September 20, 2024
মুক্তমত

মা-ই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন মাইটোকন্ড্রিয়া দিয়ে

ডা. মৌমিতা শীল।। পৃথিবীর তাবৎ নরম, কোমল, লাজুক, নমনীয়, শক্তিহীন বৈশিষ্ঠ্যের অন্য নাম দেয়া হয়েছে ‘নারী’। অর্থাৎ মেয়ে মানেই ‘দূর্বলতা’-র প্রতীক! সমাজ আমাদের চিন্তাচেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজের শিখিয়ে দেয়া মাপে তাই আমরা নারীকে মাপি, সংজ্ঞায়িত করি। এর পেছনের বৈজ্ঞানিক সত্যের ধার ধারি না।

আজকেই কথা হচ্ছিলো একটা পোর্টালের কমেন্ট সেকশনে। কিছু পুরুষ আমাকে বিশ্রী ভাষায় জ্ঞান দেওয়ার চেস্টা করলেন, বললেন-
‘পুরুষ গায়ের জোরে শক্তিমান, তাই পুরুষই শ্রেষ্ঠ!’

এরকম প্রাচীন চিন্তাধারা যারা ধারণ করে, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা অরণ্যে রোদন মাত্র। তবু আজ কিছু বৈজ্ঞানিক সারসত্য তুলে ধরছি। যদি কারু মাথায় ঢোকে তো হয়তো কিছুটা চিন্তার খোরাক তারা পাবেন, নিজেদের পরিবর্তন করবার চেষ্টা করবেন।

না, মাংসপেশি কি হাত পায়ের শক্তি নিয়ে কথা বলবো না আজ। একটু সেলুলার লেভেলে কথা বলতে চাই।

মানুষের কোষে নানা অঙ্গানু রয়েছে। নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম, রাইবোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগিবডিস ইত্যাদি। এদের একেকজনের একেক কাজ। নিউক্লিয়াস- কোষের মস্তিস্ক। রাইবোজোম- প্রোটিন (আমিষ) তৈরি করে। সাইটোপ্লাজম-সব অঙ্গানুকে ধারণ করে।

মাইটোকন্ড্রিয়া- এটির কাজ শক্তি প্রদান করা। মানে কোষের সব অঙ্গানুর কাছ থেকে শক্তি গ্রহণ করে নিজেদের টিকিয়ে রাখে ও আপন আপন কাজ করার উপযোগী থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়া যে কোষে থাকে না বা যে কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়, সেই কোষ আর কর্মক্ষম থাকে না, মরে যায়। তাহলে কি দাঁড়ালো? অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়াই কোষের শক্তিঘর। এটি ছাড়া কোষ তথা প্রাণিদেহ বিকল।

এখন আসি ফার্টিলাইজেসনে বা ডিম্বানু-শুক্রানুর মিলন প্রক্রিয়ায়।

একটা ফার্টিলাইজড ওভামে বা জাইগোটে (ডিম্বানু-শুক্রানুর মিলনের ফলে গঠিত ভ্রুনে) একমাত্র ডিম্বানুই মাইটোকন্ড্রিয়াসহ অন্যান্য কোষ অঙ্গানু প্রদান করে থাকে। এখানে শুক্রাণু শুধু নিজের DNA টুকু শেয়ার করে, বাদবাকি অঙ্গানু তার পক্ষে প্রদান সম্ভব হয় না। কারন ডিম্বানু পর্যন্ত আসতে ও নিষেকক্রিয়া করতেই তার সব শক্তি শেষ হয়ে যায়, সব অঙ্গানু লোপ পায়। মানে কেবল মা-ই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন মাইটোকন্ড্রিয়া দিয়ে, মানে শক্তি দিয়ে। বাবার থেকে আমরা শুধু ডিএনএ টুকু পাই, আর মা আমাদের ডিএনএ তো দিচ্ছেনই উপরন্তু বেঁচে থাকার পূর্ণ রসদ দিচ্ছেন, মাইটোকন্ড্রিয়া যুগিয়ে।

শুধু তাই নয়, মায়ের ডিম্বানুই গোটা জাইগোটটির সকল পুষ্টি যোগান দেয়। মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি গ্রহন করে আমরা বেড়ে উঠি। বাচ্চা ধারণ ও প্রসবের ধকল সামলাতে অন্তত দুইটি বছর লাগে প্রতিটা মায়ের।

সেই মাকেই, সেই মেয়েদেরকেই কি নির্লজ্জের মতন আমরা দুর্বল বলি!

প্রসবের ব্যথা ২০টা হাড় ভাঙ্গার ব্যথার সমান। লেবার পেইনকে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার চেয়েও মারাত্মক বলা হয়। সেটা সহ্য করতে পারে যে, সে দুর্বল হল কোথা থেকে?

নারীকে অবলা, নির্বলা বলে হেয় করা বন্ধ করুন। আর যে শারীরিক শক্তির গর্ব করে পুরুষ, সেটির আলাপও করব একদিন। আজ শুধু মায়ের শক্তির কথাটাই বললাম। শুধু মনে রাখবেন, শারীরিক শক্তিও অর্জন করা সম্ভব, যদি নারী খাদ্যাভ্যাসে, শারীরিক কসরত চর্চায় পুরুষের সমান সামাজিক সুবিধা পায়।