পৃথিবীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ আমেরিকা, নির্লজ্জ লিঙ্গ বৈষম্য এখানে
সবচেয়ে সক্রিয় ও নিবেদিতপ্রাণ আমেরিকান নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্টদের একজন হিসেবে সুনাম অর্জনের পর কেট মিলেট একটা শান্তিময় জীবন যাপনের জন্য চলে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের পেকিপসিতে, হাডসন নদীর ধারে। কিন্তু ২০১৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নারী অধিকার ও সমতার জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। লিখেছেন অসংখ্য নারীবাদী গ্রন্থ, যার মধ্যে সাড়া জাগানো একটি হল- সেক্সুয়াল পলিটিকস।
কেট মিলেটের এই সাক্ষাৎকারটি নেন সাংবাদিক ড্যানিয়েল ওলসেন, ২০১১ সালে। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করা হলো।
ওলসেন: জীবনের কোন মুহুর্তটিতে আপনার মনে হলো আপনাকে একজন নারীবাদী লেখক ও সমাজ সংস্কারক হতে হবে?
মিলেট: আমার যখন ৫ বছর বয়স, তখন মাকে একবার বলেছিলাম, ‘‘এই যে দেশের রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন একজন পুরুষ, পোপ একজন পুরুষ, সবাই পুরুষ- এটা একদম ঠিক না।” মা বলেছিল, ‘‘তা অবশ্য, তুমি যদি নারী হও, তবে তোমার সাথে সবসময় ভালো কিছু ঘটবে না।” আমি বলেছিলাম, ‘‘এই ব্যাপারটা আমার একদম ভালো লাগে না।” মা বলেছিল, ‘‘তুমি একদিন সব জানতে পারবে।”
আমার মা ফেমিনিস্ট ছিলেন। তিনি সেই নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন যখন নারীরা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিল।
ওলসেন: আপনার বই ‘সেক্সুয়াল পলিটিকস’ এ আপনি আধুনিক ঔপন্যাসিকদের সেক্সিজম আর হেটারোসেক্সিজমের সমালোচনা করেছেন এবং এর বিপরীতে তাদের চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতটিকে হোমোসেক্সুয়াল লেখকদের সাথে তাদের মতবিরোধের জায়গাটা তুলে ধরেছেন। এই লেখা এরকম একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, এটা কীভাবে জানলেন?
মিলেট: আমার মনে হয় সময় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এটা যদি তারা এক বছর আগে প্রকাশ করতো, তবে তেমন কোনো কিছু যায় আসতো না। আমার প্রকাশক আমাকে সমর্থণ দিয়েছে, এটা একটা বড় ব্যাপার।
সেক্সুয়াল পলিটিকস ছাড়াও আমি অনেকগুলো বই লিখেছি। এটা নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। হ্যাঁ এটা নির্যাতনের ইতিহাস, যা শুরু করেছে রোমান আর গ্রিকরা, শেষ হয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও লাতিন আমেরিকায়। কারণ রিগ্যান একদিকে রাশিয়ানদের নির্যাতন করা বন্ধ করলেন, আর অন্যদিকে লাতিন আমেরিকানদের অত্যাচার করা শুরু করলেন। রিগ্যান একটা গর্ধভ ছিলেন।
ওলসেন: শিল্প ও সাহিত্যে আপনার একটা জোরালো নারীকণ্ঠ রয়েছে। শিল্পে কি আপনি নির্লজ্জরকম সেক্সিজম দেখতে পান?
মিলেট: হ্যাঁ অবশ্যই, মানে আমি বলতে চাইছি, নাহলে আমরা গেরিলা গার্লসকে পেলাম কেন? ভীষণরকম নির্লজ্জ লিঙ্গ বৈষম্য আছে, বিশেষ করে আমেরিকায়।
ওলসেন: মার্চকে বলা হয় নারীর ইতিহাসের মাস। আপনার চোখে আদর্শ নারীবাদী কারা?
মিলেট: সুসান বি অ্যান্থনি। আপনি তো ঐতিহাসিক মানুষগুলো সম্পর্কে জানেনই। আর অ্যাক্ট আপ গার্লস এবং গেরিলা গার্লস। আরো অনেক নারীবাদী আছেন। আজকাল কাউকে কাউকে বলা হচ্ছে নারীবাদের কন্যা বা এরকম কিছু একটা।
ওলসেন: ১৯৭৯ তে আপনি নারী অধিকার ইস্যুতে কাজ করতে ইরান গিয়েছিলেন। আপনার মূল উদ্দেশ্য ও কাজটি কী ছিল?
