জনপ্রতিনিধিদেরই দায় নিতে হবে, কারণ তারাই দায়ী
লিহান লিমা।। অপরাধীর কোনো দল নেই শব্দটি বলা খুব সহজ। কিন্তু অপরাধ যারা করছে তারা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের শক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ছত্রছায়ায় অপরাধীদের মদদ দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মাদকের কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোর-তরুণদের হাতে তারা মাদক তুলে দিচ্ছেন। নয়ন বন্ডরা তৈরি হচ্ছে, দেলোয়ার বাহিনী বানানো হচ্ছে। কিছু ঘটনা যা মিডিয়াতে আসছে তা আলোচিত হচ্ছে, বাকিগুলো চাপা পড়ছে স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার বেড়াজালে ।
চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ক্যাডার বাহিনী প্রয়োজন, বাইক শোভাযাত্রার জন্য ছেলেপেলে প্রয়োজন। এই ছেলেপেলেদের তারা পেলে-পুলে লালন করছেন, যারা স্থানীয় জনগণের ভীতি ও ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে। প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আজ্ঞার দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ক্ষমতার কাছে পুলিশ বাহিনীর নতি স্বীকার ও বিচারবিভাগীয় ব্যর্থতা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ডেকে এনেছে। অন্ধকারের ক্ষমতার চর্চা করা রাজনৈতিক নেতারা শুধু রাজনীতিকে কলুষিত করছেন না, তারা সমাজকে নরক বানিয়েছেন। এই মানসিকতার কারণে এর চরম শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকে ক্ষমতা, বাহাদুরি ও প্রতিশোধস্পৃহার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক আলোচনায় আসা ঘটনাগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের নাম উঠে এসেছে। কারণ স্পষ্ট, যখন যারা ক্ষমতায় থাকছেন কর্মীদের অবাধ সুযোগ ও ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রনেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদেরকেই এই দায় নিতে হবে, কারণ ক্ষমতার এই অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য তারাই দায়ী।
একটি ঘটনা ঘটার পর যতদিন মিডিয়ার লাইমলাইট না আসছে, উপর মহল থেকে তদন্তের নির্দেশে দেয়া না হচ্ছে ততদিন তা ফ্রোজেন হয়ে থাকছে। বাংলাদেশের বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি, এখানে আইন উপর মহলের নির্দেশ ব্যতীত কখনোই সামনে এগোয় নি। শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ- তিনটিই স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রভাবশালী মহলের কাছে কুক্ষিগত করা হয়েছে। মিডিয়ার দৌলতে কিছু অপরাধী হয়তো শাস্তি পাচ্ছে, কিন্তু যারা তাদের অপরাধী বানিয়েছেন তারা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। যতদিন অপরাধী বানানোর এই কারিগররা থাকবেন, যতদিন ‘আমার ভাই, তোমার ভাই’ স্লোগান দেয়ার জন্য তাদের কিশোর, তরুণ ও যুবকদের প্রয়োজন হবে, ততদিন এই অপরাধীদের জন্ম হতে থাকবে। ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’ বুলি আওড়ানোর চেয়ে এর কার্যকরী প্রয়োগ অনেক বেশি প্রয়োজন।
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]