বাইকে একটি মেয়ে, পুরুষের নোংরামি এবং আমার প্রতিবাদ
কানিজ ফাতেমা।। সাম্প্রতিক ভাইরাল হওয়া এক নারী যে কিনা নিজের হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন নিজে বাইক চালিয়ে বন্ধুদের দল নিয়ে। শুধুমাত্র বাইকে করে যাওয়ার জন্য একদল পুরুষ উনাকে চারিত্রিক সনদ দিয়ে ফেলছে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে যে চারিত্রিক সনদ দিচ্ছে সে দুশ্চরিত্র কি না, সেটা জানতে করনীয় কি?
পোস্টের পর পোস্ট, ইউটিউবে ভিডিও, কমেন্টে নোংরা শব্দ। মানে হাইলাইট করতে হবে এটাকে। একটা মেয়ের এমন স্বপ্ন থাকতে পারে না। সব মিলিয়ে এ রকমটিই বোঝাতে চাচ্ছে কিছু পুরুষ।
আর সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন কমেন্ট সেকশনে উঁকি দিলাম। মানে এমন সব অশ্লীল শব্দ ছুড়সে বলার মতো না। বাইক চালিয়ে এই এন্ট্রিটাও নাকি ধর্ষণের কারণ। তারপর এক লোকের কমেন্ট দেখলাম সে লিখেছে ‘‘মাইয়া তুমি থাকবা বাংলাদেশে, চলবা বিদেশি স্টাইলে আর ধর্ষণ হলেই দোষ?”
এখানে এই কমেন্টের মানে কী? একটা মেয়ে বাইক চালাবে বলে আপনার তাকে ধর্ষণের অধিকার আছে? আর ধর্মের অজুহাত- আরে বাবা তা তো আছেই! ইসলামে এটা নিষেধ, ইসলামে এসব থেকে বিরত থাকতে বলা হইসে, ইসলাম অমুক বলসে, ইসলাম তমুক বলসে।
ভাই এরা কোথায় থাকে যখন ধর্ষণের পর ধর্ষণ হয়! তখন কই থাকে এদের ধর্মজ্ঞান? ধর্ষণ করতে,অশ্লীল মন্তব্য ছুড়তে সময় এদের ধর্ম মাথায় আসে না। কিন্তু এক একটা অলি আওলিয়া হয়ে যায় যখন কোনো মেয়েকে তার মতো করে বাঁচতে দেখে।
বিশ্বাস করেন এই প্রাণিগুলো একটাও সত্যিকার ধার্মিক না। সত্যিকার ধার্মিক হলে তারা ধর্ষণকে সমর্থন করতে পারতো না।
বরাবরই অবাক হই শুধু এই বিষয়টি না, নারীবিরোধী যেকোনো বিষয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শুনতে হয় ‘‘যেই দেশের বেশিরভাগ মানুষের মাঝে শিক্ষা নেই সেই দেশ থেকে আর কি আশা করা যায়!”
‘‘এদের বোঝানোর চেষ্টা বৃথা, তোমার এসব পোস্ট তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসবে না।”
‘‘এদের সাথে তর্ক কইরো না।”
‘‘এটা নিয়ে এতো বলার কী আছে?”
পরিবর্তন আসবে না ভেবে আপনি যদি অন্ধ আর বোবা হয়ে থাকতে চান, থাকুন। সবাইকে আপনার দিকে টানার চেষ্টা করবেন না। আর ভাই প্রতিবাদে আপনি তর্ক দেখেন কোথায়? বোঝাতে চাওয়ার চেষ্টা পান কই? আমি কেবল হাইলাইট করলাম। যেমনটি তারা হাইলাইট করলো একটা মেয়ের বাইকে করে এন্ট্রি দেওয়াটা। যেটা হাইলাইট করার মতো কিচ্ছু না। হাইলাইট করার মতো বিষয় পোস্টের কমেন্টসগুলো। আর কোনো কিছু নিয়ে বলা মানে এই না যে তাদেরকে জ্ঞান দিচ্ছি বা বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমার কাছে কোনো কিছু নিয়ে বলা মানে আমার চোখে যা দোষ, যা ভুল তা হাইলাইট করা, প্রতিবাদ করা। প্রতিবাদ করা আর জ্ঞান দেওয়া দুটো পৃথক বিষয়। অন্ধদের আয়না দেখিয়ে খুব একটা সুবিধা হয় না। তেমনই এদের জ্ঞান দিয়ে লাভ নেই।
যাগগে, কথা হচ্ছে এত এত কমেন্টস এর মধ্যে এক প্রাণির একটা কমেন্ট পড়ে কিছুক্ষন হাসলাম। সে লিখেছে ‘‘লজ্জা নারীর অলংকার, এমন বেহায়া র্নিলজ্জ মেয়েরাই ধর্ষনের জন্য দায়ী।”
সত্যিই ভীষণ করুণা হয় যখন এদের মতো মানসিকতার প্রাণিগুলো সামনে আসে।
লজ্জা না। মানুষের অলংকার মনুষ্যত্ব। এদের মতো মন্তব্যকারী প্রাণিদের তা নেই। আগে মানুষ হন তারপর পুরুষ হইয়েন।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]