September 20, 2024
সাহিত্যফিচার ২প্রবন্ধ

চলচ্চিত্র ইতিহাসে ম্রিয়মান, প্রথাগত ও পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত নারী

শারমিন শামস্।। পৃথিবীর ইতিহাসে নারীর কাজ, অবদান ও ভূমিকা চিরকালই অবহেলিত ও উপেক্ষিত। ইতিহাসের পাতায় পাতায় পুরুষের যে সদর্প উপস্থিতি, নারী ঠিক ততটাই ম্রিয়মান। ইতিহাস খুঁড়তে শুরু করলে দেখা যায়, যুগে যুগে কালে কালে নারী তার সীমিত সুযোগ সুবিধা সত্ত্বেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই বড় বড় অবদান রেখে গেছে। কিন্তু ইতিহাস তাদের উপেক্ষা করেছে, উজ্জ্বল করেছে পুরুষের ভূমিকাকে। কোন পুরুষ কোন নারীর চেয়ে কম অবদান রেখেও হয়েছে পুরস্কৃত, মহিমান্বিত। তবু কালে কালে লোকে পুরুষটির নামই জেনেছে ও জপেছে। নারী থেকে গেছে অন্ধকারে। তাকে ধরে নেয়া হয়েছে পুরুষের জগতের একজন সাহায্যকারী বা উৎসাহদাত্রী হিসেবে। বহু নারী নেতৃত্বে থেকে মূল কাজটি সমাধা করার পরও মুছে দেয়া হয়েছে তার নাম, মূল্যায়ন তো দূরের কথা।

সভ্যতার গল্পে একটি রঙীন পালক চলচ্চিত্র, যার পথচলা শুরু উনিশ শতকে। ১৮২৫ সালে ফ্রান্সের পারিতে লুই ও অগুস্তু লুমিয়ের-এর সিনেমাতোগ্রাফ প্রদর্শিত হয়। এরপর আর থেমে থাকেনি কিছুই, নানা ব্যাপ্তিতে নানা রূপে রঙে উপস্থাপনা কৌশলে প্রযুক্তির উৎকর্ষে সিনেমার পথ চলা প্রতি বাকে বাকে নিত্য নতুন চমক দেখিয়েছে দর্শককে। সিনেমা ইতিহাসের এই যাত্রা পুরুষের একার নয়। বহু নারী একদম শুরু থেকে চলচ্চিত্র জগতে কাজ করেছেন পুরুষের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে, সমান যোগ্যতা ও দক্ষতায়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে যা হয়, এমনকি চলচ্চিত্রের মত একটি সৃজনশীল জগতে এসেও নারী হয়েছে অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার। নারীর ভূমিকা সেভাবে আলোচনাতেই আসেনি। এমনকি শতবর্ষ পার হবার পরও নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম ধাম ঠিকুজি থেকে যায় আড়ালে, সেভাবে উচ্চারিতই হয় না। সিনেমা জগতে নারীর অবদান লাস্যময়ী নায়িকার ভূমিকায় যতটা স্বীকৃত হয়েছে, ঠিক ততখানিই উপেক্ষিত হয়েছে নির্মাতা হিসেবে নারীর নাম।

১৮৯৬ থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত অ্যালিস গি-ব্লাশে ছিলেন সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। সিনেমার শুরু থেকে নির্মাণ শুরু করেন এবং প্রাক-হলিউড স্টুডিও তৈরি করেন। প্রথম ‘ন্যারেটিভ ফিল্ম’ও বানান। মাত্র ২৩ বছর বয়সে কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর কয়েক দশক ধরে করে গেছেন পরিচালনা, প্রযোজনা এবং চিত্রনাট্যের কাজ। তৈরি করেছেন এক হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্র, অভিনয় করেছেন, শব্দ সিঙ্কিং, কাস্টিং এবং এসব নিয়ে গবেষণাও করেছেন অ্যালিস। অ্যালিসের মত করেই আসবে প্রথম আমেরিকান নারী পরিচালক লুসি ওয়েবারের নাম। ১৯০৮ সালে তিনি প্রথমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন।  এরপর একশরও বেশি সিনেমার নির্দেশনা দেন তিনি।

