November 21, 2024
অনুবাদসাহিত্যফিচার ৩

যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হঠাৎ সরব পুরুষদের জন্য কিছু টিপস

আমেরিকান লেখক ফেমিনিস্ট জেসিকা ভ্যালেন্তির Tips for Men Who Suddenly Care About Sexual Assault শিরোনামের এই লেখাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করে দেয়া হল।। 

এটা একটি দারুণ খবর যে- অবশেষে নারীদের সঙ্গে ঘটা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতাগুলো আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনকে নিয়ে সম্প্রতি যে সংবাদের প্রবাহ শুরু হয়েছে তা দেখে অনেক পুরুষ গর্ত থেকে বের হয়ে এসেছেন ও টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে সরব হয়েছেন। এদের অনেকেই কিছু দিন আগেও এসব ইস্যুতে কোনো সময় দেননি। অনেকেই কিছুদিন আগেও নারীদের যে কোনো যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ নারীদের পক্ষেও কথা বলেছেন।

যদিও আপনি এখানে শুধু জো বাইডেনের খবরগুলো দেখার পরই এসেছেন, তবুও অনেক নারী যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন, আমরা আপনাকে এখানে দেখে খুশি। তবে এসব বিষয় বুঝতে আপনার এত দিন সময় লাগলো জেনে আমরা কিছুটা বিরক্ত বটে।

আপনি নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন তাই আপনার প্রতি এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো—

• ধরে নিলাম যা বলছেন সে সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই আপনার। আসলে এ মুহূর্তে একজন নারীবাদী বা যৌন নিপীড়নবিরোধী বিশেষজ্ঞ হওয়ার সবচেয়ে হতাশাজনক দিকটি হলো- ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী কোনো বিশেষ ধারণা ছাড়াই অনেক পণ্ডিত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিডিয়ায় নিয়মিত কথা বলছেন ও লিখছেন। আপনাকে জানাতে চাই, এরকম পণ্ডিতদের বাইরে বহু লোক আছেন যারা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কাজ করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা সম্ভবত এসব ব্যাপারে আপনাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান রাখেন।

• আমি জানি এটি হয়ত কঠিন, কিন্তু একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার অর্থ হলো সব নিপীড়নের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। আপনার রাজনৈতিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পছন্দমত ঘটনা বাছাই করতে পারেন না। তাই যদি বাইডেনকে নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে এখন উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন তবে এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে অভিযোগগুলোর ব্যাপারেও আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। নারীদের ইস্যুকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে মনে করা যাবে না।

• নারী সহিংসতার ব্যাপারে আপনার নতুন আগ্রহকে ‘খাইছি তরে’ হিসেবে মনে করবেন না। উদাহরণ স্বরূপ— আপনি যদি তারা রিডের অভিযোগ বিশ্বাস করেন তবে যেসব নারী জো বাইডেনকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন তাদের বিদ্রূপ-সমালোচনা করতে যাবেন না। এই সমাজে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভালো করেই জানে, আরেক দফা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির অর্থ কী। তারা সবসময়ই কম ক্ষতিকর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকেন। নারীদের যৌন নিপীড়নের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা আপনাদের রাজনৈতিক কোনো কৌশল নয়।

• পুরুষদের আচরণের জন্য নারীরা দায়ী এরকম ধারণা প্রতিহত করুন। যখন ক্ষমতাধর পুরুষের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলছেন, তখন তার আশেপাশের নারীদেরকে এর জবাব দেওয়ার জন্য কি আপনি খুঁজে খুঁজে হয়রান? আপনি কি আশা করছেন ওই পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নারী সহকর্মী বা স্ত্রীকে কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করবে এখন তার কেমন লাগছে? জেনে রাখুন- যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সকল ক্ষমতা শুধু নারীদের হাতে একা নয়। এবং নারীরা কোনো পুরুষের আচরণের জন্যও দায়ী নয়।

• বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপর জোর দিন। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন শুধু কিছু সময়ের জন্য উদ্বেগের বিষয় নয়, যখন এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান হবে, আমি আশা করি আপনি তখনও এ ব্যাপারে কথা বলবেন।  যেসব সংগঠন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে এসব কোনো সংগঠনে কিছু টাকা অনুদান হিসেবে দিতে পারেন। আপনার এলাকায় যদি ধর্ষণবিরোধী কোনো সংস্থা থাকে তবে তাদের জিজ্ঞেস করুন আপনি তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন।