September 20, 2024
নারীবাদ আলোচনাফিচার ৩

বিয়ে ও পরিবার কাঠামো: নারীকে ‘নারী’ বানানোর প্রতিষ্ঠান

নারীবাদ বোঝা ও বোঝাপড়া: পর্ব-১৫

শারমিন শামস্।। সিমন দ্য বোভোয়ার নারীর চিরন্তন রূপটিকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ সেই রূপটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তৈরি। এর পেছনে শারীরিক, মানসিক, বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি ছিল না। সমাজ পুরুষকে প্রথম লিঙ্গের মর্যাদা দেবার স্বার্থে নারীকে নারীত্ব ও মাতৃত্বের একটি চিরন্তন রূপ বেধে দিয়ে প্রচার করে যে এটিই নারীর শাশ্বত সত্তা, এবং এটিকে প্রাকৃতিক আখ্যা দেয়, যা একটি ডাহা মিথ্যে। ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত সাড়া জাগানো গ্রন্থ দ্য সেকেন্ড সেক্স এর প্রথম অংশে বোভোয়ার এই পুরুষতান্ত্রিক মিথ্যেগুলোই প্রমাণসহ বিবৃত করেছেন। বোভোয়ার লিখেছিলেন, কেউ নারী হয়ে জন্মায় না, সমাজ তাকে ক্রমশ নারী করে তোলে। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েরা পরিবারের আর ১০টি পুরুষের মতই শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সমান দক্ষ যোগ্য থাকে। ক্রমে তাকে সরিয়ে নেয়া হয় সবকিছু থেকে। তার জগৎ ঠিক করে দেয় সমাজ। নারী ক্রমে ‘নারী’ হয়ে ওঠে।

বোভোয়ারের মতে, নারী নিজেকে দেখে সমাজ তাকে যেভাবে নিজেকে দেখতে শেখায়, সেভাবে। সেইমত সে তার পছন্দ ও ইচ্ছাগুলোকে নির্ধারণ করে। এসবের কোনোটাই তার প্রকৃতি নয়। অথচ সমাজ প্রচার করে যে, এটাই নারীর প্রকৃতি- গেরস্থালী কাজ করা, প্রেমিকা বা স্ত্রী হয়ে থাকা, মা হওয়া, সন্তান লালন পালন করা ইত্যাদি। সমাজের পুরুষেরা নির্ধারণ করে দেয় যে নারীর প্রকৃতি কী! আর এটাই হলো নারীর প্রতি সব ধরণের বঞ্চনা ও নির্যাতনের মূল কারণ। বোভোয়ার লিখেছেন, নারীকে অধস্তন থাকতে বাধ্য করা হয়। তাকে সক্রিয় হতে দেয় না পুরুষ। সমাজের মূলস্রোত থেকে তাই ছিটকে পড়ে নারী। সে থাকে ঘরে, ঘর সামলানো আর সন্তান পালনের কাজে। তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করা হয়।

নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু ও প্রথম তরঙ্গের শেষ- এ দুটোর মাঝামাঝি একটি সময়ে দাঁড়িয়ে দ্য সেকেন্ড সেক্স লিখেছিলেন বোভোয়ার। নিজেকে আগে সমাজতান্ত্রিক বলতেন। পরে নারীবাদী পরিচয় দিতে শুরু করেন। কিন্তু আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো থেকে একটু তফাতেই থাকতেন। তবে ফ্রান্সে গর্ভপাতের অধিকার আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। নারীর চিরন্তন ভূমিকা ও রূপকে অস্বীকার করেছিলেন নিজের জীবনেও। সাহিত্যিক জ্য পল সাত্র এর সাথে যৌথ জীবনেও নানাভাবে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও সেটি নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। সে আরেক অধ্যায়।

