গালির ক্ষেত্রে পুরুষের প্রতি এত বৈষম্য কেন?
ভাবনা খন্দকার।। মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব নারীদের ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল দেখেন বা দেখেছেন নিশ্চয়? কখনো কি তাদের পোস্টের কমেন্ট পড়ে দেখেছেন? তারা পোস্ট দেবার সাথে সাথে রিয়্যাক্ট আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অধিকাংশই এমন হয় যা খুব রসালো আর যৌন আবেদনময়। আর নইলে তাতে থাকে গালি। এ যেন গালির উপঢৌকন নিয়ে দলে দলে এ গালিবাহিনী হাজির হতে থাকে। সেগুলো আবার যেনতেন গালি নয়।
এই গালিগুলা কারা দেয়?
নিশ্চয় মঙ্গলগ্রহ থেকে এলিয়েনরা এসে দিয়ে যায় না! একটি বিশেষ হিপোক্রেট আর পার্ভাট শ্রেণি এই গালি দেয়। ধরুন এই শ্রেণির নাম “United Gaali Society”। তো এই “United Gaali Society” এর সদস্যরা আবার মারাত্মক একপেশে। এরা বেছে বেছে কেবল নারীদেরই গালি দেন। আবার কিছু লোক আছেন ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনে আসেন দ্বীনের দাওয়াত দিতে। যেমন ‘এই মাগী মাথায় হিজাব কই ‘ অথচ কোনো পুরুষ সেলেব্রিটিকে লিখতে দেখলাম না ‘এই মর্দা তোর মাথায় টুপি কই?’
যাই হোক,আগের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমাদের সমাজের গালিগুলার দিকে একটু লক্ষ্য করুন, অধিকাংশই নারীকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া। ‘অমুকের বাচ্চা, তোর মা কে এটা করি, ওটা কর’ ইত্যাদি। আরো কিছু বিশেষ গালি আছে যেগুলোর কোনো পুরুষবাচকই নাই। কিন্তু কেন?
এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার, সমাজ কি অর্থনীতি- কোথায় নেই নারীর প্রতি বৈষম্য? যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নারী হয় বৈষম্য আর শোষণের শিকার, সেখানে নারীকে গালি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ সমাজ উদারহস্ত! এত বদান্যতা!
এখন বলুন দেখি মিডিয়াতে এখন গালি খাওয়ায় শীর্ষে কোন্ নারী?
কে আবার? মিথিলা।
মিথিলা বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত একজন মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব। তিনি যতটা না আলোচনায় থাকেন তার অভিনয়, গান আর কর্মজীবন নিয়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি আলোচিত থাকেন তার ব্যাক্তিগত জীবনের জন্য।২০১৭ সালে তার সাবেক স্বামী তাহসানের সাথে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর থেকেই এই বিদূষী মহিলা স্মরণকালের ভয়াবহ সব গালি কিংবা কটুকথা শুনেছেন বলে মনে করি।
প্রথম স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হবার জন্য, আরেক পুরুষের সাথে প্রেম থাকার জন্য, হিন্দু ধর্মের একজনকে বিয়ে করার জন্য “বারোভাতারি” খেতাব পেয়েছে মিথিলা। বুঝে না বুঝে মেয়েদের সুযোগ পেলেই গালি দিলে আমাদের হৃদয় বড়ই প্রশান্তি লাভ করে। ঢালিউডের কিং খান বলে খ্যাত শাকিব খানের কথাই ধরুন না, শাকিব খানও হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছিল, তাও আবার গোপনে, আবার বুবলীর সাথে তার রসালো গুঞ্জন কারোই অজানা নয়। সম্প্রতি পত্রিকায় খবর এলো, খান সাহেব “স্বামীভক্ত,পয়হেজগার আর সংসারী” নারী খুঁজছেন বিয়ের জন্য। তো এই খান সাহেব দুইদিন পর পর স্ত্রী/প্রেমিকাদের প্রেগন্যান্ট বানিয়ে ভিনদেশে পাঠিয়ে দেন আর তারা ফিরে আসেন দোকলা হয়ে।
অবাক হয়ে দেখলাম, মিথিলা আর শাকিব খান দুইজনই মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব কিন্তু তারপরও শাকিবকে কেউ “বারোভাতারিনী” বলে গালি দিল না। মানে “মর্দা মানুষ” এমন একটু আধটু করেই। এদের সাত খুন মাফ। অভিধান ঘেটেও এর পুরুষবাচক শব্দ পেলাম না। মানেটা এই দাঁড়ালো, পুরুষের চরিত্র খারাপ হতে পারেনা। খারাপ কেবলই নারী৷ তাই এদের জন্য একচেটিয়াভাবে বিশেষ গালির প্রচলন আছে এদেশে।
জানতে মন চায়, গালির ক্ষেত্রে এ সমাজ পুরুষকে এভাবে বঞ্চিত করছে কেন? কেন এখানে পুরুষ নারীর সমান অধিকার পাবে না? কেন পুরুষবাচক গালি তৈরি হবে না?
আমি পুরুষের জন্য উপযুক্ত পরিমানে গালি উদ্ভাবনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ভাবনা খন্দকার: শিক্ষার্থী
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব মত]