পিতৃতান্ত্রিক অ-সভ্যতার সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন – বাবা কে?
অভিনেত্রী ও নায়িকা পরীমণি আরেকটি চড় কষালেন বটে। সচেতনভাবে কষিয়েছেন কি না জানি না। তবে চড় জায়গামতো গিয়ে লেগেছে।
পিতৃতন্ত্র যখন মাতৃত্বকে নারীর দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করলো, কিংবা মাতৃত্বজনিত কারণকে পুঁজি করে নারীকে আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র কষলো, তখন ওই একই মাতৃত্ব দিয়ে আরো এক শয়তানিও করলো। পুরুষ দেখলো, মাতৃত্ব আসলে নারীর শক্তিময়তা এবং এই একটিমাত্র প্রশ্ন – ওই সন্তান প্রশ্নে পুরুষ বড় অসহায়। কারণ সেই যুগে সন্তানের বাবার পরিচয় নির্ধারণে নারীর উপর নির্ভর করা ছাড়া পুরুষের আর উপায় নাই। পুরুষ তাই নারীর উপর চাপালো একগামিতার দায়। আর নিজে বিন্দাস বহুগামিতার পাখা মেলে যথেচ্ছার করে বেড়ালো। এবং এখনও বেড়াচ্ছে। নারী একগামী না হলে অসতী। পুরুষ বহুগামী হলে আসল পুরুষ।
সে যাই হোক, পুরুষের জানা চাই, সন্তানের বাবা কে? পিতৃতান্ত্রিক অসভ্যতার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন। বাবা কে?
তো পরীমণির সন্তানের পিতা কে, এটি এখন মিডিয়ায় সবচেয়ে রসালো খবর। বিয়ে- মানে বিয়ের খবরটি চাউর হবার আগেই বাচ্চা! এই দেশে এইরকম ঘটনা আগে ঘটেনি বটে। এর আগে বহু নায়িকা সম্পর্কে মিডিয়া রসিয়ে রসিয়ে গপ্পো ফেঁদেছে। কে কবে বিদেশে গিয়ে বাচ্চা জন্ম দিয়ে এসেছেন – এই নিয়ে মাথা ব্যাথায় মাথা খুলে পড়ে যাবার দশা আর কি! বাচ্চার মা পরীমণি- এটি যথেষ্ট নয়। বাচ্চার বাবা রাজ, এটি হলো খবর। আসল খবর। এতে পিতৃতন্ত্রের শান্তি, পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার স্বস্তি, গোটা সমাজের সুখ। যাক গে- বাবাটা কে জানা তো গেল!
পরীমণিকে আরো বেশি অভিনন্দিত করতে পারতাম যদি তিনি এত সব কৈফিয়তের ধার না ধারতেন। মিডিয়ার পুরুষতান্ত্রিক কৌতুহলের মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারতেন। তবে এই তুুমুল পিতৃতান্ত্রিক সমাজে এও নিতান্ত কম নয় বটে। পরী, আপনার সন্তান ও আপনার জন্য শুভকামনা। সাহসের সৌন্দর্য আপনাকে ঘিরে থাকুক।