November 22, 2024
মুক্তমত

ধর্ষণবিরোধী লং মার্চ এবং আমাদের ভাবনা

সাদিয়া মেহজাবিন।। ধর্ষণ একটি মানসিক ব্যাধি। আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিডিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্ষণ নিয়ে খবর পড়ে এখন আর চোখ কপালে তোলার সময় নেই। জনতা জেগে উঠেছে। সোচ্চার জনতার এই স্লোগানের শেষ কোথায়? মুক্তিতে! তবে কীসের মুক্তি? এই পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্তি! যারা ভাবছেন কেবল বেগমগঞ্জের ঘটনা ফাঁস হওয়াতে সবাই উন্মাদ হয়েছে তারা দয়া করে ইতিহাস ঘেটে, মগজ ঘেঁটে, ঘরের মা বোনদের মুখের সত্য বাণী শুনে তারপর আলোচনায় আসবেন।

পুরুষতন্ত্র মেয়েদের মানসিক শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে অনেক বছর ধরে। তবে সময়ের মাথা ভেঙ্গে জনতা এখন রাজপথে। সারাদেশ ব্যাপি চলছে প্রতিবাদ সমাবেশ, সাংস্কৃতিক আন্দোলন। লং মার্চ বর্তমানে সকলের ঐক্যবদ্ধ এক স্লোগানমুখর এগিয়ে যাওয়া যা টনক নড়িয়েছে সকলের। সদ্য হয়ে যাওয়া এই লং মার্চ কতদূর ফলপ্রসূ তার জবাব জানতে চাওয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। আপনারা কি জানতেন না এই শাসন ব্যবস্থায় সুনিশ্চিত বিচার পাওয়া সম্ভব নয়!

প্রত্যেকের মত আমিও একজন প্রতিবাদী জনগণ ছিলাম। সময়ের চাহিদায় এই প্রথম লং মার্চে যাওয়া হয় আমার। ঢাকা থেকে আসা আন্দোলনকারীদের সাথে ফেনীতে যুক্ত হব। ফেনী শহীদ মিনারে আগে থেকে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হই আমরা। যাবার কিছু সময় পর খেয়াল করি আন্দোলনকারীদের একজনের গায়ে পুলিশ হাত দেওয়াতে হালকা তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। বারবার কানে আসছে, আপনাদের উপর হামলা হতে পারে! এর অর্থ দাঁড়ায় পুলিশবাহিনী আগে থেকে অবগত। তাহলে এই বিশাল বাহিনীকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা আগে করা উচিত ছিল!

শহীদ মিনার থেকে আমরা পথ যাত্রা শুরু করি! তবে সত্যকে দমন করতে অথবা পুরুষতন্ত্রের জয় নিশ্চিত করতে মিছিলের সর্ব পিছন থেকে হামলা করে ছাত্রলীগের ছেলেরা! প্রশ্ন করুন কীভাবে নিশ্চিত হয়েছি তারা ছাত্রলীগ? যেহেতু ঘটনার সূত্রপাত তাদের নেতাকেন্দ্রিক এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। আপনাদের প্রশ্ন আমাদের উজ্জীবিত করে।

সরকারবিরোধী স্লোগান কেন?

ন্যায় বিচার করার ক্ষমতার আসনে কে আছে? একটি দেশে ন্যায়বিচার হচ্ছে নাকি না তা দেখার দায়ভার কার? তাই বলে এভাবে হামলা? কেন? আমরা পূর্ব নির্ধারিত স্থানে আমাদের কর্মসূচী পালন করতে বাসে ওঠার পরই দাগনভূইয়াঁতে আমাদের উপর হামলা হয়! হামলাতে আমাদের বাসের কাঁচ ভেঙ্গে ফেলা হয়। পিছনের গাড়িবহরের উপর হামলায় প্রায় ১৫ জনের বেশি আহত হয়। আমাদের বাসে থাকা রিপা দিদির মাথায় কাঁচ লেগে রক্তাক্ত হন তিনি। কেবল তা নয় বাকিদের শরীরে কাঁচের গুড়োতে ভেসে যায়! আমাদের দোষ? সত্যের প্রচার এবং এই পুরুষতন্ত্রের বিরোধীতা? বেগমগঞ্জসহ আরো স্থানে কর্মসূচী করার কথা থাকলেও তা আমাদের করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বারবার আমাদের চলে যেতে বলছে। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে নেওয়াতে আমরা সরাসরি শহীদ মিনারে চলে যাই। সেখানেও সাধারণ জনতাকে লং মার্চে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। লং মার্চ ক্ষত বিক্ষত সমাপনী অনুষ্ঠান করে। সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়।

কারা এই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে? যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পুরুষ তার লিঙ্গের জোরে এই সমাজকে চালাবে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের গায়ে হাত দেবে, যারা সেক্স কনসেন্টকে সমর্থন করে না কেবলই তারা। আপনারা কি মনে করেন ধর্ষক কেবল একদিনে সৃষ্টি হয়?

পুরুষতন্ত্রের ফসল এই সমাজ। যেখানে আপনার অনুমতি ছাড়াই শরীরকে বিবস্ত্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া যাবে সম্পূর্ণ ভিডিও। ইতিহাসের আড়ালে ঢেকে দেওয়া যাবে যৌন হয়রানি। আপনার আমার ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করে আমি হতাশ হই। হতাশা গ্রাস করে আমাদের মন, মস্তিষ্কে।

কেউ কেউ বলছে এই লং মার্চ নাকি পিকনিক স্বরূপ। তাহলে লং মার্চের ইতিহাস আপনাদের জানা নেই। কিছু মানুষের প্রশ্ন তোমরা কি জানতে না হামলা হবে? মানে আমাদের মস্তিষ্ক মেনে নিয়েছে সত্যের উপর হামলা সে তো নিত্য কথা, নতুন কিছু বলো এবার। হামলা করে পুরুষতন্ত্রের এই জোর হাত যাদের উপর দিয়েছেন তাদের কিন্তু হাতে কলম আছে। এই কথা যারা ভুলে যায় তারা অন্ধ! পুরুষতন্ত্রের অবসান জরুরি, সময়ের দাবী! পুরুষতন্ত্র নিপাক যাক!

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]