‘চয়েস’ আর ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’র মানে জানেন?
মেহেরুন নূর রহমান।। কয়েকদিন ধরে খুব কথা হচ্ছে এক নারীর তার ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে। নারীটির মাথা থেকে পায়ের নখ, সবকিছুই ঢাকা। হিজাব প্লাস হাত মোজা,পা মোজা ইত্যাদি পরা। নারীটির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত। দেখে মনে হচ্ছিলো সে ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলাকে উপভোগ করছে। আপাত মা ছেলের একসাথে খেলাধুলার সরল সুন্দর এই বিষয়টি নিয়ে নানারকম কথা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে। কেউ কেউ হিজাবে ঢাকা নারীটির মাঝে খুঁজে পাচ্ছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিফলন। আবার কেউ কেউ হিজাবি নারীর এই ক্রিকেট খেলাকে নারীর পোশাক চয়েসের অধিকার ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা এসবের সাথে তুলনা করছেন।
ছবিগুলো দেখে প্রথম যে কথাটি মনে হয়েছিল- এই নারী হয়তো খেলতে ভালবাসে। অন্তত তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তাই বলে। তাকে যদি সুযোগ দেয়া হতো, তাকে যদি আবদ্ধ করে না রাখা হতো পর্দার এই ঘোরটেপে তাহলে সেও হয়তো মুক্ত বাতাসে ক্রিকেট খেলতে পারতো। নারীটির প্রতি এক ধরনের মমতা অনুভব করেছিলাম।
যারা দু’মিনিট ছেলের সাথে হিজাবি এই মায়ের ক্রিকেট খেলার মাঝে নারী স্বাধীনতা বা পোশাকের স্বাধীনতা জাতীয় কিছু দেখতে পাচ্ছেন তাদের আমি ঠিক কী বলবো আসলে ভাষা খুজে পাচ্ছি না। নারী স্বাধীনতা যদি এত সহজ হত তাহলে তো কোন কথাই ছিল না। যে নারী নিজের মুখটি পর্যন্ত খুলে দেখাতে পারছেন না, তার কিছুক্ষণ ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলাটাকে আপনি নারী স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করেছেন? ধন্যি বটে আপনারা। এখন তো শুনতে পাচ্ছি পুরো ঘটনাটাই নাকি সাজানো। ইসলামী রাজনীতির একটি অংশ। বোঝানোর চেষ্টা যে হিজাব পরেও একজন নারী তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে! মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলাম কিন্তু নারীর ক্রিকেট খেলাকে সমর্থন করে না সুতরাং হিজাব পরিয়ে নারীটিকে দিয়ে ক্রিকেট খেলানোর পরও কিন্তু ইসলামবিরোধী কাজ হয়ে গেল।
আমি জানি আমার এই লেখাটা অনেকেরই পছন্দ হবে না। হয়তো ভাবছেন আমি নারীর হিজাব পরার বিরুদ্ধে লেখার চেষ্টা করছি। ঠিক তা নয়, আমার সমস্যা অন্য জায়গায়। আমার সমস্যা হয় যখন বলা হয় “হিজাব ইজ মাই চয়েজ” যখন বলা হয় হিজাব একজনের ব্যক্তি স্বাধীনতা। যখন কিছু নারী বলে যে আমি নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরেছি কেউ আমার উপর চাপিয়ে দেয় নি। আমার বিরক্ত লাগে কারণ এর একটি কথাও সত্য নয়।
