November 2, 2024
কলামফিচার ৩

এই পুরুষের দেশ নারীরা বর্জন করুক

শাশ্বতী বিপ্লব।। এইবার নারীদের দেশ বর্জন করার সময় এসেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকেছিলো অনেকদিন আগেই। এখন পিঠটাও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বোধ করি। যেই দেশে ৩৬৫ দিনই ধর্ষণের মহোৎসব চলে, সেই দেশে কোন নারী কেন থাকবে বলতে পারেন?

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে গণধর্ষণের পর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে কিছু “জাতির বিবেক” পুরুষ। ভিডিওটা আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন নিশ্চয়ই। কী মনে হয়েছে আপনাদের দেখে? একবার আহা উঁহু করেছেন নিশ্চয়ই। বড় জোর দু’লাইনের একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তারপর স্ক্রল করে চলে গেছেন অন্য কিছুতে।

আর যে নারীটিকে গণধর্ষণের পরও রেহাই দেয়া হলো না, মুখে অনবরত লাথি দেয়া হলো, গা থেকে বারবার কাপড় টেনে নেয়া হলো, জোর করে পা ফাঁক করে দেয়া হলো, যোনিতে বারবার হাত দেয়া হলো এবং পুরো বিভীষিকাটা ভিডিও করা হলো গর্বের সাথে, পা ধরে মাফ চেয়েও যে নারীটা এই অসম্মান ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেলো না, সেই নারী এই দুঃস্বপ্নটা কী করে স্ক্রল করে যাবে বলতে পারেন?

আপনারা বরং ফেসবুকে সুখকর কোন পোস্টে মনোনিবেশ করুন। নিরাপদে চার দেয়ালের মাঝে বসে মোবাইলে বিশ্ব দেখুন। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনাদের বিচরণ। ধর্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় আপনাদের পাওয়া যায় না। বিচার শালিসে আপনারা ধর্ষকের পক্ষ নেন। মোটা টাকার বিনিময়ে পুলিশ-প্রশাসন সব ঘুমিয়ে থাকে। আর এই নারী মামলা, বিচার, এসব তো  ‍দূরের কথা, নিজের বসত ভিটায় থাকার সামান্য নিরাপত্তাটুকুও পায় না। প্রশাসনের টনক নড়াতে ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল করতে হয়। ঘটনার পর ৩২ দিন পর্যন্ত প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। টানা ৩২টা দিন ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখতে পারে ধর্ষকের দল। কেউ কিচ্ছুটি টের পায় না।

বেগমগঞ্জের এই নারীর পরিবার লাপাত্তা কেন বলতে পারেন? প্রাণটা হাতে নিয়ে নারীটার পরিবার পালিয়ে আছে কেন জানেন কেউ?

আমি জানি। এই দেশটা শুধুই পুরুষের দেশ। এই দেশে সব পুরুষ ক্ষমতাবান। সব পুরুষ লিঙ্গীয় বলে বলিয়ান। পুরুষেরা তাদের সর্বাঙ্গ জুড়ে থাকা লিঙ্গখানা নিয়ে আইন-আদালত, পুলিশ, সমাজ, রাষ্ট্র এবং তথাকথিত “ভালো পুরুষ”দের কাঁচকলা দেখিয়ে ধর্ষণ করে বেড়ায়। নিঃসঙ্কোচে চষে বেড়ায়, ভিডিও করে, ছবি তোলে, মেরে ফেলে। একা এবং দলবেঁধে। আর অন্যদিকে নারীকে ঘরে ঢুকানোর পায়তারা চলে। এই একটা ব্যাপারে পুরুষের ঐক্যজোট বড়ই মজবুত।

ধর্ষণের বিচার আমি আর চাই না। কী হবে হঠাৎ সঠাৎ একটা দুইটা বিচার করে? চরম নিপীড়নের পর এইসব বিচারে ভিকটিম নারীর কোন লাভ হয় না, ধর্ষক পুরুষেরও টনক নড়ে না। এই ধর্ষকামী সমাজ ধর্ষণের শিকার মেয়েটাকে আর আগের মতো গ্রহণও করে না। সে আর তার জীবন ফিরে পায় না। এই দেশ একটা পুরুষবান্ধব দেশ।

যেই দেশে গ্রামে, শহরে, পাহাড়ে, সমতলে, সবজায়গায় উন্মত্ত দু’পেয়ে ভাদ্রমাসী কুকুরেরা ঘুরে বেড়ায়, সেই দেশ ছেড়ে নারীরা সবাই চলে যাক। ধর্ষকের অভয়ারণ্য এই দেশটাকে নারীরা বর্জন করুক। এই দেশ হোক নারীশূণ্য এক শ্বাপদের দেশ।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]