বিড়াল ধর্ষণ, পেরাফিলিয়া এবং এই অন্ধ সমাজ
সাদিয়া মেহজাবিন।। সম্প্রতি নানা কারণে আমাদের মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে। কিন্তু এই সমাজ অনেক আগে থেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছে। লাহোরে এক ৩ মাস বয়সের বিড়ালছানাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে ১৫ বছরের এক কিশোর, তার ৬ বন্ধুকে নিয়ে। বিড়ালের যোনী এবং পায়ু পথ এক হয়ে গিয়েছিল। বিড়ালটিকে উদ্ধার করলেও পরে মারা যায়।
কেন আমরা এত অমানবিক? আমাদের সমাজে বিড়ালছানাও নিরাপদ নেই দেখে আমার রীতিমত সে মানুষদের কথা মনে পড়ে গেল, যারা মেয়েদেরকে ধর্ষণের কারণ হিসেবে তাদের পোশাক, চলাচলকে দায়ী করে। তারা কি এই খবর পড়েছেন?
আমাদের বাসায় আমার বোনের অতি আদরের এক বিড়া ছানা ছিল। নাম টিনটিন। তাকে অতি আদরে রাখা হয়েছিল, আমাদের সকলেরই মত সেও বাড়ির অংশ। একবার আমরা ঘরের বাইরে ছিলাম, সে সুবাদে বিল্ডিং এর কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে তাকে হয় মেরে ফেলে, না হয় কোথাও দিয়ে আসে। এ এক রহস্য। এরপর আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম যে এমন কাজ তাদের, যখন দেখি পরে আরেকটি বিড়ালকেও আমরা আনলে তাকে বাসার নিচে খেলতে দিলে মৃত পাওয়া যায়। এসব বিষয়ের কারণ উদ্ধার আর না হলেও আমাদের ধারণা ছিল বিড়াল রাখাতে বাকি ফ্ল্যাটের মালিকদের সমস্যা হচ্ছে। আমি এখনো জানিনা কেন এই চুলকানি! লাহোরের এই বিড়াল ছানার ঘটনা শুনে আমাদের টিনটিনের কথাও খুব মনে পড়ে। এবং আমি অবচেতনে ভাবতে থাকি মানুষ কীভাবে এমন করে! কীভাবে যৌনবিকৃতি নিরীহ পশুর প্রতিও ধাবিত হয়?
বিভিন্ন ভাবনা থেকেই গুগলে সার্চ দিয়ে জানতে পারলাম মূলত এটি একটি মানসিক সমস্যা, যার নাম “পেরাফিলিয়া”(Paraphillia)। যখন যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে মানুষ বিভিন্ন বিকৃ্ত পন্থা বেঁছে নেয়। এমন মানসিক রোগীরা পশুপাখি, বস্তু, অবাস্তব সামগ্রীকে বেছে নেয় এবং তাদের ইচ্ছাপূরণের জন্য অন্যকে আঘাত করে থাকে। এই ক্ষেত্রে ৭০% মানুষের মধ্যে দেখা যায় তারা অন্যকে আঘাত করে এবং শিশুদের বেছে নেয়। তবে এই রোগের চরম মাত্রা নারী থেকে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তার উদাহরণ হিসেবে বিড়াল কুুকুর বা কোন নিরীহ পশু ধর্ষণ, বস্তু সামগ্রীর সাথে সঙ্গমের চেষ্টা এবং অন্যকে আঘাত করার ঘটনাই বেশি।
প্রাচীন যুগে এর প্রভাব বেশি ছিল বলে অনেকে ধারণা করেন। বিভিন্ন সিনেমাতে এ বিষয় ফুটে উঠেছে। যেমন আমার দেখা ইমির কুস্তুরিকা’র ‘ব্ল্যাক ক্যাট, হোয়াইট ক্যাট’ সিনেমায় এক দৃশ্যে মুরগীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে এক ১২ বছরের কিশোর।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন এই মানসিক রোগ! এর কারণ খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, অনেক দিন ধরে যৌন আকাঙ্ক্ষা, অভাব, সঠিক ভাবে না জানা, ভুল শিক্ষা এবং অতিমাত্রায় পর্ন সাইট দেখে তীব্র আকাঙ্ক্ষিত হওয়া, সঙ্গীর অভাব, অন্যদের সাথে নিজের সমস্যা নিয়ে আলোচনা না করা, নিজে অবগত না হওয়া ইত্যাদি এই বিকৃতির পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করে।
এ সকল বিষয় নিয়ে খতিয়ে দেখতে গিয়ে আমি আরো দেখতে পেলাম এক বছর আগে একটি মেয়ে ফেসবুক লাইভে এসে এক বিড়াল ছানাকে হত্যা করে নির্মমভাবে। এমন সব দেখার পর বুঝতে পারলাম আসলে আমরা খুবই মানসিকভাবে অসুস্থ এক জাতি। সত্য আমাদের কাছে ট্যাবু, তাই তো আমরা শিশুকাল থেকে সন্তানকে সঠিক “সেক্স এজুকেশন” দিই না। অনেক মা বাবা মনে করেন তার সন্তান এখনো ছোট, সে এসব জানে না বা বুঝবে না।
দয়া করে ভুল ধারণায় থাকবেন না। এই ইন্টারনেটের যুগে এখন বাচ্চারাই বেশি এগিয়ে, তারা শিখছে। ভুল পথে, ভুল শেখার চেয়ে আপনি আমি সচেতন হয়ে শেখালে সমাজে মানসিক সমস্যা অনেক হার কমবে। মানসিকভাবে অসুস্থ কিশোরদেরকে রিহ্যাবে দেওয়া খুবই জরুরি, তবে বাইরের দেশের মত আমাদের রিহ্যাব উন্নত না। কর্তৃপক্শের এ বিষয়গুলো আমলে নেয়া জরুরি।
নিজের সন্তানকে ছোট থেকে মানবিক শিক্ষা দিতে শিখুন। আপনি নিজে সদয় আচরণ করুন। আপনার সন্তানকেও শেখান।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]