আপনি কি টক্সিক রিলেশনশিপে আছেন?
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। প্রেম করছেন? কিংবা বিয়ে করেছেন? অথচ প্রেম বা বিবাহিত জীবনের যে মধুরতা সেটিকে ঠিকমত অনুভব করতে পারছেন না? বরং এতটা তিতকুটে অনুভূতি হচ্ছে সম্পর্কটি নিয়ে ভাবলেও? কিংবা এমন কিছু, যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে, আপনি বুঝেও বুঝতে পারছেন না? সম্পর্কটি নিয়ে আপনি একটা অস্বস্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন? আপনি কি তাহলে কোন টক্সিক রিলেশনশিপের ভেতরে আছেন? মানে তিক্ত সম্পর্ক?
যে সম্পর্কটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটি টক্সিক কিনা তা জানা খুব জরুরি। অনুভব করা দরকার। নাহলে এই সম্পর্কের তিক্ততাই আপনার বারোটা বাজাবে। ভবিষ্যতে খুব বড় ক্ষতি করতে পারে এটি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের। তাই এখনই চিহ্নিত করুন, সম্পর্ক টক্সিক হয়ে উঠেছে কি না।
সব টক্সিক রিলেশনই সহজে বা চট করে ছেড়ে চলে আসা যায়, এমনটা নাও হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি সম্পর্কের ভেতরের তিক্ততাটি আবিষ্কার করতে পারেন, নির্ণয় করতে পারেন এর কারণগুলো, এর ফলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তাহলে আপনি সচেতন হতে পারবেন, নিজের ভেতরের শক্তিটাকেও জাগিয়ে তুলতে পারবেন। ফলে তখন বাস্তব সিদ্ধান্ত নেয়াটা সম্ভব হবে।
যেসব কারণে একটি সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে, তার উপাদানগুলো সাধারণত কম বেশি সব সম্পর্কের ভেতরেই থাকে। কিন্তু যখন এই বিষয়গুলো আপনার পুরো সম্পর্কটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, ক্রমাগত ঘটতে থাকে এবং এর ফলে সম্পর্কের একটানা অবনতি চলতে থাকে এবং এটি যখন আপনার ও আপনার সঙ্গীর মানসিক-শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর আঘাত হানে, তখনই সম্পর্ক তিক্ত বা টক্সিক হয়ে যায়।
তিক্ত সম্পর্কের কিছু লক্ষণ আছে। মিলিয়ে নিন, এরপর ভাবুন। ক্রমাগত এই লক্ষণগুলো ঘটছে কি না আর তা আপনার সম্পর্ককে কতটা প্রভাবিত করছে।
১. যদি আপনার মনে হয় এই সম্পর্ক আপনাকে উদ্দীপ্ত করার বদলে সব শক্তি এনার্জি কেড়ে নিচ্ছে, সম্পর্কের কারণে আপনার সুখি থাকার কথা, অথচ আপনি মানসিকভাবে খুব ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত থাকছেন
২. একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারছেন না বা কোন একজন অন্যজনকে বিশ্বাস করছেন না।
৩. একটা শত্রুতাপূর্ণ আচরণ ও পরিবেশ তৈরি হচ্ছে একে অপরের সান্নিধ্যে
৪. ভালবাসা বিশ্বাস ও আকর্ষণের ক্ষেত্রে দুই পক্ষ থেকে পরিমাণের পার্থক্য এত বেশি যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে
৫. এমনভাবে এবং ক্রমাগত একে অপরের সমালোচনা করছেন যে তা উপকারের বদলে মনের ভেতরে তিক্ততার সৃষ্টি করছে
৬. কেউ কারু উপর ভরসা করতে পারছেন না
৭. আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে বারবার নিজের মত বানাতে চায়, তবে তার এই আত্মপ্রেম সম্পর্ক তিক্ত করতে পারে
৮. একটানা নেতিবাচক কথা যা মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে
৯. যদি দুজনের ভেতরে সত্যিকার যোগাযোগটিই না থাকে, তবে দুঃখিত যে আপনাদের ভেতরে আসলে কোন সম্পর্কই নেই
১০. একে অপরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে পারছেন না
১১. একজন আরেকজনকে এড়িয়ে চলছেন
১২. যতটুকু সমর্থন দেবার কথা তা পাচ্ছেন না সঙ্গীর তরফ থেকে
১৩. আপনার সঙ্গীর মন যোগাতে আপনি নিজেকে ক্রমাগত বদলে ফেলছেন, এমন যদি হয় তবে আপনি একটা বিচ্ছিরি রিলেশনশিপে আছেন
১৪. আপনাকে ক্রমাগত ছোট বা নিচু করে কথা বলছেন আপনার সঙ্গী
১৫. হাসছেন মানেই এই না আপনি একটা সুন্দর সম্পর্ক বয়ে চলেছেন
১৬. দুজন সঙ্গী কখনোই সমান যোগ্য দক্ষ প্রতিভাবান হবেন না। এই বিষয়টি একটি সম্পর্ককে আরো শক্তপোক্ত করে। এর বদলে যদি তা হয় হিংসা আর বিদ্বেষের কারণ, তবে সেই সম্পর্কটি অবশ্যই টক্সিক
১৭. ‘না’ বলবার অধিকার দুজনেরই থাকা উচিত
১৮. আপনি একটি সম্পর্কে আছেন, অথচ কোন একটি পুরোনো সম্পর্ক এখনো টিকিয়ে রেখেছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ভাবতে হবে নতুন সম্পর্কটি নিয়ে
১৯. সঙ্গী আপনাকে মূল্য দেন না, যেটি আপনার আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়
২০. একে অপরকে প্রতারণা করেন, অসততা টক্সিক রিলেশনের অন্যতম কারণ
২১. আপনার ক্রমাগত নিজেকে অসুখী মনে হয় যদি তবে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাটা জরুরি
২২. আপনি একটা ভয়ের মধ্যে থাকেন, ফলে যেকোন কাজ করতে গিয়ে সঙ্গীর সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে আতঙ্কিত হন, তাহলে অবশ্যই আপনার রিলেশনশিপটি টক্সিক। এর থেকে বেরিয়ে আসুন।
টক্সিক বা তিক্ত সম্পর্ক অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসাটাই স্বাস্থ্যকর। প্রথমেই বিচ্ছেদে যেতে না চাইলে কাউন্সিলিং নিতে পারেন। এজন্য পেশাদার দক্ষ রিলেশনশিপ কাউন্সিলিং এক্সপার্টের সাথে কথা বলুন, দুজনেই কাউন্সিলিং নিন। শুধু একজন নিলে হবে না। এক্ষেত্রে দুজনের সমঝোতা ও একমত হওয়া জরুরি। আন্তরিকতাও চাই। এর পাশাপাশি দুজনের ভাল বন্ধু বা আপনজনদের সাহায্য নিতে পারেন। সবচেয়ে জরুরি নিজেদের ভেতরে আলোচনা করা। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। আর এরপরেও যদি তা সম্ভব না হয়, তবে এই ধরণের সম্পর্ক টিকিয়ে না রাখাই শ্রেয়। এটি শেষ পর্যন্ত ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল বয়ে আনে না। নিজের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। নিজের মূল্য দিতে শিখুন।