November 22, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

নারীবাদী হতে সাহস লাগে যা অধিকাংশের নেই

আলী আদনান।। যুগ যুগ ধরেই মানুষ গতানুগতিক পথে হাঁটতে অভ্যস্ত। নতুন কিছু করার শক্তি যেমন সবার নেই তেমনি নতুন কিছু ভাবার সাহসও সবার নেই। মৌলবাদের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো গতানুগতিকতাকে আঁকড়ে থাকা। প্রথা মেনে চলা। প্রথা কখনো ধর্মের নামে প্রতিষ্ঠা পায়, কখনো রাজনীতির রূপ ধরে আসে, আবার অনেক ক্ষেত্রে রীতিনীতির ছদ্মাবরণে এগিয়ে চলে।

পুুরুষতন্ত্র মৌলবাদের অন্যতম খুঁটি। পুরুষতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে বা যাদের জীবন দর্শনে কোন না কোন ভাবে পুরুষতন্ত্র আছে তারা অবশ্যই মৌলবাদি। আর এ কথা অবশ্যস্বীকার্য একজন মৌলবাদি কখনোই সমাজে নতুন কিছু মেনে নিতে পারেনা৷ মৌলবাদিরা কখনো নতুন চিন্তা করার সাহস রাখেনা। কেউ যদি বলে আমি নারীবাদে বিশ্বাস করিনা কিন্তু মৌলবাদি নই, সে হয় মিথ্যা বলছে কিংবা সে বুঝেই না মৌলবাদ কী। আবার এটাও হতে পারে তিনি সংশয়ে আছেন। এবং সমাজে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

একটি সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মুক্তির বিকল্প নেই। সমাজের কোন বিশেষ শ্রেণিকে অবদমিত করে উঁচু উঁচু রাজপ্রাসাদ বানানো সম্ভব, মসৃন রাস্তা বানানো সম্ভব- কিন্তু সমাজটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ‘পুরুষতন্ত্র’ চাপিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। মৌলবাদ ভেদ করে যেমন আলো প্রবেশ করতে পারেনা তেমনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনা। পুরুষতন্ত্র শুধু যে নারীকে অবদমিত করে তা নয়, পুরুষতন্ত্র পুরুষকেও অবদমিত করে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি- সবক্ষেত্রেই পুরুষতন্ত্র একটা অদৃশ্য ফাঁদ।

‘ফেমিনিজম’ নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা  সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ, তারা শুধু নারীবাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন না বরং সমাজটাকেই এগিয়ে নিচ্ছেন।  নারীবাদ নিয়ে যারা মাঠে লড়াই করছেন তাদের কত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়- একজন বাঙ্গালী পুরষের পক্ষে তা কখনোই অনুধাবন করা সম্ভব না। যদিও দিনশেষে ফলটা সবাই ভোগ করছে।

আগেও বলেছি, নারীবাদের সবচেয়ে বড় অন্তরায় মৌলবাদ। সমাজে যারা মৌলবাদ টিকিয়ে রেখেছে, পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারাও কোন না কোন ভাবে নারীর অগ্রযাত্রার সুফল ভোগ করছে। যে মাওলানা নারীকে পঞ্চম শ্রেণির বেশি না পড়ানোর জন্য ফতোয়া দেয় সেই মাওলানাই অসুস্থ হয়ে নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে। এটা নিজের সাথেই নিজের প্রতারনা।

সমাজের সাহসী মানুষরাই নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেয়। ব্যতিক্রম কিছু করার সাহস দেখায়। নারীবাদী হতে সাহস লাগে যা অধিকাংশের নেই। সকল ইতিবাচক আন্দোলনই একটা পর্যায়ে গিয়ে আলোর মুখ দেখে- এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নারীবাদ অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাই আমি বিশ্বাস করি। যদিও লড়াইয়ের এ যাত্রা মোটেও ছোট নয়, সহজ নয়।

সকল পুরুষ যেমন পুরুষতান্ত্রিক নয় তেমনি সকল নারীও নারীবাদে বিশ্বাস করেনা। ফলে লড়াইটা হয়ে উঠেছে আরো কঠিন। সমাজের সুবিধাবাদী লোলুপ শ্রেণিটা ধর্মের আবরণে পুরুষতন্ত্রকে জিইয়ে রাখতে চায়। এরা একেকজন উন্নতমানের ভন্ড ও বদমাশ। নারীবাদ তাদের স্বার্থে বড় আঘাত। সেদিক থেকে ফেমিনিজম নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা মূলত এই ভন্ড বদমাশদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছেন।

এই লড়াইয়ের কর্মীরা একটা পর্যায়ে অবশ্যই বিজয়ের মুখ দেখবেন৷ হোক সেটা আজ বা কাল, এখন বা একযুগ পর। বিজয় আসবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনোই কোন প্রথা বা রীতিনীতি, গতানুগতিকতা বা সংষ্কার বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেনি। সময়ের ব্যবধানে মৌলবাদের গোড়ায় যেমন কুঠারাঘাত পড়বে তেমনি পুরুষতন্ত্রও ভেঙ্গে পড়বেই।

দেশের মাটিতে নারীবাদ নিয়ে কাজ করছে ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত তারা বিভিন্ন সমস্যা সাহসের সাথে তুলে আনছেন। গত একবছরের যাত্রায় ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর- এর লেখা আমি নিয়মিত পড়েছি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর এক বছরে পদার্পন করল। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর- এর প্রথম জন্মদিনে পোর্টালটির সাথে জড়িত সকলকে শুভেচ্ছা।

বিশেষ ভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর সম্পাদক শারমিন শামস্-কে, কন্টকাকীর্ণ পথে হাঁটা যার অভ্যাস হয়ে গেছে। শুভকামনা থাকল পোর্টালটির সকল নিয়মিত লেখক ও পাঠকদের জন্য। এ পথ হাল ছেড়ে দেওয়ার নয়- এ বিশ্বাস সবার মনে জেগে থাকুক সে প্রত্যাশা থাকলো।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]