November 2, 2024
অনুবাদসাহিত্যকবিতাফিচার ৩

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা

আমেরিকান কবি  সিলভিয়া প্লাথ (অক্টোবর, ১৯৩২-ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩), পাশাপাশি একজন ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্প লেখক। পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া এই প্রতিভাবান কলাশিল্পী দীর্ঘদিন ক্লিনিক্যালি বিষন্নতায় ভোগার পর ১৯৬৩ সালে আত্মহত্যা করেন। 

সিলভিয়া প্লাথের দুটি কবিতা Mirror এবং Edge। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মেহেরুন নূর রহমান।

 

আয়না

আমি রুপোর তৈরি এবং আমার কোন পক্ষপাতিত্ব নেই

আমি যা দেখি তাই গলাধঃকরণ করি ততক্ষনাৎ, যেমন ঠিক তেমনি

ভালোবাসা বা অপছন্দ আমাকে কুয়াশাচ্ছন্ন করতে পারেনা

আমি নিষ্ঠুর নই শুধু সত্যবাদী, দেবশিশুর চোখের মত


বেশিরভাগ সময় আমি ধ্যানমগ্ন থাকি

তাকিয়ে থাকি উল্টো দিকের দেয়ালের দিকে

ছোট ছোট দাগে ভরা দেয়ালটি গোলাপি

আমি দীর্ঘ সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকি

এক এক সময় মনে হয় এটি আমারই হৃদয়ের অংশ

কিন্তু এটি পরিবর্তিত হতে থাকে

মুখ এবং অন্ধকার আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ক্রমাগত

এই মুহূর্তে আমি একটি নীল হ্রদ

একটি মেয়ে ঝুঁকে আছে আমার উপর

যেন আমার নাগাল পাবার চেষ্টা করছে জানতে সে আসলে কেমন

তারপর সে ঘুরে দাঁড়ায় বিভ্রান্তকারী চাঁদ বা মোমবাতির দিকে

আমি শুধু তার পেছন দিকটা দেখতে পাই

এবং তাই আমি প্রতিবিম্বিত করি নিখুঁতভাবে

চোখের জল এবং অস্থিরতা দিয়ে সে প্রায়ই আমাকে পুরস্কৃত করে

আমি মেয়েটির কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ

সে আমার সামনে আসে যায় প্রতিনিয়ত

প্রতি সকালে তার মুখ অন্ধকারকে প্রতিস্থাপন করে

আমার মধ্যেই সে একটি তরুণীকে ডুবিয়ে দিয়েছে এবং

আমার মধ্যেই রয়েছে তার বৃদ্ধ সত্তা

যা দিনের পর দিন তার দিকে ধাবিত হচ্ছে

ভয়ংকর মাছের মত

 

কিনারা

মৃতদেহে  নারীটি এখন নিখুঁত

শরীর জড়ানো পরিপূর্ণতার হাসি

গ্রীক বীরের মত বিভ্রান্তিময়

তার পরিধানের ভাঁজ প্রবাহমান

নিরাভরণ পা পর্যন্ত

পদযুগল যেন  বলছে

অনেকদূর পেরিয়ে এসেছি, এবার সমাপ্তি

প্রতিটি শিশু মৃত এবং কুন্ডলীকৃত, যেন সাদা সাপ

দুধের ঘড়াও এখন খালি

সে শিশুদের নিজের দেহের কাছে টেনে নিয়েছে

যেমনি পাপড়িরা থাকে গা-ঘেঁষে গোলাপের

তখন দিনশেষে বাগানের অন্ধকারে

শক্ত হয়ে যাওয়া রাতের ফুলেরা

তাদের গভীর থেকে ঝরায় গন্ধ

আর রক্ত

হাড়ের মত সাদা ঘোমটার আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকা চাঁদ

তার দুঃখ করার কিছু নেই

সে এসব দেখে অভ্যস্ত

শুধু তার কৃষ্ণ গহ্বরে ফাটল ধরে

এবং গ্রাস করে নেয় সবকিছু