আপনি বলছেন- হিজাব ইজ মাই চয়েস। প্রথমে বুঝুন চয়েস কথাটির মানে কি। চয়েস কথাটির মানে হচ্ছে আপনার সামনে একের অধিক অপশনস আছে, আর তার মাঝ থেকে আপনি একটা জিনিস বেছে নিচ্ছেন। এখন যারা হিজাবি তারা মূলত ধার্মিক। তারা ধর্মীয় অনুশাসন ধর্মীয় বইয়ে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী মানতে চায়। যখন আপনি ধর্মীয় অনুশাসন মানবেন বলে ঠিক করছেন তখন নারীদের জন্য পোশাক হিসেবে হিজাব ছাড়া তো আর কোন অপশন নাই । হিজাব মুসলিম নারীদের জন্য বিধান। আপনি ধার্মিক হলে কি বলবেন নামাজ পড়া আমার চয়েজ? না, নামাজ হচ্ছে আপনার ধর্মীয় বিধান যা আপনি পড়তে বাধ্য যদি আপনি ধর্ম পালন করতে চান। ঠিক তেমনি হিজাব আপনার জন্য বিধান যা আপনি ধর্মের অনুশাসন মানতে গিয়ে পরছেন। ধর্ম আপনার উপর একে চাপিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং এই যে আপনি বলছেন হিজাব ইজ মাই চয়েজ বা হিজাব পরা আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা এগুলো এখানেই খারিজ হয়ে যায়।
হ্যাঁ, ভিন্ন ধর্মের কোন মানুষ, বা ধর্ম মানে না এমন কেউ যদি হিজাব পরা শুরু করে সেটাকে তার চয়েজ বলা যেতে পারে কারণ সে অন্য আর দশটা পোশাকের মাঝখান থেকে হিজাবকে বেছে নিয়েছে। ফ্যাশন হিসেবে যারা হিজাব পরছেন তারাও একে চয়েস বলতে পারেন কারণ যে কোন সময় তারা তাদের চয়েস বদলাতে পারবে যেটা একজন ধার্মিক হিজাবি নারী পারেন না আর এই জন্যই হিজাব সেই ধার্মিক নারীর জন্য চয়েস নয়, বাধ্যবাধকতা।
একটা জিনিস আমি বুঝতে পারি না, যারা হিজাব পরে তারা কেন এই হিজাবকে মাই চয়েস বা ব্যক্তি স্বাধীনতার সাথে ট্যাগ করতে চায়? কেন তারা বলে না যে আমি ধর্মীয় কারণে আমি হিজাব পরি। ভুলে যাও ব্যক্তি স্বাধীনতা বা নারী স্বাধীনতা, আমার ধর্ম আমাকে বলেছে হিজাব পরতে তাই আমি পরি। কেন ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতার এসব বলে হিজাব পরাকে তারা জাস্টিফাই করতে চায় ? এই ধর্মীয় বিধানটি নিয়ে কি তাদের মধ্যে কোন হীনমন্যতা কাজ করে?
আমি হিজাব সমর্থক নই, কারণ আমি মনে করি হিজাব একটি মেয়ের পূর্ন বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে । আমি মনে করি হিজাব শুধু একটি পোশাক নয়, এটি একজন মানুষের মনস্তত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে। একজন নারী যখন কাপড়ে নিজের আপাদমস্তক ঢাকে সেই সাথে ঢাকা পরে তার নিজস্বতা, স্বাধীনতা এবং আরো অনেক কিছু। কাছ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে জানি এরম একজন চমৎকার গানের গলা থাকলেও গাইবে না, নাচতে ভালোবাসলেও নাচবে না, সম্ভবনা থাকে সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জিং কোন কাজ করবে না যেখানে হয়তো তাকে পুরুষদের সাথে কাজ করতে হবে। হিজাবে সাপোর্ট করা পুরুষও উপরোক্ত কাজগুলি করতে নারীকে বাধাই দেবে।
যারা হিজাব পরেন তাদের নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই, বরং হিজাব পরেন এমন আমার অনেক প্রিয় মানুষও আছে। তবে মানুষ হিসেবে আমি সমতায় বিশ্বাস করি। আমি নারী বলে নিজেকে আলাদা কোন প্রজাতি হিসেবে ভাবতে চাইনা। ভাবতে চাই যে কোন বিধান/নিয়ম নারী-পুরুষসহ সবার জন্য একই রকম হওয়া উচিত। নারীর জন্য যদি পর্দা বা হিজাব পরার বিধান থাকে তবে পুরুষদের জন্য কেন নয়? দয়া করে চোখের পর্দার কথা বলবেন না, আমি পোশাকের পর্দার কথা বলছি।
