November 24, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

সহজ, কিন্তু খুব জরুরি কয়েকটি কথা

শ্রেয়া সাদেক।। প্রকৃতির সবচেয়ে বুদ্ধিমান সৃষ্টি হল মানুষ।  কিন্তু মানুষই ক্ষেত্রবিশেষে নির্বোধতম প্রাণির মত আচরণ করে। খুব সহজ কিছু কথা বলি- বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, দায়িত্ববোধ, সুকুমারবৃত্তির চর্চা, মানবিক গুণাবলী (ভালবাসা, মমতা, মায়া, রাগ, দুঃখ, অভিমান), ইচ্ছে, স্বপ্ন, শিল্পবোধ, পরিপক্কতা, সহিষ্ণুতা, উদারতা, জৈবিক চাহিদা ইত্যাদি সবকিছু লিঙ্গ নিরপেক্ষ বিষয়। লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে পার্থক্য করা যায় না। এগুলো ‘মানুষের’ বৈশিষ্ট্য।  লিঙ্গ পরিচয় এ সকল বিষয় চর্চার ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় না বা কোন বিশেষ সুবিধা প্রদান করে না। প্রতিটা কাজ মানুষ করতে পারে। লৈঙ্গিক পরিচয় কোন অযোগ্যতা বা বিশেষ যোগ্যতা না উপোরোক্ত বিষয়গুলো চর্চার ক্ষেত্রে।

বুদ্ধিমত্তা বা মস্তিষ্কের ব্যবহার মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য যা মানুষকে আলাদা করেছে অনান্য প্রাণি থেকে। এ বৈশিষ্ট্যটির উপরে লৈঙ্গিক পরিচয় কোন প্রভাব বিস্তার করে না। যেকোনো মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করতে পারে। সকলের বুদ্ধি সমান না হতে পারে কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে কখনোই বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ করা যায় না। তেমনি ভাবেই কোন বিষয়ে দক্ষতা লিঙ্গনির্ভর বিষয় না। সেটা ভাল রান্না করতে পারা হোক বা কোন বিজ্ঞানাগারে কোন পরীক্ষণ, নিজের বাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হোক না অফিসের ডেস্ক জব, ঝাড়ু দেয়া হোক বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা হোক প্রতিটি কাজই যেকোনো লিঙ্গের মানুষ করতে পারে। যেকোনো দক্ষতা যেকোনো মানুষ অর্জন করতে পারেন।

কোন মানুষের শুধুমাত্র পুরুষ লিঙ্গ পরিচয় বহন করা নির্দেশ করে না যে সে নেতৃত্বদানে যোগ্য বা কোন মানুষের নারী লিঙ্গ পরিচয় বহন করা নির্দেশ করে না যে সে নেতৃত্বদানে অযোগ্য। নেতৃত্বদান একটি দায়িত্ব। একটি গুণ। এটা যোগ্যতানির্ভর একটি বিষয়। লিঙ্গ নির্বিশেষে এ গুণ যেকোনো মানুষের থাকতে পারে।

মানুষের সাধারন প্রবৃত্তির বাইরেও অন্য কিছু গুণাবলী থাকে। যেমন ভালোবাসা, মমতা, মায়া, রাগ, দুঃখ, অভিমান। এ সকল বৈশিষ্ট্য প্রকাশের অধিকার প্রতিটা মানুষের আছে। প্রতিটি মানুষ ভালোবাসা অনুভব করে। প্রতিটা মানুষই পারে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে মুখ ফুটে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে। রাগ-অভিমান খুব মৌলিক অনুভূতি। পুরুষ মানুষের রাগ থাকা স্বাভাবিক এবং নারীদের রাগ থাকা যাবে না বা প্রকাশ করা যাবে না এ ধরনের চিন্তা খুবই অপরিপক্ক।

দায়িত্ববোধ অনেক বড় একটি বিষয়। প্রতিটি মানুষকেই জীবনের একটা সময় থেকে কিছু না কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি। কিছু দায়িত্ব কিছু কিছু সময় লিঙ্গনির্ভর হয় তবে অধিকাংশ দায়িত্বলিঙ্গ নির্বিশেষ। একজন মানুষের নারী হওয়া তার পরিবার প্রধান হবার অযোগ্যতা নয়। দায়িত্ব জানে না কে তাকে পালন করছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ এবং দক্ষতাই যোগ্যতা।

স্বপ্ন সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার মানবজীবনে। একদম স্বপ্নের মত সুন্দর একটা ব্যাপার! যে কোন মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে পারে। স্বপ্ন সেই জিনিস যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই স্বপ্নের জন্যে কাজ করাটা খুব স্বাভাবিক। কারো লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে কোন মানুষকে তার স্বপ্ন ত্যাগ করতে বলা যায়না। ইচ্ছার কোন লিঙ্গ হয়না। কোন ঠিক ভুল হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ কোনো অন্যায়/অপরাধ করছে বা অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর কিছু না করছে ততক্ষণ কারো কোনো ইচ্ছা বাধা দেয়া যায়না। লিঙ্গ পরিচয় ভিত্তিতে কারো ইচ্ছা নিয়ে অপমান করা যায় না।

জৈবিক চাহিদা প্রবৃত্তিগত ব্যাপার। অন্যান্য প্রাণির মত মানুষেরও ক্ষুধা, তৃষ্ণা, বিপাক, যৌনচাহিদা প্রভৃতি বিষয় আছে। এ ব্যাপারগুলোও লিঙ্গনিরপেক্ষ। এ সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা নিয়ে অশোভন ব্যবহার করা অন্যায়।

লিঙ্গভিত্তিক কিছু পার্থক্য অবশ্যই আছে। কিছু বৈশিষ্ট্য আলাদা আছে। একজন নারী কখনই তার শরীরে স্পার্ম উৎপন্ন করতে পারবেন না বা একজন পুরুষ তার শরীরে তার বাচ্চাকে ধারণ করতে পারবেন না। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো কোন বিশেষ যোগ্যতা বা অযোগ্যতা হয়ে যায় না অন্যান্য ক্ষেত্রে। একজন নারী মা হতে পারেন বলে এমন না যে তিনি তার ইচ্ছেমত ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারেন না। একজন পুরুষ, পুরুষ বলেই নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে অথবা পরিবার বা গোত্রপ্রধান হবার ক্ষেত্রে যোগ্যতর হয়ে যান না।

শিক্ষা দক্ষতা যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা এগুলো লিঙ্গনিরপেক্ষ ব্যাপার। সর্বোপরি প্রাপ্য সুযোগ প্রাপ্তি সকল মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবন একটা টিম ওয়ার্ক। এখানে কেউই কাউকে পিছিয়ে রেখে, দূরে ঠেলে দিয়ে সামনে এগোবে না  বরং সবাই সবাইকে সাহায্য করে সহনশীল সুন্দর এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]