হাইপেশিয়া ও অন্ধকার যুগের পরিণতি দেখে আমরা কী শিখেছি!
ক্যামেলিয়া আলম।। “রূপকথাকে রূপকথা হিসেবে, পুরাণকে পুরাণ হিসেবে এবং অলৌকিকতাকে অলৌকিকতা হিসেবে শেখানো উচিত। কারণ শিশুর মন সেগুলো বিশ্বাস করে নেয় এবং পরবর্তীতে কোন বড় আঘাত বা দুর্ঘটনাই সেগুলো মন থেকে মুছতে পারে না।”
কথাগুলো হেলেনীয় সভ্যতার এক নারীর যে শতকে নারীকে ভাবা হতো নীচু প্রজাতির, দাসী ছাড়া আলাদা কোন পরিচয় ছিল না নারীর। অ্যারিষ্টটলের নারীবিদ্বেষী শিক্ষার প্রভাব তখনও। সেই যুগে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক, যিনি পরবর্তীতে হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, সেই থিওন চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ে হাইপেশিয়া হয়ে উঠবে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বাবার সহযোগিতায় হাইপেশিয়া সমসাময়িক সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জ্ঞানার্জন করেন। শুধু জ্ঞান অর্জনই না, সেই জ্ঞানকে যৌক্তিক আর সহজভাবে কী করে উপস্থাপন করা যায় সেই কৌশল মেয়েকে শেখান। এতে হাইপেশিয়া যে কোনো বিষয়কে গভীরভাবে বুঝতে, তা অন্যকে সহজ করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে অল্পদিনের মাঝেই এক অসাধারণ বক্তা হিসেবে হাইপেশিয়ার নাম ছড়িয়ে যায়। বাবা থিওন যে কেবল মেয়ের মনোবিকাশই ঘটিয়েছিলেন তা কিন্তু না। মেয়ে যাতে ছেলেদের চাইতে কিছুতেই পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য তাকে সাঁতার, ঘোড়াদৌঁড় ও বিভিন্ন শারীরিক কসরত শেখান। আর এই মেধা ও শারীরিক সক্ষমতা তাকে সমাজের সকল পুরুষের মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে সাহসী করে তোলে।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে হাইপেশিয়া তার বাবাকে টলেমী’র ‘আলমাজেস্ট’ বইটি লিখতে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও বলা হয় যে, তিনি তার বাবাকে ইউক্লিডের ‘এলিমেন্টে’র নতুন সংস্করণটি তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন, যা ইউক্লিডের পরবর্তী সংস্করণগুলোর জন্য ভিত্তি হয়ে ওঠে। তার বাবার সাথের যৌথ কাজগুলো ছাড়াও হাইপেশিয়া এককভাবে ‘দোফান্টস এর এরিথমেটিকা’ ‘অ্যাপোলোনিয়াস এর কনিকস’ এবং ‘টলেমির জ্যোতির্বিদ্যা’ সংক্রান্ত কাজগুলোর উপর বিভিন্ন ব্যাখ্যা লিখেছিলেন। তবে সবচেয়ে দারুন বিষয় হচ্ছে, একজন তরুণী হিসেবে সেই সময় তিনি এক অকল্পনীয় অভিযানে বেড়িয়ে পড়েন, উচ্চতর শিক্ষার জন্য চলে যান এথেন্সে, দার্শনিক কনিষ্ঠ প্লুটার্ক ও তার মেয়ে এসলেপিজেনিয়া পরিচালিত গ্রিসের নিও-প্লেটোনিক বিদ্যালয়ে। এখানেই গণিতবিদ হিসেবে হাইপেশিয়ার সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
এথেন্স থেকে ফিরে হাইপেশিয়া মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনের উপর শিক্ষাদানের আমন্ত্রণ পান। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। এ ছিল সেই যুগের এক অনন্য ঘটনা। কারণ আলেকজান্দ্রিয়া তখন ছিল খ্রিষ্টানশাসিত সরকার। আর হাইপেশিয়া ছিলেন প্যাগান ধর্মের অনুসারী। অল্পদিনেই হাইপেশিয়া আলেকজান্দ্রিয়ার সেরা শিক্ষকে পরিণত হন। গণিত, দর্শন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা জটিল বিষয় এতো সহজ করে ছাত্রদের বোঝাতে পারতেন যে তাঁর এক বিশাল ভক্তকূল তৈরি হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা চলে আসতো তাঁর বক্তৃতা শুনতে। দিনের অধ্যাপনা শেষ করে সন্ধ্যার পর আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে সবার জন্য বক্তৃতা দিতেন। অভিনব ব্যাপার যে, সেই বক্তৃতা দিতেন কিন্তু দর্শনীর বিনিময়ে। এক মোহর করে দিতে হতো প্রত্যেককে তাঁর বক্তৃতা শুনতে হলে।
