November 2, 2024
নারী'র খবরদেশবিদেশফিচার ৩

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: লিঙ্গ সমতাই সুন্দর

ফাতেমা তুজ জোহরা ।। 

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর অনেক নিয়ম কানুন বদলেছে। এখন একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য, একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য “সমতা” শব্দটির বিকল্প নেই। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ শুধুমাত্র ক্ষতিই বয়ে আনতে পারে, এ কথা এখন পরিষ্কার। আর তাই এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “Gender equality today for a sustainable tomorrow.“ অর্থাৎ, একটি সুন্দর ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য লিঙ্গ সমতা অপরিহার্য।

যুগে যুগে নারী নানাভাবেই পদদলিত হয়েছে। বঞ্চনা ও শোষনই যেন ছিলো নারীর জীবনের সব। নিজের অধিকার বুঝে পাবার লড়াই তাই অনেক অনেক দিনের। আন্তর্জাতিক নারী দিবস একদিনে অর্জিত হয়নি। বছরের পর বছর নারী শাসিত ও শোষিত হতে হতে এক সময় নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়। সেখান থেকেই অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে নারী দিবসের আবির্ভাব।

প্রতি বছরই ৮ই মার্চ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটা করে উদযাপন করা হয় নারী দিবস। নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতেই মূলত এই দিবস। তবে অনেক দেশেই এই নারী দিবস শুধুমাত্র নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে নয়, বরং নারীর আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবেও উদযাপন করা হয়।

৮ই মার্চের পিছনের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়র্কের রাস্তায় নারী শ্রমিকেরা নেমেছিলেন রাস্তায়, তাদের মজুরি বৈষম্য ও এক্সকাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে। মিছিলে হামলা করেন সরকারি বাহিনী। পরবর্তীতে ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন যার নেতৃত্ব দেন জার্মার সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন।

২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ১৭টি দেশের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধি। এখানেই ক্লারার প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি বছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে ১৯১৪ সাল থেকে এই তারিখে বেশ কয়েকটি দেশে নারী দিবস পালিত হতে থাকে। এরপর ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ও বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালনের আহবান জানায়।

প্রতি বছর নারী দিবসেই থাকে সমতাভিত্তিক সমাজ ও পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে একেকটি প্রতিপাদ্য। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য Gender equality today for a sustainable tomorrow- কথাটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে লিঙ্গ সমতাই আপনাকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে পারে।

নারী এখন সর্বত্র নেতৃত্ব দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে সমাজের প্রতি স্তরে, প্রতি ক্ষেত্রে পরিবর্তনে এখন নারীর ভূমিকা মূখ্য। সেই সকল নারী, যারা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়াও এ বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য। কারণ নারীর সমাজ পরিবর্তনের ভূমিকাই স্বপ্ন দেখাতে পারে এক সুন্দর ভবিষ্যতের।

বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে জলবায়ু সংকট ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলা পৃথিবীর জন্য অন্যতম এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতেও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা আবশ্যক। জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি ও সমাজের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। আর এই প্রভাব ক্রমবর্ধমান।

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রান্তিক মানুষেরা। আরো পরিষ্কারভাবে বললে নারীর উপরেই পুরুষদের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি। কারণ বিশ্বের একটা বড় জন গোষ্ঠি নারী এবং তাদেরকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। কাজেই তাআর নির্ভরশীল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবের দিক তাদের ঠেলে দিচ্ছে।

নারী এখন বিশ্বজুড়ে নানারকম উদ্যোগের সাথে জড়িত। একই সাথে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে তাই নারীকেও বিভিন্ন ধরনের পলিসি মেকিং ও ডিসিশন মেকিং- কর্মকান্ডে অংশ নিতে হবে এবং নারীর অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে সমতার পৃথিবী গড়তে হবে। একমাত্র তাহলেই

জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস নীতি ইত্যাদি কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে লিঙ্গ সমতা অর্জিত হবে এবং পৃথিবী একটি সুন্দর আগামীর দেখা পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *