পুঁজিবাদ এবং নারী শ্রম
মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন CAPITALISM AND FEMALE LABOUR শীর্ষক প্রবন্ধটি রচনা করেন ১৯১৩ সালের ২৭ এপ্রিল (১০ মে)। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য প্রবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন ফাতিন ইশরাক।।
বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ দারিদ্র্য এবং শোষণের অজস্র ঘটনা আড়াল করে যা সরাসরি আমাদের নজরে আসে না। সবচেয়ে ভালো সময়েও শহরের দরিদ্র মানুষ, কারিগর, শ্রমিক, কর্মচারী এবং ক্ষুদ্র শ্রমজীবীদের বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলো প্রচন্ড অসুবিধার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে, কোন মতে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। এসব পরিবারের লক্ষাধিক নারী “গৃহপালিত দাস” হিসেবে বেঁচে থাকে; নিজেদের শ্রম ব্যতীত যাবতীয় সবকিছু থেকে “সঞ্চয়” করে এবং দৈনন্দিন সংগ্রাম করেও নিজেদের পরিবারকে খাদ্য এবং বস্ত্রের যোগান দিতে হিমশিম খায়।
পুঁজিপতিরা নারীদেরকে মূলত গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে চায়, কেননা তারা স্বল্প মজুরীর বিনিময়ে নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের জন্য, এক বেলার রুটির জন্য “সামান্য অতিরিক্ত উপার্জন” করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন দেশের পুঁজিপতিরা এসব নারীর মধ্য থেকেই নিজেদের জন্য “যথাযথ” দামে উপপত্নী নিয়োগ দেয় (আদিম দাস মালিক এবং মধ্যযুগীয় সামন্ত প্রভুদের মত)। পতিতাবৃত্তি বিষয়ক কোন প্রকার “নৈতিক ক্রোধ”ই নারী মাংসের এই ব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না; যতদিন মজুরী দাসত্ব থাকবে, ততদিন পতিতাবৃত্তি থাকবে। মানব সমাজের ইতিহাসে সকল নিপীড়িত এবং শোষিত শ্রেণিকে সর্বদাই শোষক শ্রেণির কাছে প্রথমত তাদের অপরিশোধিত শ্রম এবং দ্বিতীয়ত, “মালিক”দের কাছে নারীদের উপপত্নী হিসেবে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে (এক্ষেত্রে তাদের শোষণই কেবল ধ্রুবক ছিল)।
দাসপ্রথা, সামন্ততন্ত্র এবং পুঁজিবাদ এক্ষেত্রে একই রকম আচরণ করেছে। শোষণের রূপ বদলায় কিন্তু শোষণ থেকে যায়।
“ঘরে শোষিত নারী”র ওপর কাজের একটি প্রদর্শনী “পৃথিবীর রাজধানী” এবং সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু প্যারিসে শুরু হয়েছে।
প্রত্যেকটি প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে নারী ঘরে কাজ করে কী রকম উপার্জন করে এবং একই কাজ বাইরে করলে প্রতি ঘণ্টা এবং প্রতিদিন কী রকম উপার্জন করতে পারবে।
এবং আমরা কী পেলাম? এমন একটি প্রবন্ধও পাওয়া যাবে না, যেখানে আমরা দেখব যে নারীরা ঘরে ১.২৫ ফ্রাংক (ফ্রাংক হল তৎকালীন ফ্রান্স এর মুদ্রা; তখন ১.২৫ ফ্রাংক এর মুদ্রামূল্য ২.৪৩ টাকার সমান – অনুবাদক) তথা ৫০ কোপেক (তৎকালীন সোভিয়েত মুদ্রা – অনুবাদক) এর চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারে। যদিও বেশিরভাগ চাকুরির উপার্জন আরও কম। ল্যাম্পশেড নেন। এর মূল্য ডজন প্রতি ৪ কোপেক। বা, যেখানে ঘণ্টা প্রতি উপার্জন ৬ কোপেক, হাজার প্রতি পেপার ব্যাগ ১৫ কোপেক। ছোট খেলনা- প্রতি ঘণ্টায় ২.৫ কোপেক। কৃত্রিম ফুল- প্রতি ঘণ্টায় ২ বা ৩ কোপেক। নারী পুরুষের অন্তর্বাস- প্রতি ঘণ্টায় ২ থেকে ৬ কোপেক। এবং এর কোন শেষ নেই।
আমাদের শ্রমিক সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন এরকম প্রদর্শনী আয়োজন করতে চায়। প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুর্জোয়াদের জন্য এটি ব্যাপক মুনাফা উৎপন্ন করবে না। প্রলেতারিয়েত নারীর দারিদ্র্য এবং অভাবের প্রদর্শনী ভিন্নধর্মী মুনাফা নিয়ে আসবে; এটি মজুরী দাস, নারী পুরুষ উভয়কে নিজেদের অবস্থা বুঝতে, নিজেদের “জীবন” সম্পর্কে ভাবতে, অভাব, দারিদ্র্য, পতিতাবৃত্তির চিরস্থায়ী দাসত্ব এবং বাস্তুহারাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ভাবতে সাহায্য করবে।
Source: https://www.marxists.org/archive/lenin/works/1913/apr/27.htm