মেরুদণ্ডহীন নারী: এরা এমন কেন?
আঞ্জুমান রোজী।। পুরুষ জানে নারীকে কিভাবে ভোলাতে হয়৷ এই কাজে তাদের কারিশমার কোনো তুলনা নেই। যতই তারা আকাম-কুকাম, নির্যাতন, অত্যাচার করুক না কেন, ঘরে এসে বউকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দামী দামী উপহার দিয়ে, বুকে নিয়ে এমনভাবে আদর করবে যে, নারী তখন মনে করে এটাই তার শেষ আশ্রয়। তাদের কথায় অনবরত মধু ঝরতে থাকে। আদরে আহ্লাদে নারীকে কবির কল্পনার মতো প্রেয়সী বানিয়ে ছাড়ে, যতক্ষণ না নারীটি পুরুষটির অত্যাচারের কথা ভুলে যায়, ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত এমন মেনিপুলেশন চলতে থাকে। অধিকাংশ নারী পুরুষের এমন গদগদ ভাবে বিগলিত হয়ে ওঠে। তাৎক্ষণিক ভুলে যায় সব অত্যাচারের কথা। ভাবে, ‘আহা, এই তো আমার স্বপ্নপুরুষ।’ আর এই স্বপ্নপুরুষ যখন হায়ানার রূপ নেয় তখন চারদিকে অন্ধকার দেখতে থাকে।
আমার চোখের সামনে এমন অনেক নারীর ঘটনা ঘটতে দেখেছি। দেখেছি ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে। তারপরও তারা সেইসব পুরুষের বাহুলগ্ন হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। নারী যে পুরুষের হাতের ক্রীড়নক, তা নারীরাই বুঝিয়ে দেয়। নান্নামুন্না হয়ে পুরুষের বুকে লেপ্টে থাকে, যতই তারা লাত্থি গুতা খাক না কেন!? হয়তো এক্ষেত্রে অনেকেই বলবেন, অবশ্য পুরুষ সকলেই বলবেন, ‘এটা স্বামী-স্ত্রীর বিষয়, এখানে বাইরের মানুষের নাক না গলানোই উচিৎ।’ কথা এক অর্থে ঠিক। কিন্তু যখন ঘটনা স্ত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায় তখন এইসব পুরুষ সকলের ভাব-গতিক কি হয় খুব জানতে ইচ্ছে করে। নাকি স্ত্রীকে মেরে ফেলার অধিকারও পুরুষের আছে!?
অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীদের না হয় বিবেচনায় আনা যায়, কিন্তু শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত নারী কেন এমন অত্যাচার সহ্য করে? কেন তাকে শত অত্যাচার সহ্য করেও স্বামীর অধীনে থাকতে হবে? লক্ষ্য করেছি, বেশিরভাগ নারী সমাজ, সংসার এবং ধর্মকে ভয় পায়। এমনকি জীবন শেষ হয়ে গেলেও মাথা নত করে সব মেনে নেবে। সমাজ কী বলবে, যদি আমার জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে? আবার অনেক ফ্যামিলিও আছে, বিয়ের পর মেয়েদের পাশে থাকে না। সবসময় বলে যাবে, ‘বিয়ে হয়েছে মানিয়ে নাও।’ ধিক্ সে সমস্ত ফ্যামিলিগুলাকে। এরা মেয়ের জন্মকে তাদের পাপ বলে ধরে নেয়। জঘন্য তাদের মানসিকতা!
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার স্ট্রাকচার আর কবে বদলাবে? ভুক্তভোগী নারীগুলো যদি জেগে না ওঠে কীভাবে এই সমাজ পরিবর্তন হবে? বিশেষ করে শিক্ষিত ভিক্টিম নারীদের কথা বলি, এরা কেন এমন অবুঝের মতো কাজ করে? এখন নারীর পাশে নারী দাঁড়াচ্ছে। নারীর কষ্টগুলোকে অনুধাবন করার চেষ্টা করছে। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য এক নারী তার সময়, শ্রম, কখনো কখনো অর্থ দিয়ে ভিক্টিম নারীকে সাহায্য করছে, আবার মাথা উঁচু করে চলার সবরকম শক্তি, সাহস যোগাচ্ছে। অথচ দিনশেষে দেখি সেই ভিক্টিম নারীটি অন্ধকারকেই ভালোবেসে ফিরে যায় গুহাতে। মাঝে মাঝে মাথায় বাজ পড়ে এমন ঘটনা দেখে। মিলাতে পারি না কোনো কিছু৷ এটা কি নারীর প্রকৃতি? নারী কি এভাবেই নিজের জীবনকে বাজী রেখে চলবে? আসলে, অনেক কিছু এখনো বুঝি না।
নারীর আত্মসম্মান বোধটাই হলো চলার পথের শক্তি। সেই শক্তিই যখন শিক্ষিত নারীর মধ্যে থাকে না, তখন কোনো কিছুতেই এদের জাগানো সম্ভব নয়। এসব মারখাওয়া আবাল শ্রেণির নারীই হলো নারীর অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায়। অবশ্য এটাও বলতে হয়, অধিকাংশ পুরুষও চায় না, নারী আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনির্ভরশীল হোক। তাহলে নারীকে নিয়ে তো ইচ্ছেমতো খেলতে পারবে না!
এসব ক্ষেত্রে কিছুই বলার থাকে না । আমাকে অনেকে বলেন, আমি নারী নিয়ে এতো মাথা ঘামাই কেন? আমার কাজ নাকি শুধু সাহিত্য নিয়ে কাজ করা! কেন? নারী কি সাহিত্যের অংশ না? তাছাড়া,আমি নিজে নারী। নারীর অনুভূতি আমার রন্ধ্রে, রন্ধ্রে। নারীর জীবন কেমন, তা একমাত্র নারীই বোঝে। কোনো নারীর কষ্ট দেখে আমার ভেতর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়। অনেক কথা তো বলি না। তারপরেও যখন আর সহ্য হয় না, তখন এভাবে লিখে নিজেকে প্রকাশ করি। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু মেরুদণ্ডহীন নারীর জন্য স্থবির হয়ে যাই। এসব নারী কি কাদামাটির দলা যে, যেভাবে খুশি ঠিক সেভাবেই দলাইমলাই করে ব্যবহার করা যায়? এরা কি কখনো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে না? এরা এমন কেন?
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]