December 23, 2024
সাহিত্যফিচার ২স্যাটায়ার

গার্ড অব অনার নয়; বার্ড অব অনার

মাসকাওয়াথ আহসান।। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান শাজাহান খান বলেন, একাত্তরের রাজাকারের তালিকাটা ফাইনাল করে না কেন মন্ত্রণালয়; কী তার কাম এতো!

মডেল মসজিদের খতিব বলেন, হুজুর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে দেয়া ‘গার্ড অব অনারে’ নারীর উপস্থিতি হারাম। নারী হইতাছে ঘরের ‘বার্ড অব অনারে’র জন্য সৃজিত। জীবনের শস্যক্ষেত্রে ঐ পাখি তো যন্ত্রণা; আর তো প্রাণে সহে না।

খান সাহেব ফতোয়াটা লুফে নেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র থেকে উনি এখন অবৈজ্ঞানিক অনুভূতিতন্ত্রের নায়েক হয়েছেন। উনি স্পষ্ট করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কোন বীরের মৃত্যু হলে; তার রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় নারী ডিসি-ইউএনও-র উপস্থিতি সম্পর্কে অনেক অভিযোগ পাই; নিউ মদিনার তপ্ত বালুরাশির কাছে।

বালুর ফতোয়াটা বা**লের ফতোয়া হয়ে মিডিয়া মাতালে; কেউ কেউ বলে; একাত্তরের রাজাকারের তালিকাটা শেষ করে; ২০২১-এর রাজাকারের নতুন তালিকায় হাত দিন। আর কত একাত্তরের রাজাকারের চেবানো চুইংগাম চিবিয়ে; এমন চলমান হত্যা-ধর্ষণ-দখলের নব্য রাজাকারের কুমিরডাঙ্গাটিকে আড়াল করবেন আর!

চলচ্চিত্র বাঁচাতে দূরশিক্ষণ উপাচার্য উইলিয়াম জানিপপ ফিল্মে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেখানে তার সংলাপ, সূর্য কোথায় সূর্য! উপস্থিত অন্য পুলিশেরা সমস্বরে আর্তনাদ করে, সূর্যকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হতে চাই।

সূর্য যেহেতু হারিয়ে গেছে; তাই রাত তিনটায় ‘লাইলাতুল ক্লাস’ আয়োজন করেন উপাচার্য উইলিয়াম জানিপপ। লাইলাতুল ইলেকশান সর্বৈব সুষ্ঠু হয়েছে; এই প্রতিবেদন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ); ভোটসমনিয়ার জয়গান গাইলে; উইলিয়ামকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হয়; রাতের ক্লাসে ‘মোমবাতি জ্বেলে রোকেয়ার পড়াশুনা’র কিংবদন্তীর প্ল্যানচেট ভার্চুয়াল মঞ্চায়নে। আদালত উইলিয়ামকে বকা দিয়ে দেয়, ‘নিজেকে আর উপাচার্য হিসেবে পরিচয় না দিয়ে এনজিও’র দোকানদারের স্বপরিচয়ে উদ্ভাসিত হোন হে জানিপপ’।

লাইলাতুল ইলেকশানের বাহুবলীরা শুধু ইউনিভার্সিটি নয়; তুরাগ নদীর পাশে খাস জমি দখল করে ‘নুকা ক্লাব’ গড়ে তোলে; সেইখানে চলচ্চিত্র বন্ধু পুলিশ চলচ্চিত্রের তারকাদের লাইলাতুল ক্লাস আয়োজন করে।

উত্তরায়ন ইক্ষুকলের প্রেসিডেন্ট খাসিরুদ্দি; ইউনিভার্সিটি অফ সিটিজেন সুগারকেন’ থেকে চিনি বিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নেন; চিনিবিদ কবি ও রঙ্গভবনের সাবেক এক প্রেসিডেন্টের অধীনে। এরপর ‘নুকা ক্লাবে’র প্রেসিডেন্ট ‘চলচ্চিত্র বন্ধু’র সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে সেখানে লাইলাতুল ক্লাস নিতে যান।

পরিকল্পনামন্ত্রীর মোবাইল ফোন বিজয় সরণিতে ছিনতাই হয়ে গেলে; পরিকল্পনার পরী উড়ে যায় ডানা মেলে; রয়ে যায় কল্পনা। সেই পরীমণি চলচ্চিত্র বন্ধুর বিদ্যাপীঠ ‘নুকা ক্লাবে’ লাইলাতুল ক্লাসে গেলে; ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি খাসিরুদ্দি গেয়ে ওঠে, আমি চিনি গো চিনি তোমারে; ওগো পরীমণি; তুমি থাকো রুপালী পর্দাতে; ওগো পরীমণি।’

