নিজের ইচ্ছায় যৌনসম্পর্ক, পুরুষের দোষ কই?
শাশ্বতী বিপ্লব।। “বিয়া” নাকি এমন একটা জিনিস, যে খায় সেও পস্তায়, যে না খায় সেও পস্তায়। তারপরেও “বিয়া” করার “প্রলোভন” ক্যামনে সফল হয়? অবিবাহিত, কম বয়সী, পোলাপান মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ধরেন, কারু একবার বা একাধিকবার “বিয়া”র অভিজ্ঞতা হইসে, সে ক্যান “বিয়ার” “প্রলোভনে” পড়ে? রহস্যটা কই? হ্যাঁ, বিবাহিত নারীদের কথাই জানতে চাইতেসি। কারণ, “বিয়ার প্রলোভন’ দেখায়া “ধর্ষণের” অভিযোগ পুরুষদের তো করতে দেখি নাই।
যদি তর্কের খাতিরে ধইরা নেই, আমাদের সমাজ যেহেতু বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক মাইনা নেয় না, সেই কারণে “ডিভোর্সি নারীর” যৌন চাহিদা মিটাইতে “বিয়া” করার দরকার হয়। ওকে, ঠিকাসে। সমাজরে যদি এতোই ডরান, তাইলে, সেই কাঙ্খিত “বিয়াটা” হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন না ক্যান আপামনিরা? হুড়মুড়াইয়া শারীরিক সম্পর্কে চইলা যান ক্যান? আর যদি কইরাই ফেলেন, তাইলে সেইখানে পুরুষের দোষ কই? আপনে তো শিশু না। আনন্দ তো আপনেও সমানতালেই করসেন, নাকি? তাইলে, পরে প্রেমিক পুরুষ “বিয়াটা” না করলে “প্রতারণার” অভিযোগ আপনি আনতেই পারেন, কিন্তু “ধর্ষণের” অভিযোগ আনেন কোন আক্কেলে?
একটা ঘটনা বলি। বছরখানেক আগে একটা মেয়ে ইনবক্সে আইসা কান্নাকাটি, ‘‘আপু, ফোন নাম্বার দেন। বিপদে পড়সি।” আমি সহজে কাউরে ফোন নাম্বার দেই না। বললাম, যা বলার লিইখা বলেন। পরে আমার ইউনিভার্সিটির এক বন্ধু বললো, দোস্ত, মেয়েটা আমার কাজিন, একটু সাহায্য কর। কি আর করা, ফোন নাম্বার দিয়া বিস্তারিত শুনলাম।
সংক্ষেপে ঘটনাটা হইলো- সেই মেয়ে ডিভোর্সি কয়েক বছর। ছোট একটা বাচ্চা আছে। যে কিছুদিন তার কাছে, কিছুদিন বাপের কাছে থাকে। এর মধ্যে ফ্রান্স প্রবাসী এক লোকের সাথে অনলাইনে তার পরিচয় ও প্রেম হইসে। লোকটারে সে কয়েক লাখ টাকাও ধার দিসে। লোকটা কথা দিসে, দেশে ফিইরা সে মেয়েটারে বিয়া করবে।
তো, লোকটা দেশে ফিরা মেয়েটার বাসায় গেসে। একরাত থাকসে। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হইসে। এরপর থিকা লোকটার আর কোন খোঁজ নাই। বহু কাঠখড় পুড়াইয়া মেয়েটা জানতে পারসে লোকটার বিবাহ মোবারক সামনে। বিয়া কইরা সেই নতুন বউরে নিয়া সে বিদেশ ফিরবে। এখন এইটারে “ধর্ষণ” বলবেন ক্যামনে?
স্বাভাবিক কারণেই মেয়েটা কী কী করতে পারে এবং তার কনসিকোয়েন্স কী কী হইতে পারে, তার একটা ফিরিস্তি বুঝায় দিলাম। সাথে কিছু ভৎসনাও করলাম। সেই মেয়ে পরে আর মামলা করে নাই। ওই লোকটার পরিবারের সাথে কথা বইলা টাকা ফেরত পাইসে এবং ক্ষমা চাওয়ার ভিত্তিতে ক্ষমাও কইরা দিসে।
আরেক ডাক্তার মেয়ের কথা জানি। যে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। ডিভোর্সি এবং দুইটা বাচ্চা আছে। সেও তার এক পুরুষ সহকর্মীর সাথে শুধু শারীরিক সম্পর্কই স্থাপন করে নাই। চাকরি বাকরি ছাইড়া শুধু ঘর সংসার ও স্বামীর সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিসে। এবং তার নিদর্শন স্বরূপ প্রেমিকের পাও টিইপা দিসে। পরে সেই বিয়াটা যখন হয় নাই, তখন মেয়েটা ও তার বন্ধুরা, যারা এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কটারে সমর্থন যুগায়া গেসে, তারা মহা হাঙ্গামা জুইড়া দিসে। আরে আজিব! বিয়া যদি এতোই গুরুত্বপূর্ণ, তাইলে শারীরিক সম্পর্কের আগে মনে ছিল না?
আজকে আবার এক ফেসবুক সেলেব্রিটির “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের” অভিযোগে ফেসবুক গরম। যেহেতু থানায় জিডি হইসে, মামলা ও তদন্তও নিশ্চয়ই হবে। সেই তদন্তের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। শুধু বিবাহিত, অবিবাহিত, ডিভোর্সি কিংবা বিধবা, সকল আপ্পিদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাইলে দয়া কইরা দুইজনের মিলিত সিদ্ধান্তে যে শারীরিক সম্পর্কে জড়াইসেন, তারে “ধর্ষণ” বলবেন না। তাতে, প্রকৃতই যারা ধর্ষণের শিকার হয়, তাদের উপর হওয়া অন্যায় নিয়া সমাজে সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়।
দীর্ঘ দুই-তিন দশক ধইরা আন্দোলন-সংগ্রাম কইরাও আমরা নারীর প্রতি হওয়া যৌন সহিংসতা কমাইতে পারি নাই। কঠোর আইন কইরাও কোন লাভ হয় নাই। আপনারা দয়া কইরা আমাদের পথটা আরো কঠিন কইরা দিয়েন না। শোয়ার আগে ভাবেন, আকাশকুসুম ভাইবা শুইয়েন না।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]