ভাবুন একজন পুরুষ মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কাপড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছে (সৌদি পুরুষদের কথা বলবেন না, তারা লম্বা জোব্বা পরে সেই দেশের আবহাওয়ার করণে, পর্দার জন্য নয়)। এভাবে হিজাবে ঢাকা পুরুষের কথা চিন্তা করেই কেমন অস্বাভাবিক লাগছে, তাই না? মেয়েদের বেলায় একই চিত্র কেন আমাদের স্বাভাবিক লাগে ? আমি জানি যখন ছেলেদের হিজাব করার কথা বলছি তখন প্রথম যে কথাটি সবার মাথায় আসবে সেটা হল ছেলেরা কেন হিজাব করবে? কেনই বা তারা চুল বা মুখ ঢেকে রাখবে। কার ভয়ে ? মেয়েদের বেলায় কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ।
ধর্মীয় মতে অনাত্মীয় পুরুষদের দৃষ্টি (লোলুপ!) থেকে বাঁচার জন্য এবং দেহের শ্লীলতা/গোপনীয়তা রক্ষার জন্য হিজাব করা উচিত। যেন মেয়েরা চলমান কোন ভোগ্যপণ্য, আর পুরুষেরা তৈরি হয়ে আছে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ভোগ করার জন্য। মেয়েদের চুল, নখ, হাত সবকিছু ছেলেদেরকে কামতাড়িত করে তাই এসব প্রতিটি কিছুই মেয়েদেরকে ঢেকে রাখতে হয় ছেলেদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে। আবার ঈমানদার পুরুষদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে কোন মেয়ের খোলা চুল দেখলে বা আঙ্গুল দেখলে। সেসব পুরুষদের ঈমান রক্ষার দায়িত্বও মেয়েদের এবং সেই জন্য তাদের কয়েক প্রস্থ কাপড়ে নিজেদের ঢেকে রাখা দরকার। আচ্ছা খোলা পুরুষদের দেখে যদি কোন নারীর কামনা বাসনা জাগে তবে তার বিধান কী? জানি কোন বিধান নাই। শুধু মেয়েটি নষ্ট মেয়েছেলের খেতাব পাবে, পুরুষদের কয়েক প্রস্থ কাপড়ে নিজেদের আড়াল করতে হবে না।
এই যে নারীদের নিজেদের একটি যৌন ভোগ্যবস্তু মনে করা এবং পুরুষদের কামুক এবং সম্ভাব্য ধর্ষক হিসেবে ট্রিট করা, দুটোই আমার কাছে নারী এবং পুরুষ দু-পক্ষের জন্য চরম অবমাননাকর বলে মনে হয়। কত সহজেই আমরা সকল পুরুষদের নোংরা, কামুকের কাতারে দাঁড় করিয়ে ফেলি। আপনি বলতেই পারেন পুরুষরা কি আসলেই সম্ভাব্য ধর্ষক নয়? এই যে এত সব ধর্ষণ হচ্ছে, যৌন নিপীড়ন ঘটছে সেগুলো থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হিজাব করা কি জাস্টিফায়েড নয়? মেয়েদেরই কি এভাবে চলা উচিত নয় যেন তারা পুরুষদের প্রভোক না করে? কত হতাশার কথা বলেন, আমরা ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দেবার কথা না বলে, নিজেকে কন্ট্রোল করার কথা না বলে মেয়েদের দায়ী করি, তাদের পোশাককে দায়ী করি।
এই যে এতো এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে আমাদের দেশে তাতে কয়টা মেয়ে প্রভোকড করার মত পোশাক পরে থাকে? কত কত হিজাব পড়া মেয়েরাও ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তার বেলা? দুই মাসের শিশুও এই দেশের সেক্স অবসেসড পারভার্টদের হাত থেকে রক্ষা পায়না। মেয়েরা ঘরে বাবা, ভাই, চাচা, মামা, প্রতিবেশী, শিক্ষক এদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কোন হিজাব তাদের রক্ষা করবে? কোন হিজাব রক্ষা করবে দু’বছরের শিশুকে ৫০ বছরের কামুক পুরুষের দৃষ্টি থেকে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে হিজাবের প্রভাব যে কত অসার তা সহজেই অনুমেয়।