এভাবেই আসে ডরোথির নামও। ডরোথি আর্জনার। হলিউডের গোল্ডেন এজ’-এ তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী পরিচালক। তৎকালীন সিনেমায় শব্দের প্রবর্তন ডরোথির অবদান। ডরোথি আবিষ্কার করেন বুম মাইক্রোফোনও। ইতিহাস সাড়ম্বরে কি বলে ডরোথির কথা? তিনটি সাইলেন্ট ফিল্ম ও ১৪টি টকিজ তৈরি করেন ডরোথি। তিনিই ছিলেন ডিরেক্টর্স গিল্ড অফ আমেরিকা’র প্রথম মহিলা সদস্য।

শুধু হলিউড নয়, আধুনিক সিনেমার পাদপীঠ ফ্রান্সেও নারী নির্মাতারা থেকে গেছেন নেপথ্যে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন, তবু তাকে নিয়ে আলোচনা হয়নি সেইভাবে।

জাপানের প্রথম নারী নির্মাতা তাযুকো সাকানি বিশ্বের প্রথম নারী ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও মধ্যে একজন। ১৯৩৬ সালে তৈরি করেন তার প্রথম সিনেমা ‘হাতসু সুহাতা’। ফাতমাহ বেগম হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী পরিচালক। মঞ্চ থেকে এসেছিলেন সিনেমায় অভিনয় করতে। পরে নির্দেশনা দেয়া শুরু করলেন। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব প্রযোজনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফাতমাহ ফিল্মস’ এবং নির্মাণ করেন ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম নারী পরিচালিত সিনেমা ‘বুলবুল-ই-পারিসতান’।

সিনেমা ইতিহাসের শুরুতে যে নারীদের অসামান্য অবদানগুলোর কথা এতক্ষন বললাম, পুরুষের দুনিয়ায় তা উচ্চারিত হয়েছে খুব কম। প্রায় অদৃশ্য থেকে গেছেন তারা। সিনেমা জগতে নারী শুধু অভিনেত্রী হিসেবেই উপস্থিত হয়েছে, এমন একটি ভ্রান্ত ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বারবার। অবস্থা যে খুব বেশি পাল্টেছে তা নয়। এখনো পৃথিবী জুড়ে বহু নারী নির্মাতা কাজ করছেন। তবে সেই নিভৃতির অভিশাপ এখনো লেগে আছে গায়ে। পুরুষশাসিত সিনেমা জগত নারীর লিডারশিপ ভূমিকাকে সহজে আমন্ত্রণ জানাতে রাজি নয়।

এবার একটু বলি এখনকার নারী নির্মাতাদের কথা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ‘অ্যাপল’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করে ১৯৯৮ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভালের অফিসিয়াল বিভাগে কনিষ্ঠতম পরিচালক হিসেবে পরিচিতি পান ইরানের সামিরা মাখমালবাফ। স্পেনের ইসাবেল কসেট একজন লেখিকা, নির্মাতা এবং বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অনুষ্ঠিত ‘অফিশিয়াল কম্পিটিশন’-এর জুরিবোর্ড সদস্য। নিজের প্রডাকশন হাউজ রয়েছে তার। তার নির্মিত বিখ্যাত কাজের কয়েকটি হলো ‘প্যারিস, যে টি’আইমে’, ‘মাই লাইফ উইদাউট মী’, ‘দ্য সিক্রেট লাইফ ওয়ার্ডস’। আশির দশকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন জেন ক্যাম্পিয়ন। তার অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো প্যাশনলেস মোমেন্টস, এ গার্লস ওউন স্টোরি এবং টেলিফোটার ২। তিনি তার প্রথম ফিচার চলচ্চিত্র ‘সুইটি’র জন্য ১৯৮৯ সালে বেস্ট ফরেন ফিল্মের জন্য জর্জ সডল পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৯০ সালে জ্যাকেট ফ্রেমের আত্মজীবনীর উপর ভিত্তি করে নির্মান করেন ‘এঞ্জেল এট মাই টেবিল’, যা একই সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার লিয়নসহ সাতটি পুরস্কার পায়। ‘পিয়ানো’ সিনেমার জন্য কান ফেস্টিভ্যালের সম্মানজনক পুরষ্কার ‘প্লেমে ডি’অর’ জিতে নেন। ১৯৯৩ সালের অস্কারে সেরা অটিজিক স্ক্রিনপ্লেডে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পান এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিচালক মিরা নায়ার। সালাম বম্বে, কুইন অব কাটয়ে, মনসুন ওয়েডিং, মিসিসিপি মাসাল্লা, অ্যামেলিয়া, দ্য রিল্যাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট-মিরার তৈরি সিনেমা। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব এবং বিএএফটিএ পুরস্কার। বিখ্যাত ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ সিনেমা তৈরি করেন প্যাটি জেনকিন্স। তিনি ফক্সের গ্রেস্কেড ডেভেলপমেন্ট এবং এইচবিও’র কয়েকটি টিভিশো এর পাইলট এপিসোড পরিচালনা করেন।স্তন ক্যান্সার নিয়ে নির্মিত একটি শর্ট ফিল্মের জন্য তিনি আরেকটি এমি এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন।