দর্শন, বিজ্ঞানের জ্ঞান বিতরণ ছাড়াও হাইপেশিয়া ছিলেন একজন আবিষ্কারক। জল নিষ্কাষণ যন্ত্র, জলের স্তর পরিমাপক যন্ত্র, তারা, গ্রহ ও সূর্য্যর অবস্থানের পরিমাপের জন্য আ্যাস্ট্রোলোব, তরলের ঘনত্ব পরিমাপের জন্য হাইড্রোমিটার তৈরি করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, জগতের সবারই জ্ঞান অর্জন করার আর মুক্ত চিন্তা করার অধিকার রয়েছে। নারীবাদের অন্যতম এক পথিকৃৎ হিসেবেও হাইপেশিয়ার তাই পরিচিতি আছে।
হাইপেশিয়া বলতেন, “নিজের চিন্তা করার অধিকারকে সংরক্ষণ কর। কারণ কিছু চিন্তা না করা থেকে ভুলভাবে চিন্তা করাও ভালো। মানুষ একটি সত্যের জন্য যতটা না লড়াই করে, তার থেকে বেশি কুসংস্কারের জন্য করে। কারণ কুসংস্কার সবসময়ই অস্পৃশ্য এবং অসার, কিন্তু সত্য হচ্ছে আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, তাই এটি পরিবর্তনশীল।”
তাঁর এই মুক্তচিন্তাই তখন উদীয়মান উগ্রবাদী ধর্মান্ধদের চোখের কাটা করে দেয় তাঁকে। আমরা জানি, মধ্যযুগের সূচনাকাল হিসেবে ধরা হয় খ্রিস্টান ধর্মের উগ্রবাদীতার প্রসারকে কেন্দ্র করে। এ কারণে মধ্যযুগকে অন্ধকার যুগও বলা হয়। রোমান সাম্রাজ্যে কন্সটান্টিনপলদের আমলে ধীরে ধীরে খ্রিষ্টানদের প্রভাব বাড়তে থাকে। রাজার উপর চার্চের প্রভাব বাড়তে বাড়তে একসময় মুক্ত চিন্তা আর মতপথের নগরী আলেকজান্দ্রিয়াকে সম্পূর্ণ চার্চের অধীনে আনার চেষ্টা চলে। শহরের গভর্নর অরিস্টিস তখন খ্রিষ্টান আর ইহুদিদের ভেতর সমঝোতা করানোর জন্য ইহুদিদের পক্ষ নিলে চার্চের বিশপ সেরিল এবং শহরের অন্যান্য খ্রিষ্টানরা চরম ক্ষেপে যায়। অরিস্টিসকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় চার্চের এক বিশপ।
এদিকে হাইপেশিয়ার সাথে অরিস্টিসের ছিল বন্ধুত্ব। রাজনৈতিক নানা ব্যাপারে অরিস্টিস তার সাথে আলোচনা করতেন এবং পরামর্শ নিতেন। ফলে হাইপেশিয়াও হয়ে যায় উগ্র ধর্মান্ধদের চোখের কাটা। আর কেবল অরিস্টিসের সাথে তার বন্ধুতাই না, পুরুষ অধ্যুষিত সমাজে হাইপেশিয়া যিনি কিনা একজন নারী, বীরদর্পে বিচরণ করছেন, প্রকাশ্যে নিওপ্লেটোনিজম ও প্যাগানিজম নিয়ে জ্ঞান বিতরণ করছেন, ধর্ম নিয়ে রীতিমতো তর্ক জুড়ে উপদেশ দিচ্ছেন ধর্মকে যুক্তিনির্ভর করতে, চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হাইপেশিয়া প্রত্যেককে স্বাধীন চিন্তায়ও উৎসাহিত করতেন। আর তাতে গেল ক্ষেপে ধর্মবাদীরা। এছাড়া হাইপেশিয়ার জনপ্রিয়তা, কথাবার্তা ও চালচলন স্বাভাবিকভাবেই ধর্মান্ধদের ভয়ও পাইয়ে দিয়েছিল, কেননা মুক্তচিন্তা মানেই চার্চের প্রতি অন্ধবিশ্বাসে ফাটল ধরার এক সম্ভাবনা। শুধু তাই ই না, মানুষের অন্ধ বিশ্বাস কেটে গেলে চার্চের তৎকালীন বিলাসী জীবনের অধ্যায়েরও পরিসমাপ্তি ঘটবে।
