November 2, 2024
সম্পাদকীয়

‘জনপ্রিয়’ হচ্ছে গণধর্ষণ আর ভিডিও করাটা লাভজনক

শারমিন শামস্।। দেশটা কি তাহলে পুরুষের? দেশটা কি তাহলে শিশ্নসর্বস্ব, লালসাকাতর, ভোগী লোভী নোংরা ধর্ষকের? নারীর আবাস কি তাহলে উঠিয়েই দিতে হবে এই বঙ্গভূমি থেকে? চিরতরে? সরকার কী চায়? রাষ্ট্র কী চায়? সমাজ কী চায়? পুরুষসর্বস্ব অশ্লীলতা প্রতিষ্ঠা করতে? রাষ্ট্র কি চায় এমন এক বিচার ব্যবস্থা ধরে রাখতে যেখানে ধর্ষণের বিচার পেতে গড়িয়ে যায় যুগ? ডিজিটাল বাংলাদেশ কি চায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে গণধর্ষণের শিকার একটা মেয়েকে নগ্ন করে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আল্লাদে গড়াগড়ি খেতে? এই তাহলে ভাইরাল? উন্নত বাংলাদেশে গণধর্ষণের শিকার মেয়ের নগ্নতাই সবচেয়ে ভালো চলে? তাই তো?

ছিঃ!

ঘেন্না। ঘেন্না। ঘেন্না। একরাশ ঘেন্না। নারীর প্রতি এতটা জিঘাংসা কোথায় লুকিয়ে রাখে সমাজ? আদৌ কি রাখে? রাখার প্রয়োজন কি হয় কারু? সব তো প্রকাশ্যেই নারীকে ঘেন্না করছে। সুযোগ পেলেই নগ্ন করে ধর্ষণ করছে। আজকাল সবচেয়ে জনপ্রিয় হল গণধর্ষণ। একা একা ধর্ষণ করে আর মজা পাচ্ছে না পুরুষেরা। তারা ভাই ভায়রা সম্বন্ধি জামাই শ্বশুর বন্ধু প্রেমিক মামা চাচা মামাত ভাই চাচাত ভাই সহকর্মী জনতা সব মিলে মিশে দল বেঁধে একটা মেয়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। সারারাত ধরে ধর্ষণ করছে। তারপর সবচেয়ে হিট আইটেম হল সব কিছু ভিডিও করে ফেলা। ধর্ষণের দৃশ্য আরো মুখরোচক। এটা হল তাদের জন্য যারা সুযোগের অভাবে ধর্ষণ করতে পারেনি, তারা অবসরে বিনোদন হিসেবে দেখতে পারবে। কি দারুন, তাই না? বাপের ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে দেখে হস্তমৈথুন করবে ছেলে। ছেলের ভিডিও দেখে বিমলানন্দ নেবে বাপ। কি সুন্দর এক সমাজ গড়ে উঠেছে।

নোয়াখালিতে যে নারীকে গণর্ষণ করা হয়েছে, যাকে গণধর্ষণের পর নগ্ন করে অমানবিক বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে, যাকে অত্যাচার করার দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে, সেই সমাজ কি কোনো সভ্য সমাজ? এই সমাজটা পাবার জন্য একাত্তরে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম ধর্ষক পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে? সেই ধর্ষকদের সাথে এই দেশি ধর্ষকদের পার্থক্য কোথায়? তারা তো ভিনদেশি ধর্ষক ছিল। এরা তো প্রতিবেশি, একই দেশ একই গ্রামের লোক। একজন নারীর প্রতি কী বীভৎস জিঘাংসা নিয়ে এরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে! এর শেষ কোথায়? এই ধর্ষণমুখী সমাজের শেষ কীভাবে হবে? কীভাবে প্রায়শ্চিত্ত হবে? কীভাবে ‍মুক্তি মিলবে?

কেউ কি জানেন? আমি জানি না….