সৌদি আরবের মতো একটা কট্টর দেশের প্রথম নারী সিনেমা নির্মাতার নাম হায়ফা আল মনসুর। কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা নেন হায়ফা। কাজের জন্য সৌদিতে ফিরে আসেন। সৌদিতে নারীর জীবনাচরণের উপর নির্মান করেন হোন‘ওয়াদজা’। পুরো সিনেমাটা শ্যুট করেন সৌদির রাস্তায়, নানা কৌশল করে। কারণ সৌদি আরবে সিনেমা শ্যুট করা নিষিদ্ধ। ওয়াদজা মুক্তির পর হায়ফার দুঃসাহসি কাজে চমক লাগে গোটা পৃথিবীতে। আন্তর্জাতিক ফিল্মফেস্টিভালগুলোতে প্রদর্শিত হতে থাকে সিনেমাটি। ৮৬তম অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র কোটায় পুরষ্কার জেতে হায়ফার ওয়াদজা। এবং প্রথমবার সিনেমা বানিয়েই অস্কার পাওয়া দেশের তালিকায় চলে আসে সৌদি আরবের নাম।

দীপা মেহতা ভারতীয় বংশজাত কানাডিয়ান নাগরিক। তিনি ইন্দো-কানাডিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার বিখ্যাত ট্রিলোজি- ফায়ার(১৯৯৬), আর্থ(১৯৯৮), ওয়াটার(২০০৫)। এরপর ২০১২ সালে ‘মিডনাইট চিলড্রেন’ এবং ২০১৫ সালে সর্বশেষ নির্মান করেন বিবা বয়েস। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত হয়েছেন।

এ তো গেল পৃথিবীর নানা দেশের বিখ্যাত সব নারী নির্মাতাদের কথা। এর বাইরেও বহু নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে কাজ করছেন। শুধু তাই নয় লিখছেন চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্রের কারিগরী উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছেন। এবং চলচ্চিত্র জগতও বাধ্য হচ্ছে নারীর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে, কারণ তারা নারী হিসেবে নয়, নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ রেখেই নিজেদের কাজের স্বীকৃতি আদায় করে নিচ্ছেন, যা বহু বছর ধরেই পাওনা ছিল।

এবার একটু বলি আমাদের দেশের নারী নির্মাতাদের গল্প। বাংলা চলচ্চিত্রে নারী নির্মাতার কথা বলতে গেলে শুরুতেই আসবে রেবেকার কথা। তিনি ১৯৭০ সালে নির্মাণ করেছিলেন বিন্দু থেকে বৃত্ত ছবিটি। এরপরে অভিনেত্রী রোজি আফসারি ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করেন আশা নিরাশা। ১৯৮৮ সালে অভিনেত্রী সুজাতা পরিচালনা করেন অর্পণ ছবিটি। ১৯৯৯ সালে অভিনেত্রী সুচন্দা আসেন পরিচালনায়, সবুজ কোট কালো চশমা নামের সিনেমাটি তৈরি করেন। ২০০২ সালে নারগিস আখতার মেঘলা আকাশ নির্মান করেন। এরপর ২০০৩ সালে মৌসুমী পরিচালিত প্রথম সিনেমা কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি। ২০০৫ সালে সুচন্দা পরিচালিত হাজার বছর ধরে। ২০০৫ সালে মুক্তি পায় নারগিস আখতার পরিচালিত চার সতীনের ঘর। ২০০৫ এ মৌসুমী পরিচালিত সিনেমা মেহের নেগার। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় কবরী’র আয়না। ২০০৬ সালে ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত অন্তর্যাত্রা (যৌথ পরিচালক তারেক মাসুদ)। ২০০৭ সালে সামিয়া জামান পরিচালিত রানীকুঠির বাকি ইতিহাস। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় নারগিস আখতার পরিচালিত মেঘলা আকাশ এর সিক্যুয়েল মেঘের কোলে রোদ। ২০১০ সালে নারগিস আখতারের ৪র্থ সিনেমা অবুঝ বউ। ২০১১ সালে রুবাইয়াৎ হোসেন পরিচালিত মেহেরজান। ২০১২ সালে মুক্তি পায় শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর উত্তরের সুর। ২০১৪ সালে সামিয়া জামান পরিচালিত আকাশ কত দূরে মুক্তি পায়।

