November 21, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

কান্নার কোন জেন্ডার নেই

সিদ্রাত মুনতাহা।। ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবারই শোনা বহুল প্রচলিত একটা কথা হচ্ছে- পুরুষদের কাঁদতে নেই। পুরুষমানুষ কাঁদে না। পুরুষের চোখের জল তার দুর্বলতা।

পুরুষের যে কাঁদতে নেই, এই চিন্তার প্রর্বতক কে?

অবশ্যই এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। প্রাচীনকাল থেকে পুরুষের কান্নাকে এক প্রকার নিষিদ্ধ ভাবা হয়েছে এবং কান্না বিষয়টাকে ভাবা হয় দুর্বলতার প্রতীক। আসলেই কি কান্না দুর্বলতার লক্ষণ? নারীর কান্না স্বাভাবিক কিন্তু পুরুষের কান্না অস্বাভাবিক- এমন কেন? নারীর যেমন মন আছে, আবেগ আছে, পুরুষদের কি নেই? হতে পারে শারীরিকভাবে নারী পুরুষ আলাদা, তবে কি মনেও তারা আলাদা? দুজনেই তো মানুষ, আবেগ অনুভূতি দিয়ে গড়া। একজন নারী প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে কাঁদতে পারলে একটা পুরুষের কেন পারবে না? কান্নাকাটি করে হাল্কা হওয়া শুধু নারীদের জন্য জায়েজ কেন? পুরুষেরও অধিকার আছে কাঁদার, কেঁদে হাল্কা হওয়ার!

পুরুষ কাঁদলে সেটাকে ধরা হয় কাপুরুষতা হিসেবে। যে পুরুষের কাঁদে তাকে কমজোরি ভাবা হয়, যেখানে নারীর কান্না স্বাভাবিক দেখা হয়। তার অর্থ কি এই দাঁড়ায় না নারীরা তো দুর্বলই তারা তো কাঁদবেই। পুরুষের কাঁদতে নেই এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাটি মোটা দাগে নারীকে দুর্বল হিসেবেই প্রমাণ করে। আরেকটা কথা সবাই কমবেশি শুনে থাকবেন ‘পুরুষ মানুষ তো, তাই কাঁদতে পারিনা”। এ কথা দ্বারাও কিন্তু পরোক্ষভাবে বুঝানো হয়েছে নারীরা দুর্বল আর পুরুষরা শক্ত সামর্থ্য, তারা কাঁদতে পারে না।

কোন সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে পুরুষেরা দুঃখ পেলে মদ সিগারেট খাবে, নেশা করবে, কিন্তু কাঁদতে পারবেনা? সাধারনত বেশিরভাগ পুরুষ এই কাজটাই করে, এটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক কারণ তাদের মাথায় চিন্তাটা ঢোকানোই হয়েছে এভাবে যে কাঁদা যাবেনা। কাঁদলে মেয়েলি বা ছিঁচকাঁদুনে উপাধি পেতে হবে। বন্ধুমহলে হাসির পাত্র হতে হবে। আর বলাই বাহুল্য ‘মেয়েলি’ হল তাই, যা অত্যন্ত একেবারেই অগ্রণযোগ্য, মেয়েলি মানেই শক্তিহীন, ক্ষমতাহীন, যোগ্যতাহীন।

কোন কোন পুরুষ বেশি দুঃখ পেলে নেশা করে। চাইলেই হয়তো মানুষটা কেঁদে হাল্কা হতে পারত। সিগারেট মদ হয়তো বা তার সঙ্গী হত না। রাগে কষ্টে আরেকদল পুরুষ আবার স্ত্রী বা প্রেমিকার গায়ে হাত তোলে এবং তারা এটাকেই স্বাভাবিক ভাবে। তারা এটাকে তাদের  অধিকার ভাবে। অনেক মেয়েও এসব সহজেই মেনে নেয়। ভাবে পুরুষ মানুষ, মন মেজাজ ভালো না, একটু আধটু গায়ে হাত তুলেছে ব্যাপার না।

আচ্ছা ব্যাপারটা যদি উলটো হত? কোন নারী যদি কোন পুরুষকে মারতো বা মদ সিগারেট খেত ভেতরের ক্রোধ ঝাড়ার জন্য, বিষয়টা কেমন হত? কজন পুরুষ এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারবে?

এ যেন সমাজের বেধে দেয়া নিয়ম- নারীরা দুঃখে কষ্টে কেঁদে কেটে হাল্কা হয়ে যাবে আর পুরুষেরা হবে অ্যাগ্রেসিভ। অথচ পুরুষদেরও কাঁদা উচিত খারাপ লাগলে। হাউমাউ করে কাঁদা উচিত। আর সেই কান্নার জন্য অবশ্যই তাকে দুর্বল ভাবার অধিকার কারোর নেই। দুনিয়া বদলাচ্ছে সব এগোচ্ছে। চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ‘পুরুষের কাঁদতে নেই’ – এই চিন্তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পুরুষের কান্নাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। কান্নার কোন লিঙ্গ হয়না। সেটা সবার জন্যই সমান। এটা একটা অনুভূতি। কষ্টের বহিঃপ্রকাশ। কান্নায় নিজের কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে হাল্কা হওয়ার অধিকার সবার আছে- নারী পুরুষ সবার।

কান্নায় তো ক্ষতি নেই বরং কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো, কারণ এতে অনেক নেগেটিভিটি নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায়। কান্নায় কোন লিঙ্গ ভেদাভেদ না হোক।কান্না হোক সবার জন্য স্বাভাবিক ও উন্মুক্ত।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]