November 24, 2024
সাহিত্যবই নিয়ে আলাপ

কবি মুনিরা চৌধুরী; কবিতা ও কাব্য মনস্তত্ত্ব

আঞ্জুমান রোজী।। বাঙালি সমাজে নারীর অবস্থান কোথায়, তা প্রতিটি  নারীই বিশেষভাবে বুঝতে পারে। কমবেশি অনেক নারী এই বৈরী সমাজ দ্বারা ভুক্তভোগী। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার রূঢ়তার কারণে সেভাবে আমরা সোচ্চার হতে পারিনা। কবি মুনিরা চৌধুরী একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে সমাজের সবরকম গঞ্জনার মধ্য দিয়ে তার জীবনযাপন চলছিল। এমতাবস্থায় তার স্বেচ্ছামৃত্যু তাকে সামাজিকভাবে আরো ধিক্কারের মুখোমুখি করে। ধর্মীয় অনুশাসন এবং সামাজিক অনুশাসন এমনই কঠিন ও নির্মম যে, স্বেচ্ছামৃত্যতে কবি মুনিরার অস্তিত্ব আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যা পুরোপুরিই অমানবিক। আমরা জানি, মৃত্যু অবধারিত৷ মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন; তাতে  একজন সৃষ্টিশীল মানুষের সকল সৃষ্টিকর্ম ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে না। তিনি কবি ছিলেন, সেইসাথে ছিলেন বাংলা একাডেমি ইউকের পরিচালক। তাছাড়া আরো সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার চ্যালেঞ্জটা ছিল ঠিক এখান থেকেই। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, একজন নারী হয়ে নারীর পাশে থাকা, দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করা এবং স্বীকৃতি দেয়া।

সমাজ-সংসার, ধর্ম যে যেভাবেই দেখুক না কেন, মুনিরা চৌধুরীকে আমি দেখেছি একজন মানুষ হিসেবে তারপর কবি হিসেবে। এই মানসিকতায় তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতার উপর ভর করে উদ্যোগী হয়ে তাকে নিয়ে ‘কবি মুনিরা চৌধুরী; কবিতা ও কাব্য মনস্তত্ত্ব’ নামে একটি স্মারকগ্রন্থ ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’ থেকে প্রকাশ করি। স্মারকগ্রন্থটি করতে গিয়ে অনেক কবি, সাহিত্যিকের সহযোগিতা পেয়েছি। তারা আমাকে তাদের অমূল্য লেখা দিয়ে গ্রন্থটি সমৃদ্ধ করেছেন।  সেইসাথে  কবি মুনিরা চৌধুরীকে তুলে ধরেছেন আলোর ফোয়ারায়। কবি বেঁচে থাকবেন তার কবিতায়, তার কর্মে। বেঁচে থাকবেন তার ভক্ত পাঠককুলের হৃদয়ে। ২০২১ এর বইমেলায় স্মারকগ্রন্থটি ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশে থাকবে। তাছাড়া দেশের প্রতিটি বাতিঘরে এবং রকমারীতে পাওয়া যাবে।

কবি মুনিরা চৌধুরী ১৯৭৬ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের গ্লস্টার শায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করলেও বড় হন বাংলাদেশে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশে লেখাপড়া করেন। পরে লন্ডনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তর এবং কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি তিন সন্তানের জননী।

উদীয়মান লেখক হিসেবে মুনিরা চৌধুরী কবিতা ও গদ্য চর্চায় বিলেতে সুনাম অর্জন করেছিলেন। এ ছাড়া, ব্রিটেনে বাংলাদেশি সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মুনিরা ছিলেন সেখানকার বাঙালিদের কাছে পরিচিত মুখ। কার্ডিফ বাংলা একাডেমি ইউকে নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনি ছিলেন কর্ণধার। মুনিরা চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কানিশাইল। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো, ‘নয় দরজার বাতাস’, ‘মৃতের মাতৃমঙ্গল’’, ‘কাম ক্লোজ টু মাই পেন্সিল’ ও ‘মেহেকানন্দা কাব্য’। বাংলা একাডেমী ইউকে থেকে তার নিজ দায়িত্বে বাংলা কবিতার আন্তর্জাতিক এন্থলজি ২১ সেপ্টেম্বর,২০১৭তে প্রকাশিত হয়; যার সম্পাদক ছিলেন নাঈম ফিরোজ। তাছাড়া চারজন কবির একশত কবিতা নিয়ে ‘চন্দ্রাহত কবিতা’ বইটি সম্পাদনা করেন। নিজ সম্পাদনায় আরো বেশ কয়টি কবিতা সংকলের কাজ হাতে নিয়েও সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। যেমন- পয়েটা Poeta (Collection of Modern Bengali Poems 1930-1990); দিলওয়ারমঙ্গল এবং নির্বাচিত ডায়াস্পোরা কবিতা।

২০১৮ সালের ১৭ই নভেম্বর যুক্তরাজ্যের কার্ডিফের সমুদ্র উপকূল থেকে স্থানীয় পুলিশ কবির মৃতদেহ উদ্ধার করে।