কফিনে বন্দি কুলসুমের লাশ: কোনো বিচারই কি হবে না?
আঞ্জুমান রোজী।। কিশোরী কুলসুমের স্বপ্ন কফিন বন্দী হয়ে তার লাশের সঙ্গে ফিরে এলো। গৃহপরিচারিকা হিসেবে সৌদি আরব গিয়েছিল সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। সেখানে গৃহকর্তা ও তার ছেলে মিলে তাকে ধর্ষণ করে, কুলসুমের দুই হাঁটু, কোমর ও পা ভেঙে দেয়। শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরতে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে কুলসুমকে।
এভাবে আর কত কুলসুমেরা লাশ হয়ে দেশে ফিরবে? সউদি আরবে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় অনেককেই ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে তারা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৷ এসবের আইনি প্রতিকার কী?
প্রবাসে যেসব বাংলাদেশি নারী কাজ করেন তাঁদের জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। একটিই আইন আছে বাংলাদেশে। ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক আইন। এই আইনে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্টদের ধরা যায়, কিন্তু সৌদি আরবে নির্যাতনের কোনো প্রতিকার করা যায় না। আইন অনুযায়ী, কেউ যদি প্রতারণার শিকার হন, শর্তভঙ্গ হয়, নির্যাতিত হন, তাহলে দায়িত্ব হলো রিক্রুটিং এজেন্সির। এখানে সাজা ও ক্ষতিপুরণের বিধান আছে৷ তবে এই আইনের বিধিগুলো অস্পষ্ট। যদি কেউ নির্যাতনের বা প্রতারণার অভিযোগ করে, তাহলে নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে। আরেকটি আইন আছে ২০১৭ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ আইন। সেটাও এখানকার জন্য।
আরবে যে সমস্ত নারীরা যান, তাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে বাসাবাড়িতে কাজ করেন। এই ক্ষেত্রটিই সমস্যার, কারণ সেখানে যদি নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে তা গৃহকর্তার দ্বারাই হন। সৌদি আইনে গৃহকর্তাকে বিশেষ অধিকার দেয়া আছে। সেখানে বিদেশ থেকে যাওয়া গৃহকর্মীদের প্রটেকশনের কোনো আইন নেই।
জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নেই। পাঠানো হয় সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে। স্মারকেও দুর্বলতা আছে। যদি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এটা আরেকটু শক্ত করা যেতে যে ওখানে গিয়ে কোনো নারী যদি নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে যেন ওখানকার আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেটাও করা হয়নি। আর নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো নারী যখন এমন অবস্থায় উপনীত হয়, ওই দেশ ছেড়ে আসতে পারলেই সে তখন বেঁচে যান। আর ওখানে সে থাকবেই বা কীভাবে। যদি মামলা করেও, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা কোথায়? তাছাড়া আমাদের যে আইন আছে তাতে বিএমইটি হয়তো ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে পারে, কিন্তু নির্যাতনের বিচার তো করতে পারে না।
এই অবস্থায় গরীব অসহায় মানুষগুলো ভাগ্যান্বেষনে বিদেশ পাড়ি দেয়। তারপর নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছে। সংসারের অভাব দূর করতে কিশোরী উম্মে কুলসুমকে (১৪) সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। বেতনের পরিবর্তে নির্যাতনের শিকার হয়ে সেই দেশের হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কিশোরী কুলসুম। অবশেষে লাশ হয়ে দেশে ফিরল এই কিশোরী।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম/ মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]