December 23, 2024
সম্পাদকীয়

সমতা ও মানবতার লড়াইয়ে ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর সঙ্গে আছে

শারমিন শামস্।। জেগে উঠেছে মানুষ। নারী ও পুরুষ। দীর্ঘকালের নারী অধিকার ও নারীবাদ আন্দোলন আস্তে আস্তে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে এদেশেও। তরুণ প্রজন্ম অবশেষে লিঙ্গ বৈষম্য ও লৈঙ্গিক নিপীড়নের স্বরূপ উদঘাটন করতে শুরু করেছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছে পিতৃতন্ত্রের ষড়যন্ত্রগুলোকে। যে যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে নারীবাদ, পুরুষতন্ত্রের অপকৌশলের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে শত শত বছর ধরে, আজকের বাংলাদেশের তরুণরা সেই লড়াইয়ের হাত ধরতে পেরেছে। পুরুষতন্ত্রের ছায়ার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাজনীতি, ক্ষমতার নোংরামি আর মানুষকে পীড়নের অপচর্চার প্রতি আঙুল তুলেছে তারা, প্রতিবাদ জানিয়েছে, জানাচ্ছে এবং প্রতিকার দাবি করছে।

শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে। সমাজ নিয়ে যে তীব্র হতাশা আমাদের ভীত, শঙ্কিত, বেদনার্ত করে, যে নিরাপত্তাহীনতা আর বিচারহীনতার বোধ আমাদেরকে ক্রমশ গুটিয়ে নিতে বাধ্য করে নিজেকে, সব প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের পথে বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দেয়, সেই বোধের সামনে নতুন আলোর দরোজা খুলে দিয়েছে নতুন ছেলেমেয়েরা। সত্যিকার তরুণের মত জ্বলে উঠেছে তারা, গর্জে উঠেছে। প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়েছে তারা সারাদেশে।

শাহবাগের আন্দোলনের রেশ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়েছে। এটি একটি আশার কথা। তরুণরা ঢাকায় আবদ্ধ হয়ে থাকেনি। তারা নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে, জোটবদ্ধ হচ্ছে, সবাইকে এক সুতোয় গাঁথছে। এটি অবশ্যই আমাদের শক্তি যোগায়। যে নোয়াখালির ঘটনা থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত, সেই নোয়াখালির দিকে এবার লংমার্চের আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবারে। সকাল ৯ টায় শাহবাগে লংমার্চের উদ্দেশ্যে গণ-জয়ায়েত, শাহবাগে প্রেস ব্রিফিং করে গুলিস্তান পর্যন্ত মিছিল/পদযাত্রা এবং সংহতি বিবৃতি পাঠ করবে তারা। এরপর চাষাড়া- সোনারগাঁও – চান্দিনা – কুমিল্লা- ফেনি- চৌমহন, এখলাসপুর, মাইসজদি সহ প্রত্যেক প্রধান বাস স্টপেজে সংহতি সমাবেশ এবং জণগণের সাথে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গণ সংযোগ, এবং সব শেষে নির্যাতিতা নারীর সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর লড়াইয়ে সবার সংহতিজ্ঞাপন।

চমৎকার আয়োজন। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর তরুণ প্রজন্মের এই সংগ্রামী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে এবং এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে। বৈষম্য, অসমতা, নিপীড়ণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ছড়িয়ে যাক সারাদেশে। এর প্রতিটি যাত্রাপথে ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর সাথে থাকবে। কারণ সমতাপূর্ণ ও বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের সংগ্রাম চলছে, চলবে।

আন্দোলন আরো তীব্র হোক, সকল শোষকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক মানবিক মানুষ। নারীর প্রতি পুরুষের অবৈধ ক্ষমতার বিনাশ ঘটুক। নারী, পুরুষ ও সকল লিঙ্গের মধ্যে সমতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা হোক।

ভালোবাসা সবাইকে।