ধর্মান্ধরা হাইপেশিয়ার নামে নানা গুজব ছড়াতে শুরু করে। ডাইনি ও চার্চের শত্রু হিসেবে সাধারণের মগজ ধোলাই করতে থাকে। এর ফলে ৪১৫ সালের এক দুপুরে হাইপেশিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলেন, তখন পিটার নামক এক লোকের নেতৃত্বে একদল ধর্মান্ধ হাইপেশিয়াকে তার ঘোড়ার গাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে বের করে, তাকে বিবস্ত্র করে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে আসে। ভাঙ্গা টাইলস আর শামুকের খোলস দিয়ে খুবলে খুবলে তার মাংস ছিড়ে ফেলে তাকে হত্যা করে। এরপর তারা তার দেহাবশেষ আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এভাবেই শেষ করে দেয়া হয় সে সময়ের প্রথম নারী গণিতবিদ, দার্শনিক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং একজন অসাধারণ মুক্তমনা শিক্ষকের জীবন।
হাইপেশিয়ার পর আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির আর কোন শিক্ষক বা গবেষকের নাম পাওয়া যায় না। তাই ধারণা করা হয় তিনিই ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার শেষ গবেষক ও শিক্ষক এবং তার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি, যাদুঘর এবং এক জ্ঞাননির্ভর স্বর্ণালী সভ্যতার ইতিহাস, যা আবার ফিরে পেতে কয়েক হাজার বছর লেগেছিল পৃথিবীর।
হাইপেশিয়াকে মনে পড়ছে বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীর চলমান বাস্তবতাগুলো দেখে। নারী পুরুষের অসমতাকে প্রাকৃতিক হিসেবে চালিয়ে দেয়ার এক প্রবণতা এই সমাজে বেশ জোড়ালোভাবেই টিকে আছে। যতই মেরি ওলস্টোনক্রাফট বা বেটি ফ্রাইডান চিৎকার করুক না কেন, ভলতেয়ারের মতো সাহিত্যিকও নারী নিয়ে বলতে গেলে বলেছেন, নারীর যত গুণাবলীই থাকুক না কেন, তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতা কম। তাঁর বাক্যটি হুবহু মনে নেই, কিন্তু তাঁর কথার মূল বক্তব্য ছিলো তা-ই। আর এই ধারণা শতকরা আশি ভাগেরই, অনেক ক্ষেত্রে নারীর নিজেরই। অথচ নারীর এই হীন অবস্থানের জন্য দায়ী নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর।
হাইপেশিয়ার যুগেও নারীর অবস্থান কোনক্রমেই সুবিধাজনক ছিল না, হাইপেশিয়া এগিয়ে আসতে পেরেছেন বাবা সহযোগিতাটুকু করেছেন বলে। প্রায় ১৫০০ বছর আগেও এক বাবা ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর মেয়ে একজন পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হোক, যা এই যুগেও বহু বাবা মা ভাবতে পারেন কিনা সন্দেহ। আর যখনই সহযোগী পরিবেশ পেয়েছেন তখনই হাইপেশিয়া উদ্ভাবক, বীর ও চিন্তাশীল হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন। বিষয়টিই আসলে তাই। একটা সুস্থ সুন্দর পরিবেশই পারে উন্নত কোন মানুষ গড়তে। সেখানে লিঙ্গগত দিকটি সামনে এনে পার্থক্য সৃষ্টি করা এক ভয়ংকর অপরাধ।
বিশ্বাস এক শক্তিশালী চেতনা। প্লেটো একসময় বলতেন, শিশুকাল থেকে সন্তানকে গল্প বল যে, মানুষের দেহে কয়েকটি উপাদান আলাদা থাকে বলেই মানুষ আলাদা হয়ে যায়। তাদের শেখাও, কোন মানুষ স্বর্ণ, কোন মানুষ রৌপ্য আর কোন মানুষ তামা দিয়ে তৈরি। এতে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি অবস্থান সহজতর হবে। যার যার নিয়তি ভেবে সে তার অবস্থান অনুপাতে কাজ করবে স্বতস্ফূর্তভাবে। প্লেটোকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, এই অসত্যকে তারা সত্য বলে কেন মেনে নেবে? প্লেটো বলেছিলেন, সত্য না হলেও শিশুকাল থেকে তার এই গল্প তার ভেতরে বিশ্বাস হিসেবে স্থায়ীত্ব পাবে। ফলে সে ধীরে ধীরে তা-ই বিশ্বাস করবে।
