সব সমস্যার সমাধান কি বিয়ে?
সিদ্রাত মুনতাহা।। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মা বাবা এবং চারপাশ ঘিরে থাকা আত্মীয়স্বজনদের কাছে সকল সমস্যার সমাধান হচ্ছে বিবাহ।
মেয়ে প্রেম করে?
বিয়ে দিয়ে দাও
মেয়ে পড়াশোনায় ভালোনা?
বিয়ে দিয়ে দাও
মেয়ে দেখতে ভালোনা?
যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও, পরে আবার বিয়ে হবেনা
মেয়ে ডিপ্রেশনে আছে?
বিয়ে দিয়ে দাও
প্রেমে ব্যর্থ?
বিয়ে করে ফেলো
ক্যারিয়ারের চিন্তা?
আরেহ চিন্তা কিসের, বিয়ে করে সেটেল হয়ে যাও
এরকম হাজারটা সমস্যার সমাধান হচ্ছে “বিবাহ”
আসলে বিবাহ কি সমাধান?
কোন মেয়ে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ডিপ্রেশনে চলে গেল, এই অবস্থায় কতটুকু যৌক্তিক হবে অন্য কাউকে বিয়ে করা? যেখানে একটা মানুষ এরই মধ্যে একটা ধাক্কা থেকে বের হতে পারেনি, সেখানে আরেকটা নতুন দায়িত্ব? রাবিশ না ব্যাপারটা?
নতুন সম্পর্কে জড়ানোর জন্য বিশেষত তা যদি হয় বিবাহ, যথেষ্ট রকমের মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, একটা ভগ্ন মানসিক অবস্থায় যদি কেউ এত বড় দায়িত্ব নেয়, সে সেটা কতটা ভালোভাবে পালন করতে পারবে? আদৌ কি পারবে?
পারবে সেটা সমাজের চোখে, হয়তো সবাই দেখবে সে ভালোই আছে সুখেই আছে, আসলেই কি তারা সুখে থাকে? মনের বিরুদ্ধে একজন মানুষকে পুরোপুরি ভুলতে না পেরে আরেকজনের সাথে জড়িয়ে?
ব্যতিক্রম হয়, হয়তো বা কেউ আসলেই সুখে থাকে, তবে আমি এখন পর্যন্ত যাদেরকে দেখেছি বিচ্ছেদের কষ্ট থেকে বের হওয়ার জন্য বিয়ে করেছে, কেউ তাদের কাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে বের হতে পারেনি, পরিস্থিতি বরং খারাপ হয়েছে, কোনটা গড়িয়ে ডিভোর্স পর্যন্ত, আর কেউ আছে নিতান্তই দায়সারা ভাবে বা বাচ্চার জন্য। অনেক মেয়ে বিচ্ছেদের পর নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র বিয়ে করার, তাদের প্রতি পরামর্শ আগে ট্রমা কাটিয়ে উঠুন, তারপর অন্যত্র বিয়ে করুন। একটা সম্পর্ক শুরু করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করে গড়ে তোলা উচিত, মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য বিয়ে নয় বরং মানসিকভাবে শক্ত হয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন।
যারা নিজের বাহ্যিক রূপের জন্য বিয়ে নিয়ে হতাশায় ভোগেন তারা নিজেদের কতটা অসম্মান করেন তারা নিজেরাও জানেন না। বুঝতে হবে বাহ্যিক রূপ সবকিছু নয়, অনেকেই আছেন এমন অবস্থায় চলে যান যেন ছেলে পেলেই হল, ভালোমন্দ বিচার করার বিষয় না, তারপর? তারপর কি হয়? তারা সুখি হন বিয়ে করে? আমি বলছি এই মেয়েগুলাই পরবর্তীতে দুঃখের গল্প লিখে যে সে দেখতে ভালো নয় বলে তার স্বামী তাকে ভালোবাসেনা, পরকীয়া করে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন? কেন আপনি নিজেকে এতটা ছোট করে দেখবেন? নিজেকে বাহ্যিক রূপ দিয়ে বিচার না করে নিজের গুন, নিজের মেধা, প্রতিভা, নিজের স্পেশাল স্কিলগুলোর চর্চা করুন, এমন জীবনসঙ্গী কেন চাই আপনার যে শুধু আপনার বাহ্যিক রূপের জন্য আপনাকে মর্যাদা দেবে? নিজেকে প্রশ্ন করুন।
অনেকেই আর্থিকভাবে সেটেলড হওয়ার জন্য বিয়ে করে বসেন। এমন বিয়ে যারা করেন তাদের ভূমিকা সংসারে প্রভুভক্ত মনিবের মত।স্বামী তার মনিব, স্বামীর অর্থেই সে তার জীবনযাপন করে, স্বামীর অর্থ ছাড়া এক পা নড়ার ক্ষমতা নেই, এমন জীবন কি আদৌ ভাল্লাগে?অল্প ক’টা টাকার জন্য স্বামীর কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে স্বামীর বিরক্তির কারণ হয়ে তা আদায় করে সেটা দিয়ে শপিং করে বান্ধবী ও আত্মীয়মহলে শো অফ, ‘ও তো আমাকে এই দিয়েছে,সেই দিয়েছে’, বলি আপনাদের স্বামীরাই দিনশেষে বন্ধুদের আড্ডায় স্ত্রীদের নিয়ে হাসাহাসি করে, অপমানসূচক মন্তব্য করে।
নারী হিসেবে প্রত্যেকের একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত আপনাকে কেউ ছোট করতে পারবেনা যে পর্যন্ত আপনি নিজেকে ছোট না করবেন। জীবনের সকল সমস্যার সমাধান বিয়ে নয়, যার যার যোগ্যতা ও অবস্থান অনুযায়ী নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হন আগে, তারপর বিয়ে করুন। নারী মানেই দূর্বল, পুরুষদের দমিয়ে রাখার বস্তু- এই চিন্তাভাবনা ভাঙ্গতে হবে নারীকেই। দেখিয়ে দিন আপনি বিবাহিত বলেই আপনার স্বামীর উপর নির্ভরশীল নন, দেখিয়ে দিন আপনার গুনাবলী আর স্কিলস দিয়েই আপনি বাহ্যিকভাবে সুন্দর, দেখিয়ে দিন নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কীভাবে জীবন গোছানো যায়। কাউকে ভোলার জন্য বিয়ে না করে নিজে নিজের সাপোর্ট হোন, নিজস্ব অবস্থান থেকে যদি আপনি শক্ত থাকেন আপনাকে কেউ ভাঙ্গতে পারবেনা।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]