নারীর দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার-নারীহত্যার উৎসব কি চলবেই?
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান দত্তপাড়া এলাকা থেকে মাথাবিহীন ও দুই হাতের কবজি কাটা অবস্থায় এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের প্রায় ১৫০ গজ দূরে পলিথিনে মোড়ানো দুই হাত ও মাথা উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে, মৃত তরুণী একজন গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন।
মাত্র আটদিন আগে নারায়ণগঞ্জ ইসদাইরে নিলুফা বেগম নামে ৫৫ বছর বয়সী এক নারী পোশাককর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ শান্ত নামের এক যুবককে আটকও করেছে। আরো অসংখ্য ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে চারিপাশে।
এরকম ঘটনা এদেশে নতুন না। বরং এত বেশি ঘটে যে আমরা মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি যে কোনটা রেখে কোনটার প্রতিবাদ জানাব। ন্যায়বিচার দাবি করবো। এত বেশি নারী ও শিশু এদেশে নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে যে, আমরা নিজের অস্তিত্ব নিয়েই সংকটে পড়ে যাই।
এই যে হত্যাকাণ্ডগুলো, এগুলোকে আমাদের আরো অন্য হত্যাকাণ্ড থেকে আলাদা করতে হবে। মনে রাখবেন, এরকম হত্যাগুলোকে চিহ্নিত করা হয় ফেমিসাইড বা নারীহত্যা হিসেবে। ফেমিসাইড হলো একজন মানুষ যখন তার জেন্ডারের কারণে হত্যার শিকার হন। নারীবাদী লেখকডায়ানা ই এইচ এইচ রাসেল ফেমিসাইডের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে – “the killing of females by males because they are female”।
সব হত্যাকাণ্ডের সাথে ফেমিসাইডকে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। নারীহত্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটে স্টেরিওটাইপ মানসিকতা, নারীর প্রতি ঘৃণা, সহিংস মনোভাব, ধর্ষণ এবং প্রমাণ মুছতে হত্যা , সমাজের আচরণ, ন্যায়বিচারের অভাব – এসব কারণে। গবেষণা বলে, ফেমিসাইডের প্রায় ৪০ শতাংস ঘটায় নারীর স্বামী বা সঙ্গীটিই। নারীর বিশ্বাস ও ভালবাসার প্রতি পুরুষের কি নিদারুন পরিহাস!
দেশে নারীহত্যা চিরকালই ঘটেছে। থামেনি। বহু নারীর হত্যার বিচার থমকে গেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এদেশের নারীর জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে।
সাভারে আজ যে বীভৎস ঘটনার কথা আমরা জানতে পারলাম, এর বিচারও শেষে কোথায় গিয়ে আটকে যাবে আমরা জানি না। নারীটি কে, তাকে কে হত্যা করলো সেটি জানা জরুরি। এবং জরুরি দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। আরো জরুরি, বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান করা।
পৃথিবীর সমস্ত নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান হতে হবে। এজন্য পুরুষের মানসিকতার গভীর পরিবর্তন দরকার। চিন্তায় মননে আচরণে শিক্ষায় দীক্ষায় পুরুষকে হতে হবে সত্যিকার মানুষ। নারীকে সম্মান ও ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখতে শিখতে হবে। তা না হলে এই বিরামহীন ফেমিসাইড দুনিয়াজোড়া চলতেই থাকবে।
সবার মঙ্গল হোক!