বিষয়টিই আসলে তাই। আমরা শিশুকাল থেকে কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছি, সেই পরিবেশই আমার জীবনের দিক নির্ণায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে। ফলে একজন সন্তানকে মুক্তচিন্তার অধিকারী করা অত্যন্ত জরুরি। এতে অন্তত তার ভেতরে যুক্তিনির্ভর মানসিকতা গড়ে উঠবে।
একটা সুস্থ সুন্দর সমাজের জন্য ইতিবাচক ভাবনার জায়গাটি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গাটি যত দুর্বল থাকবে ততই অসুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। আত্মবিশ্বাস এক বড় গুণ। একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ কখনও কোনো কাজ সঠিকভাবে করতে সক্ষম হয় না। ফলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করা হয় সবার আগে।
গত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা বাড়ছে। আর এই প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আঘাতের শিকার হচ্ছে নারীরা। অথচ খুব বেশিদিন হয়নি এদেশে নারীমুক্তি আন্দোলনের। উনবিংশ শতক থেকে নারীরা একটু করে এগিয়ে আসা শুরু করেছিল। নারীর এই ইতিবাচক ভূমিকা শুরু হতে না হতেই আবারও তাদের কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা বাড়লেও মানসিক বিকাশে নারীরা প্রবলভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের চলাফেরা, পোশাক পরিচ্ছদ, কী করতে পারবে আর পারবে না তার এক আনভ্যালিড রুল গড়ে উঠছে সমাজে। অথচ ইতিহাসের অন্ধকার যুগের পরিণতি নিয়ে এ যুগে চিন্তা থাকা উচিৎ ছিলো। পুরনো যুগ পেরিয়ে নতুন যুগ হতে পারতো সমন্বয় আর সহযোগিতার। আজ থেকে দের হাজার বছর আগে হাইপেশিয়া যা করে দেখিয়েছিলেন তার থেকে আরও এগিয়ে যাবার কথা ছিল এই যুগের কোন নারীর। গণিতবিদ থিওনের মতোন একজন বাবা আর মা থাকার কথা ছিল এই যুগে এসে। যেখানে তার পুত্র হোক আর কন্যা হোক, একজন মুক্ত ও যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি।
আমরা কী সেই ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনছি যে যুগে মুক্তচিন্তার লাখ লাখ নারীকে লুসিফার (ডাইনি/ শয়তান) আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। সূচনা ঘটেছিল এক অন্ধ, বর্বর, অবৈজ্ঞানিক ও ধর্মান্ধ যুগের। যদিও তাঁদের সেই ধর্মবাদী চিন্তাচেতনা স্থায়ীত্ব পায়নি। পুরোহিতদের বিলাসী ও ব্যাভিচারী জীবন দেখে চার্চের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হতে থাকে। একসময় তাদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ রাজতন্ত্রের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সেই অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন চার্চের ধর্মভিত্তিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন। সেই দাগ এখনও আছে ইউরোপীয় সমাজে। ইতিহাসের এই জ্বলন্ত প্রমাণ দেখেও কি আমরা নিজেদের সঠিকপথে নেবার চেষ্টা চালাতে পারি না?
হাইপেশিয়ার স্মরণে চাঁদের একটি অংশকে নামকরণ করা হয়েছে ‘হাইপেশিয়া’, যেটি চাঁদের একটি গিরিখাত। দূর থেকে জ্বলজ্বল করা চাঁদ মনে করায় আলোকবর্তিকা হাইপেশিয়াকে। প্রাণমন দিয়ে চাই, এ যুগে জন্ম নিক শত শত হাইপেশিয়া। যারা অন্ধকার সমাজ ফুৎকারে উড়িয়ে দিক বাতি হয়ে। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকি!