বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী নিজে কি একজন নারীবাদী?
জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলকে নিয়ে এই প্রতিবেদনটি গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন কাজী নাজীফা লামিনূর ।।
জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই নারী ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর একজন নারীবাদী আদর্শ হয়ে ওঠেন। পদত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিজেকে নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন এবং স্বীকার করেন যে লিঙ্গ সমতার বিষয়টি এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। জার্মান নারীবাদকর্মী অ্যালিস শোয়ার্জার রয়টার্সকে বলেন, “মার্কেল সারা বিশ্বে নারীদের কাছে প্রশংসিত, এটি তার বড় অর্জন। একজন নারী হিসেবে তিনি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন এবং মর্যাদা ও সংকল্পের সাথে কাজ করে গেছেন”।
অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বেড়ে ওঠেন পূর্ব জার্মানিতে। তিনি একজন সাবেক কমিউনিস্ট, তিনি কোয়ান্টাম রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটস (সিডিইউ), যেখানে রক্ষণশীলতা ও পুরুষতন্ত্রের চর্চা করা হয়, সেখানে উচ্চপদে একজন নারীর নেতৃত্ব থাকাটা বেশ অস্বাভাবিক। শুরুতে মার্কেল নারীবাদ সমর্থক ছিলেন না এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাজের ক্ষেত্রে কিছু নারীবাদী নিয়ম-নীতি মেনেছেন।
বিগত এক বছর তিনি বিশেষ কোনো নারীবাদী কাজে অংশ নেননি। তবে তিনি ন্যায্যতার পক্ষে ছিলেন। শোয়ার্জার বলেন, “মার্কেল এমন নীতি সমর্থন করতেন যা নারীদের জন্য সহায়ক, যেমন শিশুদের লালন-পালনে রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন বরাদ্দ রাখা”।
২০১৭ সালে তৎকালীন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দে এবং মার্কিন কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয় নিজেকে তিনি নারীবাদী মনে করেন কিনা। মার্কেল এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান এবং বলেন, “আমি আসলে এমন শিরোনাম দিয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চাই না”।
২০১৩ সালে মার্কেল নাইজেরিয়ান লেখক চিমামান্ডা এনগোজি আদিচির সাথে একটি আড্ডা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমাদের সকলের নারীবাদী হওয়া উচিত”। সে সময় তার এমন বক্তব্য যথেষ্ট আলোচিত হয়।
যুদ্ধ পরবর্তী পশ্চিম জার্মানির বিশিষ্ট নারী রাজনীতিবিদদের গল্প নিয়ে নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে মার্কেল বলেন, সংসদে নারীদের এখনও মাত্র ৩১ শতাংশ আসন, এই বিষয়টি তাকে খুব হতাশ করে। তিনি আরো বলেন, “আমরা এখনও জার্মানিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা অর্জন করতে পারিনি। এ বিষয়ে অনেক কাজ করা বাকি আছে”।
শোয়ার্জার মনে করিয়ে দেন সেই ২০০৫ সালের নির্বাচনের কথা। জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলরকে ক্ষমতায় দেখার জন্য অনেকেই হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হলে মার্কেল সাবেক পরামর্শদাতা হেলমুট কোহলকে ছাড়িয়ে জার্মানির দীর্ঘতম দায়িত্ব পালনকারী চ্যান্সেলর হতে পারেন।
শাওয়ার্জার বলেন, এত ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে মার্কেল যেভাবে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জার্মানিতে প্রচলিত একটি কৌতুক আছে। একটি ছোট ছেলে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে, মা, পুরুষরাও কি চ্যান্সেলর হতে পারে?
এত দীর্ঘসময় ধরে একজন নারীর ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি একটি শিশুর চোখেও ধরা পড়ে।
মার্কেল যে ধরণের পোশাক পরেন তা মোটেও নারীসুলভ নয়। শোয়ার্জার এ বিষয়ে বলেন, “অথচ মার্কেলের মধ্যে এখনো একটা মেয়েলি আকর্ষণ রয়েছে যা তিনি ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রনের মতো বিশ্বনেতাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। একজন সাধারণ নারীর মতোই তার মধ্যেও প্রেম, মমত্ববোধ রয়েছে। হতে পারে ম্যাক্রনের প্রতি তার আগ্রহ আছে।”
দেশের নারীদের উপর মার্কেলের এক শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। তার নিজের কোনো সন্তান নেই, অথচ তিনি যেন এক “মা” নামেই পরিচিত।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রেইবার্গের শিক্ষার্থী মারিয়া লুইসা শিল বলেন, “মানুষের জীবন সহজ করে তুলতে মার্কেল অনেক কিছুই করেছেন। এখন তো নারী চ্যান্সেলর প্রার্থীদের অংশগ্রহণ অনেক স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অতীতে এমন ছিল না”।
বার্লিনে ৯ বছর বয়সী মেয়ে লিয়া বলে, সেও একদিন চ্যান্সেলর হতে চায়। তার এমন লক্ষ্যের কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, সে কাজ করতে চায়, উপার্জন করতে চায়।
তার মা ন্যান্সি বলেন, “মার্কেল অনেক মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন, বিশেষ করে নারীদের জীবনে “।