September 20, 2024
জীবনের গল্পফিচার ৩

আরিয়া’র জয়জয়কার করুন

আতিকুল ইসলাম ইমন।। বড় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারতের তিরুবনন্তপুরম শহর। এ কথা অবশ্য আগেই জানা যে, ভারতবর্ষে আধুনিক যুগে শিক্ষাদীক্ষায় কেরালা রাজ্যটি এগিয়ে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সাক্ষরতার হার কেরালা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি- শতকরা ৯৬.২ জন। আর এই রাজ্যের রাজনৈতিক শিক্ষাকেন্দ্র তিরুবনন্তপুরম শহর। শিক্ষায় যে তারা এগিয়ে তা এবারের সিদ্ধান্তে খুব স্পষ্ট হয়ে গেলো। এ শহরের মেয়র পদের ভার সামলাবেন কলেজপড়ুয়া আরিয়া আজেন্দ্রন নামের এক মেয়ে। তাকে নিয়ে আজকের আলোচনাটি  উঠলো, কারণ বয়েসে তিনি মাত্র বিশের ঘরের প্রথম অঙ্কে। কমরেড আরিয়া আজেন্দ্রনকে সাধুবাদ ও স্যালুট জানিয়ে বিস্তারিত শুরু করি।

কোনো ব্যক্তি নিয়ে লিখতে গেলে সাধারণত তার জন্ম থেকে শুরু করে ক্যারিয়ারে অর্জন-বিসর্জন ইত্যাদি জানা সব কথা লিখতে হয়। এতে ব্যক্তিভেদে এক বা দুই পাতা লিখে ভরে ফেলা যায় অনায়াসেই। তবে আরিয়াকে নিয়ে লিখতে গেলে সেই সুযোগ নেই। কারণ কৈশোর পেরিয়ে আর কতইবা এগিয়েছেন তিনি। মাত্র ২১ বছর বয়স। এ সময়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রসারির নেতা পর্যন্ত গড়ানোর কথা। এ বয়েসী কারো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের  গপ্পো টানার উপযোগিতা খুব একটা নেই। তবে আরিয়া কিন্তু এ বয়েসেই গোটা একটা শহরের মেয়র হয়ে গেছেন। আবারও, আরিয়াকে সালাম।

আরিয়া কেরেলায় বামপন্থী দল সিপিএম’র একজন সামনের সারির কমরেড। পড়ালেখা করছেন। অল সেন্ট কলেজের গণিতশাস্ত্রে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। কলেজ রাজনীতিতে খুব সক্রিয়। আর বামপন্থী দল সিপিএম’র সঙ্গে আছেন পারিবারিকভাবেই। অর্থাৎ তার মা-বাবা এই সংগঠনের সভ্য, তবে কর্মী পর্যায়ে। তাই শিশুকাল থেকেই সিপিএম’র শিশু সংগঠনের সঙ্গে আরিয়ার নিবিড় যোগাযোগ। এখন তিনি শিশু শাখা বালাসংঘমের সভাপতিরূপে দায়িত্বরত। গেলো পরশু কেরেলা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। এইতো, আর বিশেষ কী?

আছে। আরিয়াকে নিয়ে বলার মতো হাজারও বিশেষ কথা আছে। আছে আরিয়ার থেকে শিক্ষা নেওয়ার। শিক্ষা নেবে পুরুষতন্ত্র, শিক্ষা নেবে নারীও। পুরুষতন্ত্র জানবে- আরিয়ারা পারে, তারা সক্ষম, সমান সামর্থ্য তাদের আছে। আর নারীকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী।

পৃথিবী নামক গোলকের যে অঞ্চলে নারীর অধিকার এখনও অবহেলিত, নারীর ব্যাপক ক্ষমতায়ন প্রায় দূর অস্ত মনে হয়, যেখানে নারীকে ভাবা হয় পুরুষের চেয়ে নিচু শ্রেণি, সেইখানে এমন কিছু ঘটনা আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। তাই ২১ বছর বয়েসি আরিয়াকে নিয়ে আরও কথা আছে। আপনারাও তার কথা বলুন, তার জয়ধ্বনি করুন।

 

আরিয়ার ঝাণ্ডার রঙ লাল। তবে এ লড়াইয়ে ঝাণ্ডার রঙ কে দেখতে চাইছে? আরিয়ার জয়জয়কার করুন, কারণ আরিয়ারা বারবার পিতৃতন্ত্রকে বিব্রত করে। আরিয়ার নামে জয়ধ্বনি এ কারণেই শোভা পায়, কারণ তিনি প্রমাণ করেছেন নারী নিয়ে তন্ত্রের বানানো তথাকথিত মন্ত্রগুলো ভুল। তন্ত্রের মন্ত্রগুলো তো এমন, যা কি-না সবাই জানে ভুয়া- তবুও ধান্ধার স্বার্থে আওড়ে যেতে হয়। আরিয়াদের সফলতা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে দুধারি তলোয়ারের মতো। এমন সফলতা পুরুষতন্ত্রকে যেমন চপেটাঘাত করে তেমনই নারীর চোখ খুলে দেয়।

এখানে বলে রাখা ভালো- এর আগেও ভারতবর্ষের এক শহরের মেয়র মাত্র ২১ বছর বয়েসে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুমন কলি নামের ওই মেয়ে শহরের প্রধানরূপে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০৯ সালে। সে ঘটনা ছিলো রাজস্থান রাজ্যের শহর ভারতপুরে। ২১ বছর আরিয়ার সফলতা যেনো বেগম রোকেয়ার ভাষায় আবারও এ বলে ডাক দিলো— ‘জাগো গো ভগিনী’।

শেষে বরং প্রথম প্যারায় যে ‘শিক্ষা’র কথাটা বললাম তা কেন বললাম সেই ব্যাখ্যা দেই। শিক্ষার বিষয়টি এ কারণেই টানলাম- কারণ শিক্ষা, উচ্চ সাংস্কৃতিকবোধ ও বিবেচনাবোধ না থাকলে মারাত্মক কিছু স্টেরিওটাইপের ফাঁদে আটকে থাকতে হয় সারাজীবন। সেটা ব্যাক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য- গোষ্ঠী, সমাজ ও দেশের ক্ষেত্রেও সমান সত্য। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীতে পূর্বোক্ত গুনাগুণের সম বিস্তার না হলে সেই স্টেরিওটাইপ ভাঙা কঠিন। তাই আমরা মনে করি, শিক্ষার সুষম বিস্তারই সব বাধা ও শৃঙ্খল থেকে শোষিতদের নিস্তার দিতে পারে। কারণ একটি প্রকৃত অর্থে সভ্য সমাজ বা গোষ্ঠী কাউকে- কোনো লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণিকে পেছনে ফেলে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাওয়ার বাস্তবতাবর্জিত ভারসাম্যহীন আয়োজনের পরিকল্পনা করে না।