নির্বাক ছায়াছবির যুগে নারীদের ভূমিকা ছিল সামান্যই। পুরুষের আধিপত্যের ভিড়ে নারী সে সময় ভিড়তেই পারেনি সিনেমা জগতে কোনো লিডিং রোলে। তার যা উপস্থিতি, সবই অলংকার হিসেবে। বিনোদনের স্বার্থে। দর্শক বা সমালোচকদের চোখে সেভাবে ধরা পড়েনি তারা। কিন্তু পরে, যখনই একটু সুযোগ এসেছে, নারী কিন্তু ঠিকই তার দক্ষতা দিয়ে সিনেমা নির্মান ও কারিগরী দায়িত্বগুলো বুঝে নিতে শুরু করেছে। কিন্তু তার জন্য অ্যাপ্রেসিয়েশন আসেনি সেই অর্থে। যত নাম, সব হয়েছে পুরুষের। নারী থেকে গেছে অভিনেত্রীর মোড়কেই, নির্মাতা নয়। আবার সিনেমায় নারীর ভূমিকা, নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে চরম পুরুষতান্ত্রিকভাবে। কারণ অধিকাংশ নির্মাতাই ছিল পুরুষ, একই সাথে সিনে ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো চালিত হয়েছে পুরুষের অঙ্গুলি হেলনে। অধিকাংশ প্রযোজক পুরুষ কিংবা বলা যায় প্রযোজক আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তাই সিনেমা তৈরি হয়েছে পুরুষের দৃষ্টিতে, পুরুষের রুচিমত, পুরুষের চাহিদা পূরণে, পুরুষকে খুশি করতে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নারীর নেতৃত্বের জায়গাটি পুরুষতান্ত্রিক সিনেমা জগতে একেবারেই কোনঠাসা অবস্থায় আছে। একইসাথে সিনেমায় নারীর উপস্থাপন নিয়ে আলাপ হতে পারে। এতদিন আলাপটি ছিল এই পর্যায়ে যে সিনেমায় নারীকে কতটা বাণ্যিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। নারী কতটা পণ্য। কিন্তু এখন সময় আসছে সিনেমায় নারীর অভিনেতা হিসেবে যে উপস্থিতি সেই উপস্থিতিটি কতটা মানুষের কতটা নারীর, সেটি দেখার। সময় এসেছে দেখবার, সিনেমার চরিত্রায়নে নারী কতটা নেতৃত্বের ভূমিকায় আছে, কতটা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিংবা বলা ভাল নারী কতটা সমতাপূর্ণভাবে পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান করছে, সেটি চরিত্রের মাধ্যমেই, তা বুঝে নেবার সময় এখন সমাগত। এক্ষেত্রে আমরা যদি ভারতীয় উপমহাদেশের পুরোনো সিনেমাগুলো দেখি, দেখা যাবে, সেই ১৯৩৫-৪০ সালের নির্মিত সিনেমাতেই বরং নারী এসেছে শক্তিমান ও ক্ষমতাবান হয়ে। কিংবা নিজের নিপীড়িত অবস্থা থেকে গর্জে উঠেছে।