মিলেট: আমরা একটা বিপ্লব আশা করছিলাম।
ওলসেন: ইরান সফর আপনার জীবনে কোন বড় প্রভাবটি রেখেছে?
মিলেট: অনেক কিছু। জাদুঘর বন্ধ ছিল। ফলে অনেক শিল্পকর্ম দেখতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক। একজনের সাথে কথা হলো, যে আবার ইরানে ফিরে গেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন সে তা করলো! কারণ জায়গাটি তো আবদ্ধ। কেউ কোনো সংবাদও পায় না। মেয়েটি বলেছিল, ‘‘এটাই আমার গন্তব্য।’’ ওই দেশের মেয়েরা ২৪ বছর ধরে এটার ভেতরে আছে, ভাবা যায়!
ওলসেন: আপনি এখন পেকিপসিতে উইমেন’স আর্ট কলোনি ফার্ম চালাচ্ছেন। আপনি নারী শিল্পী ও লেখকদের জন্য এই কম্যুনিটিটি কেন গড়ে তুললেন?
মিলেট: কেন গড়বো না বলুন তো? তাদের এখন বাস্তবতাকে জানবার সময় এসেছে তো…
ওলসেন: উইমেন’র আর্ট কলোনি কীভাবে কাজ করে?
মিলেট: আমরা এ বছর অনেককে প্রত্যাশা করছি। তারা ফার্মে আসেন এবং নানা শিল্প প্রকল্পের কাজ করেন। আমাদের অনেকখানি জায়গা আছে, অনেকটা, এবং একটা বড় জলাশয় আছে। খুব সুন্দর জায়গা। ডার্ক রুমও আছে। অনেক স্টাফ আছে।
ওলসেন: উইমেন’স আর্ট কলোনি বানাতে কতদিন সময় লাগলো?
মিলেট: ওহ আমার পুরো জীবনটাই লেগে গেছে বলা যায়। আমি চল্লিশ বছর এটা ধারণ করছি। তার মানে পিউরিটান হয়ে গেছি, তা নয়। আমি মিনেসোটার মানুষ। আমার নদী হাডসন নয়, বরং গ্রেট মিসিসিপি।
ওলসেন: আপনার নিজের কাজগুলো নিয়ে প্রিয় স্মৃতি কোনগুলো?
মিলেট: আচ্ছা, আমার বাবা মাকে দিয়ে শুরু করি। আমার বাবাকে ছাড়া ফার্মটা চালাতে পারতাম না আর মা না থাকলে ফার্মটা শুরুই হতো না। মায়ের মৃত্যর আগ পর্যন্ত আমি আমার প্রতিটা পান্ডুলিপি তাকে আগে দেখিয়েছি এবং তার মতামত নিয়েছি। আপনি জানেন আপনার মা-ই আপনার সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। তার চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। মা আমাকে বলেছিলেন, ‘‘যা তুমি জানো, লিখে ফেলো।”
ওলসেন: সমাজের তরুণ মেয়েদের প্রতি আপনি কী বলতে চান?
মিলেট: যেতে থাকো। কারণ শিগগিরই সমতায় গিয়ে শেষ করতে হবে। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত যেতে থাকো, থেমে যেও না। আপনি জানেন, ব্রাজিল নারী রাষ্ট্রপতি পেয়েছে। আইসল্যান্ডের সবখানে মেয়েরা আছে। আমরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। আমেরিকা। আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাতেও পিছিয়ে আছি। ওবামা তবু চেষ্টা করছেন। রিপাবলিকানরা সবকিছু নষ্ট করেছে। আপনি জানেন, তারা কী করে! এবং আপনি যদি বই লেখে…ওরে বাবা! যা কিছু আগে লেখা হয়েছে, সেটাই। আমার মনে হয় সবই সিনেমা হয়ে গেছে।
ওলসেন: সময়ের সাথে সাথে নারীবাদ নিয়ে আপনার চিন্তাধারা কি বদলে গেছে?
মিলেট: একদমই না।