ্যাত ‘আ টেল অব টু সিটিস’ উপন্যাসের- “It was the best of times, it was the worst of times” এই বাক্যটি।

আমরা সত্যিই খুব ভাল সময়ে ছিলাম কিংবা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে ছিলাম। হয়তো আমরা এতদিন সে রকম কিছুর জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। তাই বিশ্ব কার্যত তুলনামূলক নতুন রোদের অপেক্ষায় আছে। আমাদের পরবর্তী জীবন মান, অর্থনৈতিক সূচনা, নিরেট শিল্প ও বিনির্মান নির্ভর পরিকল্পনা। স্বাস্থ্য কিংবা মানসিক বিকাশ, নির্বাচিত বিনোদন কিংবা সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যম, মেলামেশার অধিকার, বা ধর্মকে সংকুচিত করে তা থেকে লাভবান হওয়া। সব আমাদের নতুন করে সূর্যের মত তীর্যক আলোয় রাঙ্গাবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে তা আমাদের হাতে কলমে শিখিয়েছে। এবং তা স্থায়ী হবে। এবং নতুন করে জানতে পারবো প্রকৃতিও শক্তি প্রয়োগে মাঝে মাঝে পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠে।

সারাবিশ্ব এই কঠিন সময় মোকাবিলায় কিছুটা দেরিতে হলেও একটা অভিন্ন প্লাটফর্মে এসেছে। গত ৪ মে (সোমবার) ইউরোপীয় ইউনিউনের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরি ও চিকিৎসার জন্য বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের সরকারপ্রধান যুক্ত হয়েছিলেন অনলাইন করোনাভাইরাস গ্লোবাল রেসপন্স সামিটে। সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তার অংশীদারেরা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা শুরু করার জন্য প্রাথমিক অর্থায়নে ৭.৫ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্য রেখেছে। আর বৈশ্বিক ভ্যাকসিন সম্মেলনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশের সরকারপ্রধান, বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন প্রতিনিধি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। রেকর্ড পরিমাণ অর্থ- ৮৮০ কোটি ডলার সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস ও জনসন ১৬০ কোটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তহবিলের অর্থ যাবে GAVI- The Global Alliance for Vaccines and Immunization নামের সংস্থায়। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নেই চলে এটি। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি শিশুকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং এভাবে ৭০-৮০ কোটি প্রাণ বাঁচবে। GAVI’র দাবি, ২০০০ সাল থেকে তাদের প্রচেষ্টায় অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মৃত্যু রুখে দেয়া গেছে।

এখানে চমকপ্রদ বিষয় হলো বরাবরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনায় থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি। এবং তা অবশ্যই ভালো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। কারণ করোনাভাইরাস নিয়ে শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্ষিপ্ত ও হতাশাব্যাঞ্জক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকা ও ইউরোপ। বিশ্বের ১৮৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই মরণ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৫ লাখের বেশি। আড়াই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

তবে এখন সবচেয়ে বেশি আলোড়িত এবং নিন্দিত ঘটনায় বিশ্বের মোড়ল দেশের ত্রাহি অবস্থা এবং সাম্প্রতিক কালের মার্কিন প্রশাসন হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে- সম্প্রতি পুলিশের হাতে নিহত সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের নির্যাতনের ইতিহাস দীর্ঘ ও করুণ। আমেরিকার সমসাময়িক সাহিত্যে তার নিবিঢ় সাক্ষাৎ রয়েছে। উদাহরণ হতে পারে Tony Morrison এর  Beloved। ১৮৬১-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধ পরবর্তী পটভূমিতে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। তাই এটা সুদীর্ঘ ২০০ বছরের পুরনো বিবাদ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই অববাহিকায় নেত্র রেখে বড় হয়েছে, তাই আজ কালোদের পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গরা ও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে খুব সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একটা রেড লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্বাভাবিক, নির্লিপ্ত ও আগ্রাসী। তার নীতির সাথে সহমত পোষণ না করায় নিকট অতীতেও মন্ত্রী থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউসের অনেক কর্তাব্যাক্তিকে বিদায় নিতে হয়েছে। কেউ কেউ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে একটা নতুন আবহ তৈরি হয়েছে। যেকোনো সময় বেজে ওঠে যেতে পারে ইতিহাসের কলিং বেল।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]