১৯৩৫ সালে ‘হান্টারওয়ালি’ সিনেমায় নানারকম নারীকে সাহসী চরিত্রে দেখতে পায় ভারতীয় দর্শক। হোমি ওয়াদিয়া পরিচালিত সিনেমা ছিল সেটি। মাথায় টুপি, কালো চশমা পরা নায়িকা, হাতে চাবুক, ঘোড়ার পিঠে চলেছে লড়তে। ১৯৪০ সালে মেহেবুবের ‘আউরাত’ এ মেয়ের সম্মান বাঁচাতে মা হাতে অস্ত্র তুলে নেন। ১৯৫৭ সালের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ মেহেবুবের ‘আউরাত’ এর কথাও আসে এ সূত্রে। বি আর চোপড়ার ‘ইন্সাফ কি তারাজু’তে নায়িকা সাধারণ মেয়ে থেকে এক খুনি হয়ে ওঠে। এন চন্দ্রা’র ‘প্রতিঘাত’ (১৯৮৬), রাজন কোঠারির ‘পুরুষ’ (১৯৯২), রাজকুমার সন্তোষীর ‘দামিনী’ (১৯৯৩)- এরকম বহু সিনেমা এই একই বিষয়ে নির্মিত হয়। তবে মুনাফার জন্যই প্রযোজক-পরিচালকরা এই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন, আর এই ব্যবসায় ‘ধর্ষণ’ মুনাফা আনে। শেখর কাপুরের ‘দি ব্যান্ডিট কুইন’ ফুলন দেবীর জীবন নিয়ে তৈরি, এতে ফুলনকে বারবার ধর্ষণ করা হয়, আবার সেই ফুলন ঘুরেও দাঁড়ায়।

তো এ সময়ে এসে ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালকদের চোখে নারীও শক্তিমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে, তবে লক্ষণীয় যে, সেই শক্তিটা মানুষের শক্তি হিসেবে নয়, দেখানো হচ্ছে নারীশক্তি হিসেবে। এখন, ফেমিনিজমের এই চতুর্থ ওয়েভে এসে, এই লিঙ্গ বিলুপ্তিকরণের যুগে এসে, নারীশক্তিকে আলাদা করে মহিমান্বিত করাও কিন্তু নারীকে আলাদা করেই রাখা। ধরুন, নারী শক্তিমান হচ্ছে, কিন্তু কখন হচ্ছে? যখন তাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, অত্যাচার করা হচ্ছে, তখনই সে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তার আগ পর্যন্ত সে থাকছে নরম কোমল নারীত্বের গন্ধমাখা একটি ফুল হয়ে। মানে যতক্ষণ না তোমাকে আঘাত করা হবে, ততক্ষণ তুমি সতীসাবিত্রী, নির্মল কোমল হয়ে থাকবে। নির্যাতনের পর যদি তুমি গর্জে ওঠো তবেই সেই গর্জে ওঠাটা বৈধতা পায়। কিন্তু তুমি যদি প্রথম থেকেই তেজী রাগী ক্ষমতাবান ও শক্তিময়ী হও, দর্শক কিন্তু তোমাকে গ্রহণ করবে না।

তো একটা দীর্ঘ সময় নারীর এই কোমলতাই ছিল মূল পুঁজি। নারীর শরীর, সৌন্দর্য শুধু নয়, নারীর প্রতি ছুড়ে দেয়া সতীত্বের কনসেপ্ট, মানিয়ে চলার বাধ্যবাধকতা, আধো আধো বোলে কথা বলা আর মাথা নুইয়ে চলার রীতি, পুরুষের ওপর নির্ভরশীলতা, সংসার ও সন্তান নিয়ে চারদেয়ালের ভেতরে নিজেকে সুখী ভাবার চেতনাকেই প্রমোট করেছে ভারতীয় সিনেমা এবং সেইসাথে পুরো উপমহাদেশের তথা এশীয় অঞ্চলের সিনেমা। এইসব সিনেমায় নারীর দায়িত্ব নেয় পুরুষ, আর নারীর কাজ সন্তান জন্ম দেয়া ও নিজেকে সমাজের বেধে দেয়া রীতিতে চরিত্রবান রাখা। যে নারী চরিত্র এই দায়িত্ব পালন করে না, বা পারে না, সিনেমার শেষ দৃশ্যে তার পরিনতি হয় নেতিবাচক। হয় মৃত্যুতে অথবা নির্বাসনে। অথবা এই উপলব্ধিতে যে নারীর মূল ঠিকানা স্বামী সন্তান ও সংসার এবং সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে- এই আদিম চিন্তাধারার ভেতরে নিজেকে সেঁদিয়ে দিয়ে।

তো নব্বই দশক এবং তার পরেও বহুদিন চলেছে এই ট্রেন্ড। ২০০০’র পর যেসব সিনেমা তৈরি হয়েছে, ভারতে, সেসব সিনেমারও অধিকাংশ জুড়ে এই দর্শনই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর প্রতিটি সিনেমাতেই পুরুষ চরিত্র ক্ষমতাবান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অফিসের বস থেকে শুরু করে আন্ডারগ্রাউন্ডের ডন- সবাই পুরুষ। নারী তাদের আসরে সুরার পাত্র হাতে ঘুরে বেড়ানো মধুমক্ষী, অথবা বসের পিএস, অথবা সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করে সংসার চালিয়ে যাওয়া নিপীড়িত মা। শুধুমাত্র ধর্ষণ হলে, স্বামী বা সন্তান হত্যা হলেই সেই নারীরা গর্জে ওঠে, এবং তাদের প্রতিশোধসম্পৃহা হয়ে ওঠে নারীত্বের প্রতিশোধস্পৃহা, মা কালীর সাথে তুলনীয় নারীত্বের ভয়ংকর রূপই বাণিজ্য করার মূল পুঁজি হয়ে যায়। এদিক পশ্চিমের সিনেমায় ততদিনে কিন্তু বদলের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণেই শুধু নয়, পশ্চিমে নারীবাদের যে ঢেউ শক্তিশালী হয়ে উঠছিল বারবার এবং আঘাত হানছিল সমাজের সব স্তরে, সিনেমা জগতও তার বাইরে থাকতে পারেনি। ফলে পশ্চিমের সিনেমায় নারী লিডিং রোলে আসতে শুরু করে। নারীর ভূমিকা শুধু প্রেমিকা বা মাতৃত্বে নয়, তারা তখন ডাকসাইটে বিজনেস ম্যাগনেট, সফল পেশাজীবী, স্পাই, ডন এবং সাইন্স ফিকশন মুভিতে মহাকাশযানের মুল চালক বা ক্যাপ্টেনও নারী, পুরুষের মতই। ঘটনাটা হল, নারী নির্মাতাদের অবস্থান ততদিনে পশ্চিমে একটু পোক্ত হতে শুরু করেছে। শুধু নির্মাতা নন, চিত্রনাট্য লেখক, কারিগরী ও অন্যান্য বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণের জায়গাটিতে বহু নারী উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। চলচ্চিত্র ইতিহাসের শুরুতে নারীর যে ম্রিয়মান নিভৃতি, সেটা কাটতে শুরু করল। আবার যে পুরুষরা নির্মান করছেন বা চিত্রনাট্য লিখছেন, তাদের চিন্তার জগতও ফেমিনিস্ট চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করলো, কারণ ফেমিনিজম তখন পুরো সমাজকে নাড়া দিচ্ছে, জাগাচ্ছে, চোখ খুলছে। তো এটা ছিল অবশ্যম্ভাবী।

তো নারীকে দেখার চোখ, বা নারীকে উপস্থানের স্টাইল সেটা পাল্টাতে লাগলো। নারীর শক্তি মানুষের শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লাগলো, শুধু নারীত্বের শক্তি হিসেবে নয়। তো এই পরিবর্তণের ঢেউ অবশেষে ভারতের সিনেমাতেও আসতে শুরু করল। এশিয়ার সিনেমাতেও। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমাতেও। এবং বলা যায় গত ১০ থেকে ১৫ বছর হতে যাচ্ছে, ভারতীয় সিনেমায় ফেমিনিস্ট চিন্তার যে ঝড়টা এসেছে তা এখন বেশ পাকাপোক্ত আসন গেঁড়ে বসতে পেরেছে। ফলে এখন আমরা বলিউড থেকে পাচ্ছি পিংক, গিল্টি, থাপ্পড়ের মত সিনেমা, যা একেবারেই ফেমিনিস্ট চিন্তাধারাকে ধারণ ও প্রমোট করে, যা হয়তো কিছুদিন আগেই ছিল অকল্পনীয়। তার মাত্র কিছুদিন আগেও আমরা পেয়েছিলাম চাঁদনী বার, পেজ থ্রি, ফ্যাশন, কিংবা হিরোইন, যেখানে নারী চরিত্রকে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখতে চেয়েছেন নির্মাতা, কিন্তু শেষ অব্দি সবই পর্যবসিত হয়েছে সেই নারীশক্তি কনসেপ্টে। যেরকম কাহানি সিনেমাটিও সফল, কিন্তু সেখানে সাধারণ মেয়ের দৃঢ়তা আসে স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এবং সে প্রতিশোধ নেবার শক্তিকে দেখানো হয় সাধারণ নারীর গর্জে ওঠাকে মহিমান্বিত করতে।

