November 21, 2024
কলামফিচার ৩

নারীবাদীদের সাথে তাদের কীসের এতো শত্রুতা?

ইমতিয়াজ মাহমুদ।।

 

১.

সেদিন একটা টক শো হচ্ছিলো, মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ বিদায়ে যে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় নারী কর্মকর্তাদেরকে সেই গার্ড অব অনারের দায়িত্ব থেকে দূরে রাখার জন্যে সংসদীয় কমিটির যে প্রস্তাব ছিল সেটা নিয়ে। আলোচকদের মধ্যে দুইজন হচ্ছেন কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, আরেকজন হচ্ছেন সুলতানা কামাল। একটা পর্যায়ে কাজী ফিরোজ রশিদ ক্ষেপে গেলেন, ক্ষেপে গিয়ে চীৎকার শুরু করলেন, বঙ্গবন্ধু যেদিন সপরিবারে নিহত হলেন সেদিন তো তাঁর সাথে তাঁর পরিবারের নারীরাও নিহত হয়েছিলেন, নারীবাদীরা তখন কোথায় ছিল? নারীবাদীরা সেদিন প্রতিবাদ করেছে? ইত্যাদি। এই লেখাটা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সেই প্রস্তাব নিয়ে নয় বা ১৫ই আগস্ট নিয়ে নয়। কাজী ফিরোজ রশিদের সেই কথা নিয়ে আলোচনা করবো না। সেদিনের কথাটা মনে পড়েছে উদাহরণ হিসাবে।

দেশের সিংহভাগ নারী ও পুরুষই নারীবাদীদেরকে অপছন্দ করে, কেউ কেউ তীব্র ঘৃণাও করে আর সমাজের স্থিতিশীলতা শৃঙ্খলা ইত্যাদির দুশমন মনে করে। এই রকম কথা আপনি মাঝে মাঝেই শুনতে পাবেন, নারীবাদীরা কোথায়? এই যে ফিরোজ রশিদ প্রশ্ন করলেন নারীবাদীরা ১৫ই আগস্ট কোথায় ছিল, এটা আমি এই প্রথম শুনেছি বটে। কিন্তু কথাও যদি যৌতুকের দাবিতে একজন শাশুড়ি তার পুত্রবধূকে মারধোর করে, বা কোনো নারী সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়, খবর পেলেই ওরা চীৎকার করে উঠবে, নারীবাদীরা কোথায়। একজন মহিলা রাজনীতিবিদকে তো একবার বলতে শুনেছি (সংসদে বলেছিলেন সম্ভবত, স্পষ্ট মনে নাই) যে, দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও অনাচার বৃদ্ধির কারণও নাকি নারীবাদী তৎপরতা!

নারীবাদ ও নারীবাদীদের এদের প্রতি এইরকম বৈরিতা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সেটা কেবল পুরুষরাই পোষণ করে না, নারীরাও করে। আর এই বিদ্বেষ কেবল ঢাকা শহর বা বাংলাদেশেই বিরাজ করে না, এটা মোটামুটি পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজ করে। নারীবাদীরা মন্দ, নারীবাদীরা পুরুষ বিদ্বেষী, নারীবাদীদের ক্যারেক্টার খারাপ, রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে বিড়ি সিগারেট খায়, মদ খায় গাঁজা খায় এই রকম নানা কথা তো আমরা হরদম শুনি। এইসবের সাথে আপনি মাঝে মাঝে মাঝেই একটা কথা শুনবেন, ‘আমি নারীবাদী না’ বা ‘আমি যদিও নারীবাদী নই তবুও’ ইত্যাদি। বিশেষ করে কোনো নারী যখন নারীর পক্ষে বা নারী অধিকারের পক্ষে কোন কথা বলতে যান তখন শুরুতেই এই কথাটা বলে নেন। কেন? কারণ নারীবাদী বলতে যে নেতিবাচক বা বৈরি ধারণাটা সমাজে বিরাজ করে সেটা তিনি নিজের গায়ে মাখাতে চান না।

২.

নারীবাদ ও নারীবাদীদের সম্পর্কে কেন সমাজে এইরকম নেতিবাচক ধারণা বিরাজ করে? আসলেই কি মানুষ এই ধারণাটা পোষণ করে? নাকি কেবল নারীবাদীদেরকে হেনস্থা করার জন্যে বা ওদেরকে ছোট করে দেখানোর জন্যে এইসব কথা বলে? আপনার কি কখনো মনে হয়নি যে আমাদের দেশে (এবং সেই অর্থে কমবেশি পৃথিবীর সর্বত্রই) নারীবাদ ও নারীবাদীদের সম্পর্কে একদল মানুষ পেটে পেটে তীব্র ঘৃণা বা বৈরিতা পোষণ করে? যেন নারীবাদীরা হচ্ছে মানব সমাজের দুশমন, ওদেরকে যে কোন অবস্থাতেই গালি দিতে হবে, ছোট দেখাতে হবে, হেনস্তা করতে হবে বা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ভাষাটা ব্যবহার করা হয়- প্রতিরোধ করতে হবে। এইটা কেন হয়?

খুব সংক্ষেপে বললে, নারী অধিকারের কথা যেই বলুক, যেভাবেই বলুক বা যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকেই বলুক, কোনো না কোনোভাবে সেই কথা বিদ্যমান সমাজ কাঠামোকে আঘাত করবেই। কীভাবে?

প্রথমত নারীবাদের সবকয়টা ভাগেই মূল যে কথাটা, নারী অধিকারের সকল কথার যে মূল কথা যে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ করতে হবে, এই কথাটা সমাজের সিংহভাগ মানুষ সমর্থন করে না। ধর্ম বলেন, সংস্কৃতি বলেন বা প্রথা প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বা প্রচলিত রীতিনীতি বলেন, সবকিছুই পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর অনুকূলে তৈরি করা। সমাজে নারী ও পুরুষ কোনো প্রচলিত বিধানেই সমান মর্যাদার নয়। সেখানে  আপনি যদি বলেন যে না, নারী ও পুরুষ সমান- তাইলে আপনি কী করছেন? আপনি আসলে প্রচলিত সমাজের কাঠামোকেই অস্বীকার করছেন। আপনার সমতার দাবি আসলে সমাজের মূল কাঠামো ধ্বংসের দাবি। তাইলে যারা সমাজের বর্তমান কাঠামো ধরে রাখতে চায় ওরা সেটা পছন্দ করবে কেন? সমাজের বেশিরভাগ মানুষই তো চায় যে প্রচলিত সমাজের রীতিনীতি বিশ্বাস বিধি বিধান বজায় থাকুক, সকলে সেগুলি মেনে চলুক।

কল্যাণ ভিক্ষা যদি করেন তাইলে অনেককেই আপনি সাথে পাবেন। যদি বলেন যে না, মেয়েমানুষ দুর্বল মেয়েমানুষ অসহায়, ওদেরকে একটু সাহায্য করেন, তাইলে অনেককেই পাবেন আপনার সাথে। কারণ কল্যাণের প্রার্থনা করা হয় বৈষম্য মেনে নিয়েই। কিন্তু আপনি যদি অধিকারের দাবি করেন, যদি বলেন যে না, নারী ও পুরুষ সমান, তাইলে দেখবেন সবাই আপনাকে গালি দিতে থাকবে। নারীবাদ তো কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা নয়, সমতার অধিকারের দাবি। সুতরাং প্রচলিত সমাজ নারীবাদ ও নারীবাদকে গালি দিবে না তো কী করবে?

৩.

আর নারীবাদ তো হচ্ছে একটা রাজনীতি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয় বটে কিন্তু প্রতিটা নারীবাদী দাবি বা নারীবাদী কর্মসূচী হচ্ছে রাজনৈতিক দাবি ও রাজনৈতিক কর্মসূচী। অন্য ভাষায় বললে, নারীবাদ হচ্ছে একটা ক্ষমতার সংগ্রাম। কী রকম?

নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান ক্ষমতার বিভাজনটা কী? পুরুষ হচ্ছে ক্ষমতাবান বা শাসক আর নারী হচ্ছে ক্ষমতাহীন বা শাসিত। ক্ষমতার ভাগ যদি আপনি চান তাইলে আপনাকে শারীরিকভাবে অথবা চেতনাগতভাবে পুরুষ হতে হবে। এইটার প্রতিফলন আপনি আমাদের ভাষায় দেখতে পাবেন। ‘পুরুষ সিংহ’, ‘প্রকৃত পুরুষ’ ‘পৌরুষ’ ‘ব্যাটাছেলে’ বা ‘ব্যাটাই একটা’ এইগুলি কথার অর্থ কী? এইগুলি কথার অর্থই হচ্ছে যে ক্ষমতাবান হওয়া মানেই পুরুষ হওয়া, শক্তিমান হওয়ার মানেই হচ্ছে পুরুষ হওয়া। এইখানে দেখবেন একজন নারীও যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন, আমাদের শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া বলেন বা ইন্দিরা গান্ধী বলেন বা গোল্ডা মেয়ার বা মারগারেট থেচার বলেন, ওরা কখনো নারী ও পুরুষের সমতার দাবি করেন না। মুখে যদি বলেনও কখনো কখনো, দেখবেন যে সেগুলি ওদের কর্মসূচীতে প্রতিফলিত হয় না। কেননা চেতনায় ওরাও পিতৃতন্ত্রেরই সমর্থক বা ক্ষমতার মালিক পুরুষ, সেই আদর্শেরই সমর্থক।

আর নারীবাদ মানেই হচ্ছে যে না, ক্ষমতার এই বিভাজন ভাঙতে হবে। এই যে ক্ষমতার মালিক পুরুষ, হোক সেটা পরিবারে, গ্রামে, পাড়া মহল্লায় বা রাষ্ট্রীয় জীবনে, এইটা তো নারীবাদ মানে না। নারীবাদীদের কথাই হচ্ছে যে এই পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ- অর্থনীতি ও সংস্কৃত দুই মিলেই- এই সমাজ চলতে পারে না, এমন সমাজ গড়তে হবে যেখানে নারী ও পুরুষ সমান। অন্যভাবে বললে, ক্ষমতার পুরুষতান্ত্রিক একচেটিয়া বা মনোপলি, সেটা ভাঙতে হবে। তাইলে রাজনীতি হিসাবে নারীবাদের প্রতিপক্ষ কে? পুরো পুরুষ সমাজ, পুরুষতন্ত্রের সমর্থক নারী ও পুরুষ সকলেই। ওরা তো সংখ্যায় বেশি, বিপুল প্রবলভাবে বেশি। আর নারীবাদীরা হচ্ছে কম, খুবই কম। এই অল্প সংখ্যক বেয়াদব মেয়েমানুষের কথা এই বিপুল প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ ও ওদের সমর্থক নারীরা পছন্দ করবে কেন? করবে না। ওরা তো গালি দেবেই।

আর ওরা নারীবাদীদেরকে পুরুষবিদ্বেষী হিসাবে চিহ্নিত করবে। কেননা আপনি তো পুরুষের ঐ ক্ষমতার একচেটিয়া অধিকার বা পাওয়ার মনোপলি ভেঙে দিতে চান।

৪.

আর এই যে নারী ও পুরুষের সমতার দাবি অর্থে নারীবাদ, সেটা তো কেবল ভোটাধিকারের সমতায় থেমে থাকেনি। ভোটাধিকারের দাবি, সেটা ছিল প্রথম তরঙ্গ। সেই প্রথম তরঙ্গ থেকেই তো মার্ক্সবাদী ও সমাজতন্ত্রীরা বলে এসেছেন যে- না, কেবল ভোটাধিকারের দাবি হলেই নারীর মুক্তি ঘটবে না, আমাদের যেতে হবে আরও বহুদূর। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ভোটাধিকারের দাবি বা রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার পূরণ হওয়ার পর দেখা গেল যে, আরেহ, সমাজতন্ত্রী ও মার্ক্সবাদীরাই তো ঠিকই বলেছিল। ভোট দিতে পারছি বটে, কিন্তু বৈষম্য তো যাচ্ছে না। বৈষম্যের মূল কারণ সমাজতন্ত্রীরা চিহ্নিত করল শ্রেণি বিভাজন আর অন্যরা চিহ্নিত করল প্যাট্রিয়ার্কি। নারীবাদীরা দাবি করলো যে না, প্যাট্রিয়ার্কি আমরা মানি না। আর সমাজতন্ত্রীরা বলল, না এই সমাজ আমরা মানি না। দুইদল মিলে বলল, নারী পুরুষের বৈষম্য চলবে না, বৈষম্য দূর করতে হবে।