বিয়ে, পরিবার কাঠামো, সন্তান জন্ম দেয়া ও লালন পালনের কাজ নারীকে ঘরে বন্দি করে। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতিসহ রাষ্ট্র ও সমাজের মূলস্রোতে তাই নারীর অংশগ্রহণ সম্ভব হয় না। সেটি দখল করে রাখে পুরুষ। ১৮৮৪ সালে যে কথা বলে গিয়েছিলেন ফেড্রেরিক অ্যাঙ্গেলস তার Origin of the family, private property and the state গ্রন্থে। সেখানে বিবৃত হয়েছিল কীভাবে পরিবারই নারীর যাবতীয় অধিকারহীনতা ও বঞ্চনার সূতিকাগার হয়ে আছে। তৎকালীন ইউরোপ, আমেরিকায় বিবাহিত নারীদের প্রকৃত অবস্থা কী ছিল, তা আগের পর্বগুলোতে বর্ণনা করেছি। স্ত্রীরা ছিলেন স্রেফ স্বামীদের কিনে আনা দাসী, তাদের না ছিল কোনো সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা, না ছিল কোনো আইনগত অধিকার। এমনকি নারীর সম্পত্তি বা রোজগার করা অর্থও ছিল তাদের স্বামীর দখলে। এশিয়া কিংবা উপমহাদেশেও ভিন্ন কোনো চিত্র ছিল না। পুরো দুনিয়া জুড়েই পুরুষের রাজত্ব, যা এখনো কম বেশি মাত্রায় বহাল আছে সবখানে। নারীবাদ এই একতরফা শাসন ত্রাসনের অবসানের লক্ষ্যেই শত শত বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মেয়েদের উৎসাহিত করা হলো তারা যুদ্ধকালীন যে কেরিয়ার গড়ে তুলেছিলেন, সেটি ছেড়ে যেন আবার ঘরে ফিরে যান। কেরিয়ার ছেড়ে আবার গেরস্থালী কাজে মন দেয়া সুখি আমেরিকান গৃহবধূদের একটি বিরাট প্রয়োজনীয়তা তৈরি হলো যুদ্ধপরবর্তী পুঁজিবাদী সমাজে। তারা হয়ে উঠলেন পণ্যের মূল ভোক্তা। আবার নিজেরাও এক একটি পণ্য হয়ে গেলেন নিজেদের অজান্তেই।

দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদী বেটি ফ্রিডানের কথা এখানে উল্লেখ করতে হবে। ১৯২১ সালে জন্ম নেয়া মার্কিন এই লেখক আমেরিকার অভিজাত পরিবারের নারীদের সামনে নতুন এক ভাবনার খোরাক তুলে ধরলেন- দ্য প্রবলেম উইদ নো নেইম। বেটি ফ্রিডান তার দ্য ফেমিনিন মিস্টিক (প্রকাশ ১৯৬৩ সাল) এর প্রথম চ্যাপ্টার এই নামেই লিখেছেন। বর্ণনা দিয়েছেন আমেরিকান ‘সুখি’ গৃহবধূ নারীদের জীবনের এমন এক সমস্যার, যে সমস্যাটা তাদের মনের ভেতরে ঘাপটি মেরে আছে, তারা সেটার খচখচানি টের পায়, কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, সমস্যাটা আসলে কোথায়।

‘‘The problem lay buried, unspoken, for many years in the minds of American women. It was a strange stirring, a sense of dissatisfaction, a yearning that women suffered in the middle of the twentieth century in the united states.’’- এভাবেই শুরু করেছেন ফ্রিডান তার বই। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘This is the real mystery: why did so many American women, with the ability and education to discover and create, go back home again, to look for `someone more’ in housework and rearing children?” [পৃষ্ঠা-৪৯, The Feminine Mystique]

এই বই পড়ে নড়ে চড়ে বসেছে পুরো আমেরিকার ‘সুখি’ মেয়েরা। বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকা এই বই সম্পর্কে লিখেছে, ‘‘A rallying cry, exhorting women to make change happen for themselves.”

আমেরিকার সুখি গৃহবধূদের আত্মপরিচয়ের যে সংকট, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন ফ্রিডান। আত্মপরিচয়হীন এইসব নারীর গৃহবধূ ও মা হওয়াটাকে মহিমান্বিত করে তুলেছিল সমাজ, অন্যদিকে বাজার অর্থনীতির সবচেয়ে লাভজনক ক্রেতা হিসেবেও নারীর অবস্থান ছিল তাই শীর্ষে। মা হয়ে, গৃহিনী হয়ে ঘরে বসে থাকা মেয়েরা ঘরের জিনিসপত্র, হোম গেজেট আর প্রসাধনী কিনতেই থাকে। এদিকে পুরুষও ক্রেতা, তবে সেটি হলো নারীর যৌনতার। এটা একটা চেইনের মতো। নারী তার কিনে আনা প্রসাধন মেখে রূপচর্চা করছে, ফলে যৌনআকর্ষনীয় হয়ে উঠছে। আর পুরুষ সেই যৌনতা ক্রয় করছে। একই সাথে সংসারের জন্য ক্রমাগত পণ্য কিনছে নারী। এই গেরস্থালী পণ্য কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলা, শিশু লালন পালন করা এবং নিজেকে পুরুষের জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ছাড়া নারীর আর কোনো কাজ নেই। পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে উৎসাহিত করছে কেনাকাটায়। বেটি ফ্রিডান সমাজের এই নগ্ন সত্যটিকে সামনে নিয়ে আসলেন। বললেন, আমেরিকার মেয়েরা এখন শিক্ষা গ্রহণ করে একটা ভাল বিয়ের জন্য, টাকা পয়সাওয়ালা স্বামী যোগারের উদ্দেশ্যে।

ফেমিনিন মিস্টিক তাৎক্ষনিকভাবে বেস্টসেলার হয়ে গেলো পুরো আমেরিকায়। ফ্রিডান হয়ে উঠলেন নারী আন্দোলনের অন্যতম মূখপাত্র, যদিও নানা সময়ে নানা সময়ে তিনি বিতর্কিতও হয়েছেন। অবশ্য নারীবাদীদের নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু তো নয়। আজও একই ধারা চলে আসছে নানা রূপে।

বিয়ে বিষয়টিকে নারীবাদীরা চিহ্নিত করতে শুরু করলেন পুরুষশাসিত ও নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে। শুধু সমাজ নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও যে নারীকে পারিবারিক কাঠামোর ভেতরে নিয়ন্ত্রণে রাখার সব ধরণের বন্দোবস্ত করে রেখেছে, সেটিও বলতে শুরু করলেন তারা। চার্চের ভূমিকা ও ধর্মগ্রন্থে নারীকে কী রূপে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে কথা হচ্ছিল নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গে। প্রথম তরঙ্গের নারীবাদীরাই অবশ্য আলাপ তুলে দিয়েছিলেন। এ সময় নারীর অধীনস্ততার অন্যতম কারণ হিসেবে নারীবাদীরা বললেন, মাতৃত্বকে মহিমান্বিত করা হয় নারীর ওপর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য। মা শব্দটি মিষ্টি বটে। ঘর শব্দটিও দারুন। স্বর্গও লোভনীয়। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হলো- স্বাধীনতা; যা নারীর নেই। বিয়ের আগে নারীকে শেখানো হয় পিতার নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। আর বিয়ের পর চলে যেতে হবে স্বামীর অধীনে। এই হলো নারীর জীবন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলো স্বচ্ছল হয়ে উঠতে লাগলো। তাদের জীবনের মূল বৈশিষ্ঠ্য ছিল নিউক্লিয়ার পরিবার, যেখানে পরিবারের পুরুষ সদস্যটির দায়িত্ব রোজগার করা। পরিবারের অর্থনীতিতে নারীর কোনো ভূমিকা ছিল না। যুদ্ধের সময় যে নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতেন, নিজেদের একটা পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন, স্বাধীন জীবনের স্বাদ পেয়েছিলেন, তারাই যুদ্ধের পর এক একটি নিউক্লিয়ার পরিবারে পুরুষের অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে সংসার দেখভাল ও সন্তান লালনের কাজ করে যেতে লাগলেন।

কানাডায় জন্ম নেয়া র‌্যাডিক্যাল নারীবাদী সুলামিথ ফায়ারস্টোন ১৯৭০ সালে লিখলেন বিখ্যাত বই The dialectic of sex। সেখানে তিনি বললেন, নারীবাদ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মূল কাঠামোগুলোর ভিত্তি নড়িয়ে গুড়িয়ে দেবে। আর সেই কাঠামোগুলোর একটি হলো পারিবারিক কাঠামো। সুলামিথ নারী-পুরুষের ভেতরের বৈষম্যকে সমাজের আর সমস্ত বৈষম্য ও বঞ্চনার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। সন্তান ধারণ ও লালন পালনের যে বোঝা নারীর ওপর একতরফাভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়, সুলামিথ সেটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। লিখেছেন- “we are no longer just animals.” সুলামিথ আশা করতেন যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একদিন সন্তান ধারণে নারীদেহ ব্যবহারের বাইরে বিকল্প কিছু আবিস্কার করবে। নিউক্লিয়ার পরিবারের অবসান চেয়েছিলেন তিনি। এবং সন্তান লালনের কাজটি একক পরিবারে না হয়ে, দলগতভাবে করার নতুন কিছু তত্ত্বও তুলে ধরেছিলেন। সুলামিথ ফায়ারস্টোনের এই তত্ত্ব বা চিন্তাধারাটি ছিল সমাজতান্ত্রিক নারীবাদের।

বিয়ে ও পরিবারকে চিরন্তন শাশ্বত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে তাকে মহিমান্বিত করবার যে রীতি, সেটিকে খারিজ করে দিয়েছেন মার্কস ও অ্যাঙ্গেলস। নারীর অধীনস্ততার সূত্র রয়ে গেছে এই বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই। পরিবার যাকে চর্চা করে ও ধরে রাখে। নারীমুক্তির প্রশ্নে মার্কস- অ্যাঙ্গেলসের বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে। নারীপ্রশ্নে মার্কসবাদ প্রাসঙ্গিক। যদিও তাদের তত্ত্ব এ ইস্যুতে অসম্পূর্ণ বলেও যথেষ্ঠ সমালোচিত। তবু সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভেতরেই পারিবারিক কাঠামোর অভ্যন্তরে নারীর বঞ্চনার সমাধান খুঁজবার প্রয়াস দেখা গেছে। রুশ বিপ্লবসহ যেকোনো বিপ্লবের পর নারীমুক্তির উদ্যোগ এসেছে বারবার। সেটি সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা চীন, কিউবা- সর্বত্র।

বিপ্লবের পর রাশিয়ায় আপামর নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, সেসবের মধ্যে নারীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছিল। পাশাপাশি নারীর নারী শ্রমিকের মজুরি ইস্যুটি। একই সঙ্গে বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অধিকার, একক মায়ের মাতৃত্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা, সন্তান জন্মদানে মায়ের সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার, প্রসূতিকালীন ছুটি ইত্যাদি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পরপরই নেয়া প্রাথমিক উদ্যোগ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে নারীকে ঘরের কাজের চাপ থেকে মুক্তি দিতে সামাজিক রন্ধনশালা এবং শিশু যত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। ঘরে বাইরে নারী যেন পুরুষের সমান অধিকার পায় সেদিকে নজরদারি ছিল, এমনকি প্রেম বিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা ছিল। একই সাথে সোভিয়েত সরকারের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমাজে শুধু নয়, পার্টির ভেতরেও যারা পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা লালন করে যাচ্ছেন মনের মধ্যে, তাদের নিয়ে কাজ করা। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানোই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লেনিনের একটি বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। লেনিন বলেছিলেন, একজন কমরেডকে একটু খুঁচিয়ে দেখলেই তার মধ্য থেকে যখন পুরুষতন্ত্র বেরিয়ে আসবে, তখনই সমস্যার গভীরতা বোঝা যায়।

বিপ্লবপূর্ব চীনে নারীর অবস্থা ছিল করুণতম। এমনকি ভাতরবর্ষের চেয়েও অবদমিত ছিল চীনা নারী। এ অবস্থায় ১৯২১ সালে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের সময় নারীপ্রশ্নটি গুরুত্বের সাথে সামনে আসে। মেয়েরাও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে থাকে। কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখলের মাস কয়েকের ভেতরেই ১৯৫০ সালের মে মাসে বিবাহ আইন হয়। এই আইনের মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মতো বিয়ে বিষয়টি দুজন সাবালক মানুষের স্বেচ্ছাচুক্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়। পাশাপাশি চীনা নারী বিয়ে বিচ্ছেদের অধিকার পায়। পায় সন্তানের ওপর অধিকার এবং সম্পত্তির মালিকানা। আবার ঘরের কাজগুলোকে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের আওতায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। উৎপাদন কাজে গৃহবধূদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সমবায় পদ্ধতিও চালু হয়।

[চলবে]