অরুন্ধতী নয়, অন্য মেয়েমানুষ হয়ে…
সানজিদা কথা।।
কথা ছিল মেঘ হবো, রৌদ্র ছোঁব,
কথা ছিল অরুন্ধতী হবো, কিনে নেবো তাহিতি দ্বীপ,
একত্রিশ বসন্ত পেরিয়েছে
এখন আমার সামনে প্রকাণ্ড আয়না,
আকুল হয়ে মেঘ খুঁজি কিংবা তাহিতি, অরুন্ধতীকে
আমি বিস্ফোরিত চোখে দেখি
আয়নায় আমার প্রতিবিম্ব
সেখানে বিকট দর্শন এক বিষাক্ত ক্যাকটাস, গা ভর্তি কাঁটা
তাতে বিবর্ণ এক ফুল।
এমন কি হবার কথা ছিল অপাংক্তেয় সুমানব?
আমি তখন চার কি পাঁচ
অক্টোপাস এর মত হাত আমাকে গ্রাস করেছে,
হাত বদলেছে বদলাইনি আমি,
আমি তখন নয় কি দশ
তাদের চোখে লোভ,
লোভাতুর চোখ বদলেছে বদলাইনি আমি,
আমি তখন তের কিংবা চৌদ্দে বালাই
ওরা আমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছে,
মিথ্যা স্বপ্ন জাগানিয়ারা বদলে গেছে
আমি তবু রয়েই গেলাম,
এরপর আমি অষ্টাদশী যুবতী
ময়ূরপঙ্খী ঘোড়া সারি সারি
আমি চোখ বন্ধ করে গুনছি
ওবু দশ, বিশ, তিরিশ…..
বেছে নাও…
ভুল হলো এবার
ভাবলাম, পরের বার শুধরে নেবো
আমি গুনে চলছি দশ, বিশ, তিরিশ….
একি কাণ্ড!
ওদের চেহারা আলাদা
ওদের উচ্চতা আলাদা
ওদের ঘ্রাণ আলাদা
কিন্তু ওরা এক, একেবারে ভিন্নপথে একইরকম এক।
আমার গায়ে সোদা গন্ধ
মাগো দেখো, আমার স্বপ্নরা বিলীন হয়
মানব শিশুদের ওষ্ঠ আমার বুকে
একসময় তারাও বলে উঠলো
‘‘মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া, ওরে বুবু সরে দাঁড়া….”
আমার বয়স তখন তিরিশ ছুঁই ছুঁই
আমার লেপ্টানো কাজল
আমার লুটানো আঁচল
আমার খসে পড়া টিপ
আমার ঘুনেধরা বইয়ের সারি
আমার ক্ষয়ে যাওয়া কবিতার খাতা
আমার গল্পহীন ক্যানভাস
আমার চোখের গাও ভরে গিলে ফেলা জল
আমি তবু খুঁজে ফিরি শেষ রোদ্দুরের ঠিকানা
আমি শেষবারের মত গুনি ওবু দশ বিশ তিরিশ,
আমি বয়স যখন চার কি পাঁচ, সেই থেকে একত্রিশ অবধি ভিন্ন চেহারার একই রূপ দেখি
আমি বিষাক্ত ক্যাকটাস
অভিমান লুকিয়ে, রাগ গিলে
নিজেকে হারিয়ে, অন্য মেয়েমানুষ হয়ে
অরুন্ধতী হওয়া যায় নাকি?
তখন গায়ে কাঁটা হয়
তখন বুকে আঁধার হয়, অদেখা আঁধার,
তখন রক্তের আলতা হয়
এক জোড়া ভ্রু’র ঠিক মাঝে শেষ ফুল ফোটে
বিবর্ণ বিষাক্ত ফুল…