বলিউডের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় পরিবর্তন এসেছে। বিষয়বৈচিত্র এসেছে। শুধু নারী নয়, ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনও এসেছে বাংলা সিনেমায়, এসেছে সমকামিতাও। পরকীয়া, বহুগামীতা ও লিভ টুগেদারকে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে। ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়, মৈনাক ভৌমিক, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়, শ্রীজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, কৌশিক গাঙ্গুলি- সবার প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে। তবে দেখুন, এখানেও সেই নেতৃত্বের বা মূল চিন্তার জায়গাটিতে নারীর সংখ্যা অপ্রতুল। এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নারীর অবস্থাকে তুলে ধরতে নারীকে আসতে হবে। নারীকে মূলস্রোতে তুলতে নারীর হাতও প্রয়োজন এবং সেটি একটু বেশিই প্রয়োজন। কিন্তু সংখ্যাটি হতাশাজনক। নারীবাদী সিনেমা আসছে, তবে বেশিরভাগই পুরুষের হাত দিয়ে। নারী নির্মাতা কম।

বলার দরকার, এই উপমহাদেশের সিনেমায় নারীবাদী কনসেপ্টকে নানা অ্যাঙ্গেলে উপস্থাপন জরুরি। সমাজে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণকারী ক্ষমতাবান নারীকে তুলে ধরা যেমন প্রয়োজন, তেমনি দরকার নারীর অবদমন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, নিগৃহ ও নির্যাতিত অবস্থা ও পরিস্থিতিও স্পষ্ট করে দেখানো। কারণ সমাজে যেহেতু নারীর অবস্থাটা এখন এমনই বহুমূখী, কিছু নারী লড়ছে, কিছু নারী নির্যাতন সইছে, কিছু নারী ইচ্ছের বিরুদ্ধে বেঁচে আছে, কিছু নারী চেষ্টা করছে, কিছু পারছে, কিছু নারী পারছে না- এর সবই বাস্তব ও সত্য। সিনেমার পর্দায় এই প্রত্যেকটি অবস্থানের নারীকেই তুলে আনা জরুরি এবং বাধ্যতামূলক। সামাজিক অসঙ্গতির একটা বিশাল জায়গা দখল করে আছে লিঙ্গ বৈষম্য। তাই নারী পুরুষ ও অন্য লিঙ্গের ভেতরে যে বৈষম্য ও সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার থেকে উদ্ভুত সমস্যাকে বাদ দিয়ে কখনো সমাজ বাস্তবতার সিনেমা নির্মান সম্ভব নয়। সেই সাহসের কাজটা সফলভাবে করেছেন ঋতুপর্ণ। তার এক একটা সিনেমা এক একটা ক্ষেপনাস্ত্রের মত আঘাত হেনেছে বাংলা সিনেমা জগতে। আবার নারীর প্রতি সমাজের এখনো বয়ে বেড়ানো দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্দরমহলে নারীর অবস্থানের প্রকৃত ক্লেদাক্ত চেহারাটা তুলে এনেছেন অপর্ণা সেন। এই যে ভারসাম্য করে এগিয়ে যাওয়া, এটি পেরেছে এবং পারছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমা জগত। যা একেবারেই পারেনি আমাদের এই বাংলাদেশের সিনেমা। পারেনি তো পারেইনি, এর ধারেকাছ দিয়েও যেতে পারেনি। কী তার কারণ?

