September 20, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

ধর্ম কি আদৌ চাপিয়ে দেয়ার জিনিস?

শেখ তাসনুভা তাসনিম।। ধরুন আপনি ২৫ বছর বয়সের একজন প্রানবন্ত তরুণ বা তরুণী। হয়তো পড়াশোনা করছেন কিংবা হয়তো শেষের দিকে। কয়দিন পর বিয়েও করবেন। আপনার পরিবার থেকে কখনোই আপনাকে ধর্মচর্চার ব্যাপারগুলোতে জোর করা হয় নি। হয়তো আপনার বাবা মা ভেবেছে আপনার যখন মন থেকে এই ধরণের চিন্তা আসবে, তখন আপনি নিজে থেকেই করবেন। একটা সময় আপনি বিয়ে করলেন, সংসার করলেন, বাচ্চা কাচ্চাও বড় করে ফেললেন, তাদের বিয়ে দিলেন। একটা সময় আপনার মনে হল আপনি এবার ধার্মিক হতে চাচ্ছেন, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে চাচ্ছেন। এবার আপনিও জোরেশোরে ধর্ম কর্মে পড়েছেন, এবার আপনি আপনার আশেপাশে কী করবেন? আপনি কি আপনার ছেলে, ছেলের বউ সবার ওপর ধর্মকে চাপিয়ে দেবেন?

অনেক ক্ষেত্রে, আমাদের দেশের অনেক শাশুড়ি শ্বশুররা যা করেন, সেটা হল, নিজেরা যেভাবে চলছেন, তাদের ইয়াং জেনারেশনকেও তারা ওই পথেই চালিত করতে চান। হয়তো তাঁরা ভুলে যান যে তাঁরা ওই বয়সে কেমন ছিলেন বা তাঁরা কী চিন্তা ভাবনা করতেন।

প্রবীণদের কথা বাদ দিলাম। আজকাল অনেক স্বামীও জোর করে স্ত্রীর ওপর ধর্ম চাপিয়ে দিতে চান। ধর্মচর্চা অবশ্যই অনেক ভালো কাজ, কিন্তু সেটা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তি ভিন্ন হয়। কেউ ধর্মচর্চা বেশি করেন, কেউ কম। কিন্তু সেটা যার যার ভেতর থেকেই আসে। এখন এমন অনেক মেয়ে থাকে যারা অবিবাহিত অবস্থায় তেমন একটা ধর্মকর্ম করে না, কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর চাপে পড়ে ধর্মকর্ম শুরু করে। আবার অনেক ছেলে থাকে এক ডিগ্রি ওপরে। তাদের প্রেম করার সময় যুগের সাথে তাল মেলানো, পশ্চিমা জামা কাপড় পরা মেয়ে পছন্দ, কিন্তু সেই প্রেয়সীকে বিয়ে করেই তাকে “শালিন” পোশাকে ঢেকে চুল ঢেকে চলতে বাধ্য করে, এরকম উদাহরনও কম নেই।

আবার অনেক ছেলেই হয়তো নিজেরা তেমন ধর্মকর্ম করে না, কিন্তু সঙ্গী হিসেবে তারা চায় ভদ্র, সভ্য মেয়ে এক কথায় “ধার্মিক”মেয়ে। কারন অনেক পুরুষ বিশ্বাস করেন যে একমাত্র ধার্মিক মেয়েরাই ভদ্র, সভ্য এবং সংসারী (?) হয়। আবার অনেক ছেলেরা শুরুর দিকে ধর্মকর্ম করে না হয়তো বিয়ের পরেও স্ত্রীকে জোর করে না, কিন্তু একটা সময়ে নিজেরা ধর্মকর্ম শুরু করলে সাথে সঙ্গীকেও চাপ দিতে থাকে। এখন স্বামী যদি ধর্মকর্ম করে তাহলে স্ত্রী না করলে কি হয়! তাই সমাজকে খুশি করতে স্ত্রীটিও স্বামীর আদেশ পালন করে।

এই বিষয়ে একটা ঘটনা মনে পড়ছে। আমি তখন স্কুলে পড়ি। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে  একজন আন্টি থাকতেন, বেশ হাশিখুশি স্বভাবের। সাজগোজ পছন্দ করতেন। তারপর একবার আঙ্কেল একাই হজ করলেন। এরপর তিনি আন্টির ওপর বোরখাটা রীতিমতো চাপিয়েই দিলেন এক অর্থে। এরপর থেকে কোন অনুষ্ঠানে গেলে আন্টির মুখে একটা চাপা কষ্ট বোঝা যেত কারন চারপাশে সবাই হয়তো সুন্দর সুন্দর শাড়ি পড়ে সাজগোজ করেছে, কিন্তু উনি নিজে বোরখা পরা। আস্তে আস্তে উনি নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিলেন। বাইরে তেমন বের হতেন না। এখন কথা হচ্ছে, আদৌ কি এর কোন মূল্য আছে?

এখন ধর্মচর্চা আপনি করতেই পারেন। কিন্তু এটা মাথায় রাখা উচিৎ যে জোর করে কাউকে ধার্মিক করা যায় না। আপনার স্ত্রী যদি আপনার চাপে পড়ে ধর্মকর্ম করেও, তবুও সে কিন্তু মন থেকে করছে না, কাজেই সেই ধার্মিকতার কোন মূল্য নেই। আপনি নিজে যদি ধার্মিক মানসিকতার হন, তবে আপনার চিন্তা ভাবনাকে সম্মান করতে পারবে এরকম মেয়ের সাথেই প্রেম করুন, বিয়ে করুন; অযথা একটা মেয়ের ওপর আপনার চিন্তা ভাবনা চাপিয়ে দেবার জন্য বিয়ে করবেন না। তেমনটা হলে, বিয়ের আগেই মেয়েটিকে বলে দিন যে আপনি জীবনসঙ্গিনী হিসেবে কেমন মেয়ে চাচ্ছেন। মনে রাখবেন ধর্ম জোর করে চাপানোর জিনিস না, বরং আপনি তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে তার মনে ধর্মীয় অনুভূতি তৈরি করুন।

মেয়েদের বলছি, বিয়ের আগেই কথাবার্তা বলে নিন, কারন যতদিন আপনি বাপের বাড়িতে, ততদিন আপনি স্বাধীন। যখনি আপনি শ্বশুরবাড়ি, তখনি আপনি আপনার মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য নিজের স্বামীকে পেয়ে যাবেন। কাজেই, আপনার ইচ্ছা অনিচ্ছাগুলোও আপনার হবু বরকে জানিয়ে রাখুন। আপনাকে কোন্ কোন্ ব্যাপারগুলোতে চাপ দেয়া যাবে না, সেটাও জানিয়ে রাখুন। আর ভবিষ্যত যেহেতু কেউ জানে না, তাই সম্ভাব্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও আপনার অবস্থান জানিয়ে দিন।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]