পরীক্ষায় একটু ভালো গ্রেড দেবার কথা বলে চিনি দাদু পরীমণির দিকে তাকিয়ে বলে, দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি। পরীমণি অবাক হয়ে যায়, বাপের বয়েসী লোক এসব আবার কী বলে! ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি উন্নয়নের ‘কামসূত্র’ পড়াতে পড়াতে বলেন, উন্নয়নের প্রধান সূচক হচ্ছে, সুগার ড্যাডিরা কত বেশি চিনি পান করতে পারেন। যে দেশ যত উন্নত; সেই দেশে চিনি দাদুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই চিনি দাদুরাই বসুন্ধরার দ্রুততম ধনী। কাজেই অযথা ভ্যাগাবন্ড তরুণ বিএফ বা ক্রাশ নয়; সুগার ড্যাডি ভজ; সুগার ড্যাডি ধরো; ওরে পরীমন।

পরীমণি পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে; পুলিশ বলে, উত্তরায়নের প্রেসিডেন্ট নুকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট চলচ্চিত্রবন্ধুর বন্ধু। প্রেসিডেন্ট-শিয়ালদের জঙ্গলে পুলিশের দারোগা তো সামান্য বড়ে; নিধিরাম সর্দার।

যে চলচ্চিত্র বন্ধু পল্লীবন্ধুর মতো দয়াশীল; তিনিও সাড়া দেননা পরীমণির সাহায্যের আবেদনে। উনি গেয়ে ওঠেন, যদি তারে নাই চিনি গো চিনি; সে যে এখন খেলছে আমার ভাবমূর্তির ছিনিমিনি; যদি পরী নাই চিনিগো চিনি।

ইক্ষুকলের বিজ্ঞাপনে চালু মিলনকণ্ঠ ও খবর রূপান্তরের মিডিয়ারা; ‘নো ওয়ান কিল্ড’ মুনিয়া ফিল্ম বক্স অফিস হিট করানোর পর; এবার ক্র্যাবের সাংবাদিকেরা, পরীমণি কেন দুঃশ্চরিত্র’ ফর্মুলা মুভি নিয়ে হাজির হয়ে যায় লোকালয়ে। যৌবন জ্বালা নিও ওয়েভের ওয়েব সিরিজের দর্শকেরা; মিডিয়ার খবরের লিংকে, কলংকিনী পরীমণি জারি ও সারিগান শুরু করে।

মুসলমান অ্যাকসেস টু টেকাটুকা (এটুটু) প্রকল্পে দ্রুত বড়লোক হলে; তখন সে যুবতী নারীর কোল আর মৌরালা মাছের ঝোল পছন্দ করে। ফলে পিউ-পাপিয়ার বুলবুলি আখড়াই-এর দুর্জয় লিবিডো ধারাপাতের শিখরে পৌঁছে যায় তার উত্তেজনা।

মাঝবয়েসী ও প্রাক-বৃদ্ধা স্বামী গরবে গরবিনীরা ফেসবুকে এসে ছ্যা ছ্যা করে, আসলে এই মাইয়াগুলিরই ক্যারেক্টার খারাপ। বড়লোক ইক্ষু কলের মালিক দেখলেই এরা কাস্পিয়ান সাগরের প্রমোদতরীতে যাইতে চায়। সেইখানে দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘নুকা ক্লাবের প্রমোদতরী’-তে আমন্ত্রণ জানাইলেও অগো আর মন পাওন যায় না। কী সব লোভী মেয়ে মানুষরে বাবা; আমরা বাবা সতী; আমাদের পতিরা সবসময় নির্দোষ। পুরুষ মানুষের এক আধটু পটেটো প্রবলেম থাকতেই পারে; তুমরা ক্যামুন মেয়ে গো; খালি তুমরা বাপের বয়েসীর লগে চ্যাটিং করো কেন!

২০২১-এর খানেরা চুকচুক করে ফতোয়া দেয়, বন্যেরা ‘গার্ড অব অনারে’ সুন্দর; আর নারী সুন্দর ‘বার্ড অব অনারে।’