November 21, 2024
সাহিত্যফিচার ৩বই নিয়ে আলাপ

বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প: নারীর বন্ধন ও মুক্তির মুখোমুখি

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। স্বাধীনতার পর অর্ধ-শতকে এদেশে নারীর মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? নারী কেন আজো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক? নারী উন্নয়নের যে স্বপ্ন আর অগ্রযাত্রা, তার পাশে এই অমর্যাদাকর অবস্থান নারীর অর্জনের খাতায় কতটুকু সাফল্য লিখে রাখছে? এই  প্রশ্নগুলো তুলেছেন লেখক আফরোজা সোমা, তার নারী বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’তে।

চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বই। মোট ২৭টি রচনা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারীর অর্জন ও বঞ্চনার ইতিহাস ও অবস্থানের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চেয়েছেন তিনি পাঠককে।

বইয়ের ভূমিকায় লেখক বলছেন- ‘‘মি টু আন্দোলনের পথিকৃৎ টারানা বার্ক তার বক্তৃতায় ‘কালেক্টিভ ট্রমা’র কথা বলেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা বয়স, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অবস্থানে ভিন্ন হলেও তাদের নারী জীবনের বেদনা ও ব্যথার কাহিনী অভিন্ন। নারী হিসেবে সম্মিলিতভাবে তারা বহন করে একই যাতনার স্মৃতি।

দাদি-নানির জীবন থেকে আমার জীবন পর্যন্ত ভূভারতের মানচিত্র তিনবার বদলেছে। অবিভক্ত ভারতে তাঁরা জন্মে ছিলেন। ’৪৭-এ ভারত দুই টুকরো হলে তাঁরা হন পাকিস্তানের নাগরিক। নতুন দেশে জন্মেছেন তাঁদের সন্ততিরা। পাকিস্তানও টেকেনি। ১৯৭১-এ এসেছে নতুন দেশ। বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছি আমি ও আমার প্রজন্ম।

তিন মানচিত্র, তিন প্রজন্ম। তিন প্রজন্মের নারীর জীবনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকে দৃশ্যত অনেক বদল এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের এই তিন প্রজন্মের নারীরই আছে টারানা বার্ক বর্ণিত সেই ‘কালেক্টিভ ট্রমা’। নারীজীবনের গূঢ় বেদনার ঐক্য বা কালেক্টিভ ট্রমা আমাদের বিনিসুতোর মালায় গেঁথেছে।

সংবিধানে নারী-পুরুষ সকল নাগরিকের সমান মর্যাদার কথা লেখা আছে বটে। কিন্তু পদে পদে অনুভব করি আমার দাদুর মতোই আজও আমি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। পলে পলে টের পাই নানুর মতোই আজও আমার শরীর এক অরক্ষিত দুর্গ; লুট ও বেদখল হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। মায়ের প্রজন্মের মতোই আজও আমার প্রজন্মের জন্যও আদর্শ নারীর উপমায় ব্যবহার হয় ‘সতী-সীতা-সাবিত্রী’র মানদণ্ড।”

‘‘…নারীকে অধস্তন করে রাখার দুষ্টুচক্র ভাঙতে যুগে যুগে কাজ করেছেন অগ্রজ নারীরা। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পথ বড়ই দীর্ঘ। এই পথ বন্ধুর ও কণ্টকময়। পাড়ি দিতে হবে আরো বহু পথ। যে লড়াই শুরু হয়েছিল বেগম রোকেয়ার যুগে সেটিকে এগিয়ে নেবার দায় ও দায়িত্ব এখন আমাদের।”

‘বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প’ প্রকাশ করছে হাসান’স। বইমেলায় পরিবেশক ‘পেন্ডুলাম’। মেলায় প্রাপ্তিস্থান- স্টল নম্বর ৪৪৮। দাম ৪০০ টাকা। মেলায় ২৫% ডিসকাউন্টে মূল্য ৩০০ টাকা।