আইন কানুনের সঠিক প্রয়োগ, সঠিক যৌন শিক্ষা, মেয়েদের যৌন বস্তু বাইরে মানুষ হিসেবে ভাবার শিক্ষা এসব না করে মেয়েদের পোটলার ভেতর ভরে রাখলেও পুরুষদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে তাদের রক্ষা করতে পারবে না।
পুরুষশাসিত সমাজ না হয় নানা কায়দা-কানুন করে মেয়েদের দমিয়ে রাখতে চায় কিন্তু একজন নারী যখন সে ফাঁদে পা দেয় তখন বড় কষ্ট হয়। যখন একজন নারী নিজেকে মানুষ না ভেবে শালীনতার নামে নিজেকে ভোগ্যপণ্য বা যৌনবস্তু ভেবে নিজেকে কাপড়ের আড়ালে লুকাতে চায় তখন কষ্ট লাগে। নারীরা নিজেরাই যদি নিজেকে সম্পূর্ণ মানুষ না ভাবে তবে অন্য কার কি দায় পড়েছে বলুন তো।
আমি প্রচণ্ড গরমে সি-বিচে হিজাবি নারীকে স্বামী এবং সন্তানের কাপড় জুতো নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি যখন তার স্বামী সন্তানদের নিয়ে সমুদ্রে দাপাদাপি করছে। পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে দেখেছি হিজাব পরিহিত অবস্থায় যেখানে তার সাত-আট বছরের ভাই শর্টস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বয়েসে শরীর সম্বন্ধে কোনো সচেতনতা তৈরি হবার কথা নয় কিন্তু মেয়ে শিশুটি ঠিকই বুঝতে পারে সে তার ভাইয়ের মত নয়। তার নিজেকে ঢেকে রাখা দরকার, যদিও তার ভাইয়ের নিজেকে ঢেকে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।
সিস্টেমেটিক্যালি এভাবে শিশুদের মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে মেয়েদের শরীর অপবিত্র এবং তারা যৌনবস্তু ছাড়া আর কিছু নয় তাই তাদের নিজের শরীরকে কাপড়ের ভেতর লুকিয়ে রাখাই শ্রেয়। এভাবে বড় হওয়া একটি মেয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ মানুষ ভাবার কোন অবকাশই পায়না, আর ছেলেটিও বড় হতে হতে মেয়েদের নিজেদের সমকক্ষ ভাবে না। তারা নারী শরীরকে শুধু কামনার বস্তু বলেই মনে করে। নারীর যে একটি স্বাধীন সত্তা আছে বোঝার মানসিকতাই তৈরি হয়না এবং নারীকে সঠিক সম্মানও দিতে শেখে না।
অনেকে বলেন হিজাব স্বপ্নপূরণের জন্য বাধা নয়। একজন হিজাবি চাইলে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আসল কথাটা হলো হিজাবি আপনি ঠিক ততটুকু স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন যতটুকু আপনার জন্য এই পুরুষশাসিত সমাজ নির্ধারণ করে রেখেছে। আপনি যদি আকাশ ছুঁতে চান তবে হিজাবসহ আরও নিয়ম কানুন এর মাধ্যমে তারা আপনার পাখা কেটে আপনাকে ঘরের ভেতরে ঢুকিযে রাখবে।
স্বপ্নপূরণের কথা ভুলে যান, এই হিজাব, পর্দা/বেপর্দা এসবের গোলকধাঁধায় পড়ে গ্রামগঞ্জে কত মেয়ের পড়ালেখাই ঠিকমত হচ্ছে না। কতজনের নৃত্যশিল্পী কিংবা অভিনয়শিল্পী হবার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে না। খেলতে ভালবাসে, দৌঁড়োতে ভালোবাসে এমন একটি মেয়ের খেলোয়াড় হবার স্বপ্ন শুধু পর্দার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর পরেও আপনি বলবেন হিজাব স্বপ্নপূরণের জন্য বাধা তৈরি করে না?
কয়েকদিন আগে ইউটিউবে মালেক আফসারী বলে একজন চিত্রপরিচালক এর সাথে নায়িকা মুনমুনের একটি ইন্টারভিউ দেখলাম। ইন্টারভিউ এর এক পর্যায়ে মালেক আফসারী মুনমুনকে উপদেশ দিচ্ছে হজ করতে, হিজাব পরতে যেন সে এখন একটি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে। অর্থাৎ মুনমুনের নায়িকা হিসেবে জীবনটি ছিল অসম্মানের। মালেক আফসারী নিজেই এই নায়িকাকে নিয়ে অনেক ছবি করেছে, মেয়েটিকে দিয়ে নাচ -গান করিয়েছে কিন্তু মনে মনে তাকে তাকে খারাপই ভেবেছে, অসম্মান করেছে। তাই হিজাব পরিয়ে এখন মেয়েটিকে সম্মানিত হবার জন্য উপদেশ দিচ্ছে। মালেক আফসারী নয় এই ধরনের মানসিকতা আমাদের সমাজের বেশিরভাগ নারী এবং পুরুষের।
হিজাব এখন একজন নারী সম্মানিত নাকি সম্মানিত নন তার নির্ধারক হয়েছে। এক ডাক্তার বন্ধুর গল্প শুনেছিলাম- সে যে ক্লিনিকে কাজ করে সেখানে তার ঊর্ধ্বতন ডাক্তার কলিগ আমার বন্ধুটিকে তাদেরই আরেকজন নারী কলিগ, যিনি হিজাব পরেন তার সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন যে ‘‘আপা আপনি কেন হিজাব পরেন না? দেখেন তো ওই আপা কি সুন্দর হিজাব করে, তাকে কত শালীন আর সম্মানিত লাগে”। আমার বন্ধুটি ফুল হাতার কামিজ এবং বড় ওড়না পরে কিন্তু সেইটুকু ওই লোকের চোখে শালীন নয়। আমাদের দেশে এখন হিজাব না করলে এই ধরনের চাপের ভিতর থাকতে হয় মেয়েদের।
আগেই বলেছি হিজাব শুধু একটি পোশাক নয় এটি একটি জীবনাচার। একটি মানুষের জীবনযাপন কেমন হবে, কেমন ভাবে সে তার আগামী প্রজন্মকে বড় করে তুলবে এসব কিছুই এর সাথে সংযুক্ত। আপনি আজকে যখন হিজাব পরছেন বা হিজাব সমর্থন করছেন, কালকে আপনি আপনার কন্যাকে পর্দার বা হিজাবের জালে আটকে ফেলবেন। তার এমন সব স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন যা আপনার হিসেবে হিজাব বা পর্দার সীমারেখার বাইরে। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মেয়েদের সম্পূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। তারা বরাবরই ঊনমানুষ হয়ে থাকবে পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে না।
আপনি ধর্মের কারণে হিজাব পরছেন, পরকালের শাস্তির ভয়ে বা বেহেশত পাবার আশায় হিজাব করছেন এটাই আসল কথা। হিজাবকে ‘মাই চয়েস, নারী-স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা’ এগুলোর সাথে মিলিয়ে জাস্টিফাই করার কোন দরকার নেই। কারণ এগুলো কোন কিছুই হিজাবের সাথে তো যায়ই না বরং সাংঘর্ষিক এবং এটাই সত্য।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম/ মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]