December 23, 2024
সাহিত্যবই নিয়ে আলাপ

ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘নারীবাদ প্রসঙ্গে’ এলো বইমেলায়

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক ।। এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হলো লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদের বই ‘নারীবাদ প্রসঙ্গে’। বইটি প্রকাশ করেছে সব্যসাচী।

নয় অধ্যায়ে বিভক্ত বইটির শুরু আমাদের দেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের একটি সাধারণ চিত্র দিয়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে নারীবাদ সম্পর্কে একটি সাধারণ আলোচনা, ‘নারীবাদ কী’ এই শিরোনামে। তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে নারীবাদের সূচনা ও দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। পঞ্চম অধ্যায়টিতে আলোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় তরঙ্গের পরবর্তী ঘটনাবলী বিশেষ করে নিও লিবারলিজমের উত্থান নিয়ে। ষষ্ঠ অধ্যায় নারীবাদীদের নানা দল সম্পর্কে, বৃহৎ তিনটি দল – লিবারেল নারীবাদ, র‌্যাডিকেল নারীবাদ ও মার্ক্সবাদী/সমাজতন্ত্রী নারীবাদ আর সেই সাথে নিসর্গ নারীবাদ, ইন্ডিজেনাস নারীবাদ ও লেসবিয়ান নারীবাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। সপ্তম অধ্যায় বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও অষ্টম অধ্যায় বাংলাদেশে নারীবাদের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। নবম বা শেষ অধ্যায়টি বাংলাদেশে নারীবাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য, পথ ও কৌশল নিয়ে।

বইটি শেষ হয়েছে এই বলে যে, ‘সমাজতন্ত্রী নারীবাদী হেস্টার আইজেনস্টাইন একটা কথা বলেছেন, যদি মনে করে থাকেন যে গুটিকয় নারী বিদ্যমান বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যাবস্থায় কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে, সেটা হবে একটা বেওকুফি ধারনা। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী, অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে যদি ঐক্যবদ্ধ হয় আর ওদেরকে প্রভাবিত করার মতো যদি থাকে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, তাইলে নারীরা বিশ্ব পুঁজিবাদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে পারে। কেননা পুঁজিতান্ত্রিক পিতৃতন্ত্র টিকেই থাকে নারীর উৎপাদন ক্ষমতা ও পুনরুৎপাদনের ক্ষমতার উপর। এ কারণে নারীদের ঐক্য গড়তে হবে বিশ্বব্যাপী – একটি অভিন্ন ঐক্যবদ্ধ নারীবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশসমূহের বঞ্চিত নারীরা আর আমাদের মতো দেশসমূহের নির্যাতিত শোষিত নারীরা- সকলের মধ্যে ঐক্য। আর এই ধরনের ঐক্য গড়ে তোলার নৈর্ব্যক্তিক অবস্থা এখন বিদ্যমান আছে। কেননা পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের ফলে পুঁজিবাদের একই বিশ্বজনীন শোষণের কৌশলে নির্যাতিত হয় বিশ্বের সব নারী একসাথে। পুঁজিবাদ এখন একটি আন্তর্জাতিক অভিন্ন শোষণ কাঠামো, এটাকে বিশ্বের একটা বা দুইটা কোনা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে আঘাত করে কাবু করতে পারবেন না। এটাকে আঘাত করতে হবে বিশ্বব্যাপী একসাথে, ঐক্যবদ্ধভাবে।

নারীবাদীদের সামনে এখন পথ খোলা দুইটা। একটা হচ্ছে লিন ইন পথ – নিজের আখের গোছাতে চেষ্টা করেন। আখের হয়তো গুছিয়ে ফেলতেও পারবেন। ওরা ক্ষমতায়ন করছে, আপনি যদি চেষ্টা চালিয়ে যান, যদি লেগে থাকেন, তাইলে বলা যায় না, ক্ষমতায়ন আপনারও হয়ে যেতে পারে। কে জানে, হয়তো এই করে বিশ্বের যে এক পারসেন্ট মানুষ বিশ্বের মোট সম্পদের অদ্ধেকের মালিক সেখানে হয়তো আরেকজন নারীর নাম যুক্ত হবে। বেশ হয় তাইলে। এইটা হচ্ছে একটা পথ। আরেকটা পথ হচ্ছে বাকি নিরানব্বই পারসেন্টের সাথে যোগ দেওয়া। বিশ্বব্যাপী সকল শোষিত বঞ্চিত নারীর বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা। ক্রিস্পিনের ভাষায় বলতে হয়, ‘সম্পদ, আরাম ও সুগঠিত নিতম্ব’ নিয়ে বেশ লিবারেটেড অনুভব করতে পারেন অথবা লড়তে পারেন তাদের হয়ে যারা দুইভাবে শোষণ ও নিপীড়নের শিকার- নারী হিসাবে এবং শ্রমিক বা কিষান হিসাবে। আবার কেউ কেউ আরেকটি মাত্রায় বাড়তি শোষণের শিকার হয় আদিবাসী হিসাবে বা কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে। আপনি কি করবেন, সিদ্ধান্ত আপনার’।

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মিতা মেহদি। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় সব্যসাচীর স্টলে (স্টল ৪০১) ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *