বিদ্রোহী মেয়েদের জন্য শুভরাত্রির গল্প: অ্যালিসিয়া আলোনসো
Good night stories for rebel girls বইটির লেখক এলেনা ফাভিলি ও ফ্রানসেসকা ক্যাভালো। প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থা। মূলত কিশোর বয়সীদের লক্ষ্য করে লেখা এই বইটি। বিশ্বজুড়ে যে মেয়েরা ইতিহাসের নানা সময়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে বা রেখে চলেছে, তাদের সম্পর্কে ছোট ছোট গল্পের মতো করে লেখা। সন তারিখ তথ্য কম দিয়ে নাটকীয় করে তোলার চেষ্টা আছে, যাতে পড়ে মজা পাওয়া যায়।
প্রতিটি গল্পের সঙ্গে একটা ছবি, সেটাও বেশিরভাগ নারী শিল্পীদের আঁকা।
‘বিদ্রোহী মেয়েদের জন্য শুভরাত্রির গল্প’ নামে বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করেছেন মেহেদী হাসান, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য
অ্যালিসিয়া আলোনসো
কিউবান ব্যালেরিনা
জন্ম: ২১ ডিসেম্বর, ১৯২১ ; মৃত্যু : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯
মেয়েটি ছিল অন্ধ অথচ একদিন কি না বিশ্বসেরা ব্যালেরিনা হয়ে গেল। তার নাম ছিলো অ্যালিসিয়া। সে দৃষ্টিশক্তি নিয়েই জন্মেছিল, অসুস্থ হয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সে বড় হচ্ছিল ব্যালে নৃত্যের দুর্দান্ত এক শিল্পীর সম্ভাবনা নিয়ে। অসুস্থতার পর থেকে তার দৃষ্টিশক্তি দিনকে দিন কমতির দিকে যাচ্ছিল। তাকে জোর করে বিছানায় মাসের পর মাস শুইয়ে রাখা হতো নড়াচড়া করতে দেওয়া হতো না, কিন্তু অ্যালিসিয়াকে নাচতে হয়েছিল – সে কেবল একটি উপায়ে নাচতে পারতো – “আমি মনে মনে নাচলাম। অন্ধ, গতিহীন, বিছানায় আমার চ্যাপ্টা পিঠ ছড়িয়ে রেখে, নিজে নিজেকেই ‘জিসেল’ নাচতে শিখিয়েছি”।
একদিন, নিউইয়র্ক শহর ব্যালে দলের প্রধান ব্যালেরিনা দুর্ঘনায় আহত হলো। তারা নিরুপায় হয়ে অ্যালিসিয়াকে আমন্ত্রণ জানালো। ইতোমধ্যে সে আংশিক অন্ধত্বের শিকার, তবু সে কীভাবে এ আহ্বান ফিরিয়ে দেয়? সে ব্যালে নাচটাই যে ছিল ‘জিসেল’!
যেই অ্যালিসিয়া নাচ শুরু করলো, সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা তার নাচের প্রেমে পড়ে গেল। সে নাচলো নিপুণ চারুতার সঙ্গে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, যদিও সে সময় সে সামান্যই দেখতে পেতো। সে তার সহশিল্পীদের সেভাবেই প্রশিক্ষিত করে তোলে, যেভাবে যথাসময়ে যতটুকু তার প্রয়োজন হতো।
তার ব্যালে নাচ এতোটা অনন্য ছিল যে, তার দলসহ তাকে সারা পৃথিবীর নানান দেশ থেকে ডাকা হতো নাচের জন্য। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল ধ্রুপদী ব্যালে নাচকে কিউবায় পৌঁছে দেওয়া, যে দেশ তার জন্মভূমি।
ভ্রমণ থেকে ফিরে এসে কিউবার নৃত্যশিল্পীদের ধ্রুপদী ব্যালে নাচ প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে অ্যালিসিয়া। গড়ে তোলে অ্যালিসিয়া আলোনসো ব্যালে কোম্পানি, পরবর্তীকালে যে প্রতিষ্ঠানের নাম হয়, ব্যালে ন্যাসিওনাল ডি কিউবা।
অ্যালিসিয়া বলতো, “একজন নৃত্যশিল্পীকে অন্য সকল শিল্পকলা থেকে শিখতে হয়।”