বৈষম্য চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখা গেল যে বৈষম্য তো জীবনের সর্বত্র। সর্বক্ষেত্রে। স্বামী-স্ত্রীর বিছানা থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউস পেন্টাগন ওয়েস্টমিনিস্টার বা বঙ্গভবন- সর্বত্র। কবির কবিতার খাতা, শিল্পীর ক্যানভাস, সিনেমার ফিল্ম থেকে শুরু করে খেলার মাঠ ক্লাসরুম কারখানা স্টক এক্সচেঞ্জ চায়ের দোকান সর্বত্র। এখন নারীবাদীরা কি তাইলে জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈষম্য মেনে আর অল্প কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা সুযোগ সুবিধা পেয়েই চুপ করে যাবে? না, সে তো হবে না। কেন আমি বৈষম্য মেনে নেব? আমি কি মানুষ নই? আমি কি পুরুষের তুলনায় কম মানুষ?

সমাজ তখন বলল যে- না, তুমি পুরুষের সমান মানুষ নও, তুমি পুরুষের চেয়ে একটু কম মানুষ। সমাজ এইসব কথাকে একটু চিনি মাখিয়ে বলে- বলে কিনা তুমি হচ্ছ মায়ের জাত, তোমার গর্ভে সন্তান হয়, তুমি যদি বেয়াড়াপনা কর তাইলে মানবজাতির কী হবে? নারীবাদীরা বললেন, বটে! গর্ভ হচ্ছে আমার, জরায়ু হচ্ছে আমার, আমার শরীরের অংশ, আর মালিকানা ফলাবে সমাজ? সমাজ এই কথা পছন্দ করবে? কেন করবে? সমাজ তো বলবে যে- না, নারীর গর্ভ নারীর জরায়ু নারীর শরীর সবকিছুই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম শৃঙ্খলা দিয়ে শাসিত হবে। কিন্তু নারী সেটা মানবে কেন? নিতান্ত পুরুষের অনুগত না হলে তো নারী বলবেই যে না ভাই, আমার শরীরের মালিক আমিই? বলবে?

তখনই সংখ্যাগুরু আপনাকে বলবে কুলটা, চরিত্রহীনা। তোমার শরীরের মালিক তুমি সেটা আবার কেমন ছে*না*লি কথা! তোমার শরীরের মালিক তো পুরুষ।

(৫)

নারীবাদ ও নারীবাদীদেরকে সমাজ এইজন্যেই গালি দেয়। এমনিতে অনেককে দেখবেন নারীবাদীদেরকে হয়তো গালি দিচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু মিনমিন করে বলবে যে, না, নারীর সমান অধিকারের কথা তো মানি, ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে বাড়াবাড়ি করা তো ঠিক না। এরা হচ্ছেন ভদ্রলোক প্যাট্রিয়ার্ক। ভদ্রলোক প্যাট্রিয়ার্ক কেউ যখন বলে যে বাড়াবাড়ি করা তো ঠিক না, আপনি জিজ্ঞাসা করে দেখবেন, কাকা, বাড়াবাড়ি মানে কী? উদাহরণ দেন। তখন দেখবেন যে ওরা উদাহরণ দেবে, এই যে ফস ফস করে সবার সামনে বিড়ি খাওয়া, দিন রাত যখন তখন রাইরে ঘুরাঘুরি করা, আক্রমনাত্মক কথাবার্তা, পোশাক আশাক এইরকম নানা উদাহরণ দেবে। হয়তো বলবে যে, নারীর সমান অধিকার তো আমিও চাই, কিন্তু জরায়ুর স্বাধীনতা এগুলি আবার কী কথা ইত্যাদি।

ভদ্রলোক প্যাট্রিয়ার্করা যেটা ভুলে যান সেটা হচ্ছে যে বিড়ি খাওয়া বা মদ গাঁজা এগুলি মন্দ হলে নারীর জন্যে যেমন মন্দ পুরুষের জন্যেই ঠিক ঐটুকুই মন্দ। তিনি এইগুলির বিপক্ষে বললে দোষ নাই, দোষ হচ্ছে বৈষম্য করার মধ্যে। বিশেষ করে মেয়েটিকেই তিনি কেন এইগুলি নিয়ে লেকচার দিতে আসছেন? ভদ্রলোক প্যাট্রিয়ার্কদের সমস্যা হচ্ছে এরা নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল বটে, কিন্তু সেটা হচ্ছে অনেকটা পশুক্লেশ নিবারনী ধরণের সহানুভূতি। এরা ভাল মানুষ, এরা চান যে নারীর কল্যাণ হোক, সেই পর্যন্ত ভাল আছেন। কিন্তু নারী ও পুরুষের সাম্য ওরা চান না। ওদের কথা হচ্ছে নারীদেরকে লিমিটেড অটোনমি ধরণের স্বাধীনতা দেওয়া যায় কিন্তু সাম্য কখনো নয়। ওরা ‘স্বাধীনতা দেওয়া’ পার্টি। আমার স্ত্রীকে আমি স্বাধীনতা দিই, আমার কন্যাকে আমি স্বাধীনতা দিই ইত্যাদি। নারীকে এরা পুরুষের সমান বিবেচনা করেন না।

আরেকদল আছেন যারা মনে করেন যে নারীকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়ে গেছে, এখন আর নারীবাদীরা কী চায়? এইসব জরায়ুর স্বাধীনতা এইসব তো সমানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে ইত্যাদি। সেই একই কথা, নারীকে সীমিত আকারে পরিমিত মাত্রার স্বাধীনতা প্রদান। যেন দয়া করে খানিকটা ছাড় দিচ্ছেন- নারী অসহায়, নারী মায়ের জাত, নারী দুর্বল ইত্যাদি। নারী কী করে পরুষের সমান হবে? নারী কী করে ওর নিজের দেহের মালিক হবে? নারী কেন ওর নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে?

কিন্তু নারীবাদীরা এই কথা মানবে না। নারীবাদীরা বলবে যে আমি বৈষম্যের বিলোপ চাই। তখন এইসব ভদ্রলোকেরাও বলে যে- না ভাই, এটা তো বাড়াবাড়ি, নারীবাদ জিনিসটা ভাল না।

৬.

একটা কোটেশন দিই। রেবেকা ওয়েস্ট নামে এক লেখক বলেছেন কথাটা, যে ““People call me a feminist whenever I express statements that distinguish me from a doormat.” মানে হচ্ছে নারী হচ্ছে পাপোশের মত, পাপোশের মতোই থাকবে। নারী যখন এমন কিছু বলে যাতে মনে হয় যে সে ঐ পাপোশ স্ট্যাটাসটা মেনে নিচ্ছে না, তখনই তাকে ওরা বলে নারীবাদী। আপনি যদি নারীবাদী হন, তাইলে আপনি হচ্ছেন বেয়াদব। আপনি আপনার সেই শতাব্দীপ্রাচীন পাপোশ স্ট্যাটাসটা মানতে চাইছেন না। তাইলে সমাজ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আপনাকে গালি দেবে না তো কি চুমা দেবে?

আপনি যদি দাবি করেন যে নারী ও পুরুষ সমান, তাইলে আপনি প্রচলিত সকল ধর্মবিশ্বাসের বিপরীতে কথা বলছেন। ওরা আপনাকে গালি দেবে না? এইটাই লড়াইয়ের নিয়ম, ওরা আপনাকে দমন করতে চাইবে, হত্যা করতে চাইবে, আঘাত করতে চাইবে। সুযোগ পেলেই আপনাকে আঘাত করবে। গালি হচ্ছে সেইরকম আঘাতেরই একটা অংশ। অধিকারের জন্যে লড়বেন তো এইরকম গালি শুনতেই হবে। লড়াইয়েরই অংশ এটা। যতদিন গালি খাবেন, মনে করবেন আপনি আছেন লড়াইতে, ঠিক পথে।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]