এর একটা বড় কারণ মুক্ত পরিবেশ আপনার কল্পনাশক্তিকে পুষ্টি যোগাবে। আপনার চিন্তাকে শানিত করবে। আপনার চেতনা, জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তুলবে আধুনিক মুক্ত সমা্জব্যবস্থা। কিন্তু যখন সিনেমা নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও কলাকুশলীরা ক্রমাগত মৌলবাদ, উগ্রবাদ, মামলাতংক, সেন্সরশিপ, প্রযোজকের সাথে চিন্তাভাবনার বিস্তর তফাত, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ইত্যাদির সাথে লড়তে বাধ্য হন, তখন আসলে সিনেমার চিন্তা সেই শাবানার সেলাই মেশিনে আটকে যেতেই বাধ্য হয়। ফলে পারমিতার একদিন, চারুলতা, চিত্রাঙ্গদার মত সিনেমা হয়ে ওঠা অসম্ভবই হয়।

আবার মেধা, সৃজনশীলতা চর্চার অভাব এবং সিনেমাকে পৃষ্ঠপোষতা করতে চায় এমন উদারমনা প্রযোজকশূণ্যতাও রয়েছে। প্রচুর পড়াশোনার ঘাটতি আছে। আবার সিনেমা নিয়ে সরকারের কোন সঠিক চিন্তা, পরিকল্পনা নেই; উল্টো রয়েছে সেন্সরশিপের কড়াকড়ি, অশিক্ষিত সেন্সর বোর্ড এবং মামলার দুশ্চিন্তা। আধুনিক সিনেমা, ভবিষ্যতে সিনেমা কোন দিকে যাবে, যাওয়া উচিত সেসব নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই, তরুণদের যত্ন নেবার, গড়ে তুলবার মত মেন্টর নেই। যারা আছেন, তারা সেই সেকেলে ভুতগুলো ঘাড়ে করেই ঘুরছেন, শেখাবেন কী! শেষ পর্যন্ত তাদের সিনেমারই নায়িকা ব্লাউজ ছাড়া অভিনয় করলেই সেটাকে বলা হয় সাহসী সিনেমা। অথচ সাহসী সিনেমার সংজ্ঞাই বদলে গেছে বহু আগে, খোদ মেন্টররাই সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। মনের সংকীর্ণতা ও দৈন্য, বহির্জগতের সাথে সংযুক্তির অভাব, শেখার অনিচ্ছা ও নিতে পারার মানসিকতার অভাব আমাদের সিনেমা জগতকেও আঘাত করেছে, কোনঠাসা করে রেখেছে। বিকশিত হতে দেয়নি। এখনো সিনেমা জগত কিছু অশিক্ষিত রুচিহীন মানুষের কব্জায়, যারা নারী মানেই জানে ভোগ্যপণ্য, বিক্রির জিনিস। নারীর সামাজিক উচ্চ অবস্থান যাদের ঈর্ষাকাতর করে। নারীর সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে। এবং এটিও সত্য যে এই দলটির ভেতরে নারী ও পুরুষ সব রকম লিঙ্গের প্রতিনিধিই আছে। এখনো এদেশের নারী নির্মাতা, অভিনেতা অভিনেত্রী, কলাকুশলীদের অধিকাংশের নারীবাদ সম্পর্কে প্রকৃত কোনো শিক্ষাই ভেতরে তৈরি হয়নি। তাদের লেখাপড়ার অবস্থাও অত্যন্ত দীনহীন করুণ। তাই চিন্তাচেতনার কোনো উৎকর্ষও ঘটেনি। স্থবির হয়ে আছে। ফলে তাদের সাজ পোশাক থেকে শুরু করে জীবনযাপনও বারবার নারীর সম্মানজনক সহাবস্থান দর্শণের সাথে ধাক্কা খায়। এখনো আমরা সুশিক্ষিত অভিনেতা অভিনেত্রীর অপেক্ষায় কালাতিপাত করি, কিন্তু বারবার নিরাশ হতে হয়, এবং এই নিরাশা  আমাদের আরো বহুকাল ভোগাবে বলেই মনে করি।

এবারের বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেতা সেরা অভিনেত্রী বলে কোন ক্যাটাগরি থাকছে না। থাকবে শুধু সেরা অভিনেতা। নারী ও পুরুষ দুজনেই এই ক্যাটাগরিতে পড়বেন। পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ অবলুপ্তির সংগ্রাম চলছে। সেই সময়ে এসে আমরা এই বাংলাদেশের সিনেমা জগৎ আসলে কোন অন্ধকারে পড়ে আছি মৃতপ্রায় মাকড়সার মত, সেটি ভেবে দেখবার মানুষও কি আছে?