November 24, 2024
মন ও জীবন যাপনফিচার ২

বিষন্নতা দূর করবেন কীভাবে? কৌশলগুলো জানুন

সাবরিনা শারমীন বাঁধন।। ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা খুব ছোট শব্দ এবং শুনতে সাধারণ লাগে বটে, তবে এর ভয়াবহতা মারাত্মক। একে বশে আনতে হলে আপনাকে বেশ কৌশলী হতে হবে। নিজের বিষন্নতা এবং তা থেকে নিজেকে কীভাবে বের করে আনলাম, সেই অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কৌশল শেয়ার করছি সবার সাথে।

প্রথমত কেন আপনি মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা করেন, কেন আপনার মন খারাপ থাকে, কখন মানে দিনের কোন সময় আপনার মন অস্থির থাকে, এসব কিছু হলে আপনার কী করতে ইচ্ছা হয় এগুলো পয়েন্ট আউট করতে হবে।

এগুলো নিয়ে আপনি কার সাথে আলাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটাও ভাবতে হবে বা আদৌ কারও সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কি না সেটা মনে মনে বের করতে হবে। এসব করে আপনার ঘুম হ্রাস পেয়েছে কি না? পেলে সেটা কতটা? আপনাকে ঘুমের জন্য ঔষধ খেতে হয় কি না, খেলে সেটার মাত্রা কতটা? সেগুলো খেলে আদৌ ঘুম হয় কি না?

ভাবুন।

আপনার যে স্ট্রেস হয় সেটা থেকে পরিত্রাণের উপায় ভাবা। কী করলে আপনি স্ট্রেস থেকে বের হয়ে আসতে পারেন সেটা আপনাকে একটু সময় নিয়ে ভেবে বের করতে হবে।

আপনাকে নিজের সাথে কথা বলতে হবে। আপনি কী চাইছেন?  আপনার মন যা চাইছে সেটাই করুন।

খাতা কলমে তিনবেলা নিজের মনের অবস্থা লিখুন। মন ভাল হলে লিখুন- ভাল। খারাপ হলে লিখুন- খারাপ। তাতে আপনি আপনার মন ভাল খারাপের গড় বুঝতে পারবেন, আপনার একটা ধারণা হবে যে আপনার মুড কখন কেমন থাকে। তাতে আপনার ভাবার জায়গায় আপনি স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

আপনার স্ট্রেস হচ্ছে এটা আপনি বুঝতে পারছেন কি না? বুঝলে কী করে বুঝলেন? আপনার চুলে খুশকি আছে কি না, চুল পড়ে যাচ্ছে কি না, স্কিনে অতিরিক্ত ব্রন কিংবা এলার্জি বেড়ে গেছে কি না, আপনার স্কিন ড্রাই হয়ে গেছে কি না, পটি ক্লিয়ার কি না, আপনি দাঁত দিয়ে নখ কাটেন কি না, আপনি রাগে খিটখিটে হয়ে গেছেন কি না, আপনার ক্ষুধা মন্দা কি না বা আপনি অতিরিক্ত খেয়ে খেয়ে ওভার ওয়েট কি না- এগুলো খেয়াল করুন। সেক্ষেত্রে উপযুুক্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। এক্সারসাইজ করে করে ক্লান্ত হোন একবেলা। আরেকবেলা একঘণ্টা বিরতিহীনভাবে হাঁটুন। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরুন। তারপরে হট শাওয়ার মানে উষ্ণ গরম জলে একটু লেবু আর নুন মিশিয়ে স্নান করুন। তারপর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। খুব হাল্কা কিন্তু হেলদি খাবার খান রাতে। তারপর একঘণ্টা হাল্কা আওয়াজে গান ছেড়ে কিছু একটা পড়ুন যেমনটা আপনার ভাল লাগে। তারপর আরামদায়ক পোশাক পরে শুয়ে পড়ুন। ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম না পেলে কোন একটা সুখস্মৃতি মনে আনুন, ভাবতে ভাবতে ঘুম চলে আসবে নাহলে উল্টোদিক থেকে গুনুন। ঘুমের ঔষধ মাথার পাশে রাখুন কিন্তু খাবেন না। অভ্যাস করুন ঔষধ না খাওয়ার।

একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন এবং সেটাকে অভ্যাসে পরিণত করুন। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে একঘন্টা আগে থেকে সকল প্রকার গ্যাজেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা ব্লু রে শরীরকে চনমনে করে, তাতে বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে।

শেষে একটাই কথা, এমন একজন বন্ধু কিংবা কাছের মানুষের সাথে মনের কথা শেয়ার করুন যিনি আপনার কথা মন দিয়ে শুনবে এবং আপনার পাশে থাকবে। দেখবেন আপনি অবশ্যই স্ট্রেস রিলিফ পাবেন। অবশ্যই ঘুমের ঔষধ ছাড়া নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। আর এসব কিছুই নাহলে খাতায় মনের কষ্ট, আনন্দ,অভিমান লিখে ফেলুন, দেখবেন হাল্কা লাগবে।

পছন্দমত সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন, সেলাই করুন কিংবা ছবি আঁকুন। নাহলে কোথাও একটু বেড়িয়ে আসুন।

মন যেটা চায়, এগুলোও কিন্তু এক ধরনের মেডিটেশন। জীবনকে উপভোগ করুন।

একটা কথা মনের মধ্যে গেঁথে নেন, জীবনে খারাপ সময় আসবে কিন্তু সেটাকে ওভারকাম করার শক্তি সঞ্চয় করুন। বিরক্তিকর মানুষদের এড়িয়ে চলার অভ্যাস করুন। যারা আপনাকে কষ্ট দেয় তাদেরকে বাদ দিন, উপেক্ষা করুন।

জীবন সুন্দর। সুন্দরকে ভালোবাসুন।