November 24, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

আমার ব্রা পেন্টি’র ছবি বনাম সমাজের আসল চেহারা

তানহা খান।। একটু চোখ-কান খোলা রেখে চললেই প্রতিনিয়ত আশেপাশে নারীদের উপরে হওয়া অন্যায়গুলো আমি দেখতে পাই। আগে আমার সাথে খারাপ কিছু হলে আমি চুপ করে থাকতাম, ভয় পেতাম। কিন্তু একটা সময় আমার মনে হল, না, এভাবে চুপ করে থাকা আসলে সমাধান না। এটা অন্যায় মেনে নেয়া, অন্যায়কে জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া।

মেয়েদের পিরিয়ড বা প্রয়োজনীয় প্যাড, জামার উপর থেকে ব্রা’র ফিতা বের হওয়াকে আমাদের সমাজ ঠিকঠাকভাবে এখনো মেনে নিতে পারেনি। প্রায় সব মেয়েরাই এসব কারণে কোন না কোনভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছে।

তো গতকাল আমি আমার ব্রা পেন্টি ধুয়ে রোদে শুকাতে দিলাম, আর এজন্য আমাকে আমার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হল। আমাকে বলা হয়েছে আমি যেন ব্রা পেন্টিগুলো জামা দিয়ে ঢেকে দিই। কারণ এটা দেখতে তাদের কাছে খুবই নোংরা মনে হয়েছে।

আপনারা প্রায় সবাই জানেন ব্রা পেন্টি রোদে না শুকালে ভেজা ভেজা একটা ভাব থেকেই যায়। পরবর্তীতে সেটা গায়ে পরলে নানা রকম স্কিন সমস্যায় ভুগতে হয়। এমনকি পেন্টি কোনো স্যাঁতস্যাতে জায়গায় শুকাতে দিলে সেখান থেকে অনেক জীবাণু লেগে থাকতে পারে, যার জন্য অবশ্যই জরায়ুর সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। ব্রা’র ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এখন এখানে আমার মনে হয়েছে সমাজের চক্ষু লজ্জার জন্য নারীরা এসব স্যাক্রিফাইস কেন করবে? কেন তারা এসব ভ্রান্ত ট্যাবুর জন্য নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনবে? কেন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে আড়ালে রেখে সংকোচ বোধ করবে?

আমার এসব চিন্তা থেকেই আমি আমার রোদে দেয়া ব্রা পেন্টিগুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করলাম। তখন থেকেই শুরু হয়েছে আমার প্রতি এক দল মানুষের হিংস্রতা। আজেবাজে মন্তব্য করেই যাচ্ছে, যা নয় তা বলেছে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে, শরীর নিয়ে কথা তুলছে।

আরেকদিকে কিছু মানুষ সব সময় চায় ধর্মের নামে মেয়েদেরকে দাসী করে রাখতে। তাদের মতে মেয়েরা তাদের শরীর বোরখা দিয়ে ঢেকে রেখে চলবে, না হলে তাদের লালা ঝরলে দোষ দেবে পোশাকের। আমার প্রশ্ন- আমার অস্বস্তি হলে আমি বোরখা কেন পরবো? নাকি বোরখা হিজাবিরা কোনো খারাপ কাজ করতে পারেনা?

ধর্মের নামে তারা তাদের অন্যায় সিদ্ধান্তগুলো এমনভাবে নারী সমাজের উপরে চাপিয়ে দিতে চায় যে কখনো কখনো মনে হয় নারীদের মতো তুচ্ছ আর দুনিয়ায় কিছু হয় না! এখানে কথা হল, যেহেতু আমি কোনো হিজাবি মেয়ের হিজাব টেনে খুলতেছি না বা তার পছন্দকে নিন্দাও জানাচ্ছি না, সেহেতু তাদেরও অধিকার নাই আমাকে জোর করে হিজাব পরতে বাধ্য করার।

আমার প্রশ্ন হলো ব্রা দেখলেই যদি কারোর বিশেষ অঙ্গ দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে ব্যর্থতা কার? সে ভুল কার? নারীদের? কোনভাবেই এই ব্যর্থতার দায় নারীদের উপরে চাপানো উচিৎ নয়।

ব্রা পেন্টির ছবির সাথেও তারা নোংরামো খুঁজে পায়। মানে আমি ছবি তুলে যেন খুন করার মতো অন্যায় করে ফেলছি। অথচ যদি আর অন্যসব পোশাকের মতো এটাকেও পোশাক হিসেবেই দেখতে পার‍তো তাহলে বিষয়টা কত সহজ হয়ে যেত। মেয়েদের আর রাস্তাঘাটে কারণে অকারণে হেনস্তা হতে হত না।

শুধু আমি নই, অনেক মেয়ে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়ে কিন্তু তারা মুখ খোলে না, চুপ থাকে। আজ আর আমার ভয় নাই। ভীত থেকে বাঁচতে চাই না, অন্যায় মানতে চাইনা। আমি চাই ট্যাবু ভেঙে সবাই সহজ পথে হাঁটুক।

সবার মনে রাখা জরুরি নারী হয়ে জন্ম নেয়া দুর্বলতা নয়।

সমাজ ট্যাবু মুক্ত হোক, নারীরা স্বস্তি নিয়ে পথ চলুক।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]